গরিবের আবাস কেবল নয়, পরিকাঠামোর ‘গতিশক্তি’ বুলেট ট্রেনেও হাল একই।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ইন্দিরা গান্ধী আবাস যোজনা চালু করে। ২০০৪ সালে বামপন্থীদের সমর্থনে প্রথম ইউপিএ সরকার গঠিত হওয়ার পরে গতি পায় গৃহহীন কিংবা কাঁচা বাড়িতে বাস করা মানুষের হাতে পাকা বাড়ির মালিকানা তুলে দেওয়ার কাজ। ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্পের নামে বদল আনেন। ইন্দিরা আবাস যোজনা হয়ে দাঁড়ায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। এবং ২০১৬ সালের পর থেকে একের পর এক জনসভায় দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী পাকা বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ডেডলাইন ২০২২’র কথা বলা শুরু করেন।
ডেডলাইন ২০২২ কী? নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২২ সালের পরে আর কেউ কাঁচা বাড়িতে থাকবেন না। ২০১৬ সালের নভেম্বরে দিল্লি, ২০১৭ সালের এপ্রিলে নাগপুর, ২০১৭ সালের ২০ জুন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে করা টুইটে, ২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট আমেদাবাদ- দেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে দাঁড়িয়েই নরেন্দ্র মোদীর মুখে ঘুরে ফিরে এসেছে ডেডলাইন ২০২২’র কথা। ২০২২, অর্থাৎ স্বাধীনতার ৭৫ তম বছর।
কেবলমাত্র মোদী নন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও একাধিক বার এই ডেডলাইনের উল্লেখ করেছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে কলকাতায় দাঁড়িয়ে অমিত শাহ বলেছিলেন, ২০২২ সালের পরে কোনও গরিবকে মাটির বাড়িতে থাকতে হবে না। সবার মাথার উপর পাকা ছাদ থাকবে। ক্যালেন্ডারের পাতায় সেদিন ছিল ২২ এপ্রিল।
২০১৬ সালে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গ্রামীণ ভারতে ২.৯৫ কোটি এবং শহুরে অঞ্চলে ১.২ কোটি বাড়ি তৈরির কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে তৈরি হওয়ার কথা ছিল ১ কোটি বাড়ি। বাকি ১.৯৫ কোটি বাড়ি তৈরির লক্ষমাত্রা ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ে।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ডেডলাইন ছিল ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩১ মার্চ।
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজ?
২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রের তরফে বলা হয়, প্রকল্প শেষের লক্ষ্যমাত্রা ২০২২’র মার্চ থেকে পিছিয়ে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এবং দুই পর্যায় মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৩ কোটির মধ্যে ১ কোটি বাড়িও তৈরি করে উঠতে পারেনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। মাত্র ৫২ লক্ষ পরিবারের হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আর ২৫ লক্ষের কাছে বাড়ি নির্মাণের নানান স্তরে আটকে রয়েছে।
নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে ঘুরেফিরে এসেছে বুলেট ট্রেন প্রকল্প। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেতার আগে থেকেই তিনি বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন ফেরি করে বেরিয়েছিলেন। এই প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছিল ২০২২ সাল। মোদী সরকারের অন্যান্য ঘোষণার মতো বুলেট ট্রেন প্রকল্পও একপ্রকারের জুমলাবাজিতেই পরিণত হয়েছে। প্রসঙ্গত, রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন, ১৯৮৫ সালে মুম্বই-আমেদাবাদ রুটে বুলেট ট্রেন চালানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। সেই প্রকল্পকেই ‘অধিগ্রহণ’ করার চেষ্টা চালিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
২০২২ সালের ১৯ নভেম্বরের ভারতীয় রেলের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, মুম্বই-আমেদাবাদ রুটে জমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ হয়নি। গুজরাটে জমি অধিগ্রহণের হার তুলনামূলক ভালো হলেও মহারাষ্ট্রে ৭৫ শতাংশের কিছু বেশি জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে শুরু হবে প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া। ৫০৮ কিলোমিটার বিস্তৃত মুম্বই আমেদাবাদ রুটে এখনও অবধি ১৩৫ কিলোমিটার রুটে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। গোটা রুটে ১২টি স্টেশন তৈরির কথা রয়েছে। এরমধ্যে একমাত্র সবরমতী স্টেশন তৈরির কাজ উল্লেখযোগ্য হারে এগিয়েছে। বাকিগুলি তৈরির কাজ ১০ শতাংশও এগোয়নি।
Comments :0