Nandakumar

থানার এএসআই অঞ্চলে তৃণমূলের দাপুটে নেতা!

রাজ্য

রামশঙ্কর চক্রবর্তী: তমলুক

থানা থেকে মিনিট পাঁচেকের দূরত্বে তাঁর বাড়ি। কুমোরআড়া পঞ্চায়েতের মধ্যে তাঁর গ্রাম। এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে মূলত দাপুটে তৃণমূল নেতাই হিসাবেই চেনেও। যদিও আসল পরিচয় তিনি নন্দকুমার থানার এএসআই। আরও আশ্চর্যের হলো বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে নন্দকুমার থানাতেই গত দশ বছর ধরে তাঁর পোস্টিং, কোনও নড়নচড়ন নেই। 
এই পুলিশকর্মীর নাম সৈয়দ মিলাদ আহমেদ। ওসি’র সঙ্গে বিরাট বাহিনী নিয়ে এই পুলিশকর্মী সেদিন নন্দকুমারে সিপিআই(এম) কার্যালয়ে গিয়ে তাণ্ডব চালায়। পার্টি অফিসের চেয়ার, টেবিল তুলে আছাড় মেরে ভেঙে দেওয়া হয়। পার্টি অফিসের চেয়ার তুলে তা দিয়েই সেখান থেকে সিপিআই(এম) কর্মীদের মারধর করা হয়। নৃশংসতার সেই ভিডিও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা জেলা জুড়েই তীব্র প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়েছে।


স্রেফ আবাস যোজনার ঘরের দাবি জানাতে গিয়ে যেভাবে নন্দকুমার ব্লকের শীতলপুর পঞ্চায়েত এলাকার গিরিরচক গ্রামের বাসিন্দা, গৃহবধূ আরজুনা বিবিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, লকআপের ভিতরে শারীরিক অত্যাচার চালিয়েছে তাতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষজন। আরজুনা বিবির ওপর অত্যাচারের খবর এদিন সকালে কাগজে প্রকাশিত হওয়ার পরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা নন্দকুমার জুড়েই। একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষোভের সঙ্গেই বলছিলেন, সব গ্রামেই তো আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে দুর্নীতি রয়েছে, গরিব মানুষরা ঘর পাচ্ছে না, দোতলা-তিনতলা বাড়ির মালিকদের নাম রয়েছে তালিকায়। আর সেটা নিয়ে প্রতিবাদ করায় একজন মহিলাকে এভাবে মারতে মারতে নিয়ে পুলিশ নিয়ে গেছে, কোন রাজত্বে আছি আমরা।’ স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও গোটা ঘটনায় মুখে কুলপ এঁটেছে। বিডিও থেকে ওসি, কেউ এই ঘটনায় সাংবাদিকদের কাছে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে অস্বীকার করছেন।
গত শুক্রবার আবাস যোজনার প্রকৃত, স্বচ্ছ তালিকার দাবিতে ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ব্লক অফিসে ডেপুটেশন কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার অপরাধে জেলে রয়েছেন দশজন সিপিআই(এম) কর্মী ও সাধারণ গ্রামবাসী। 
রবিবার জেল হেপাজতে থাকা সেই দশ জন সিপিআই(এম) কর্মী ও গ্রামবাসীদের বাড়িতে যান সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। গ্রেপ্তার হওয়া পার্টিকর্মী ও গ্রামবাসীদের পরিবারের পাশে সর্বতোভাবে থাকবে সিপিআই(এম), আশ্বস্ত করেন তাঁরা। 


‘বাড়ির লোক জেলে আছে। কি খাবো, কীভাবে সংসার এখন চলবে তা জানিনা। আমার ছেলে তো অপরাধ কিছু করেনি। গরিব মানুষের ঘরের দাবি করেছিল। ও কী চোর, ডাকাত নাকি যেএভাবে পুলিশ মারতে মারতে নিয়ে গেল’ ক্ষোভের সঙ্গেই এদিন সকালে বলছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া সিপিআই(এম) কর্মী শেখ আক্তারের মা আসমা বিবি। হতদরিদ্র পরিবার। একমাত্র পুত্র শেখ আক্তার পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। সারা বছর তো কাজও জোটে না। একার আয়ে তিন ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রী ও বৃদ্ধা, অসুস্থ মাকে নিয়ে সংসার। সিপিআই(এম) নেতৃত্বকে কাছে পেয়ে কেঁদেও ফেলেন। 
তবে তারপরেই তিনি বলেন, আমার ছেলের জন্য চিন্তা তো হয়নি, তবে ভাববেন আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছি, আপনারা গরিব মানুষের জন্য যে লড়াই করছেন তাতে আমরা থাকবো, পিছিয়ে আসবো না। নন্দকুমারের নামাল গ্রামের বাসিন্দা শেখ আক্তারের মায়ের এমন বক্তব্যই যেন সাহস জোগাচ্ছে পরবর্তী লড়াইয়ে। পার্টি নেতা শান্তনু দাস, করুণাশঙ্কর ভৌমিক, চন্দন মাইতি, রশিদ আহমেদ, সুকুমার দলুই, গৌতম জানা, শ্রীকান্ত জানা, সৌমেন কর, লক্ষ্মণ সাসকা সহ পার্টিকর্মী, সংগঠকরা আইনি লড়াইয়ের কথাও জানান। 
সোনু বলেছেন ‘গরিব মানুষের স্বার্থে লড়াই করতে গিয়ে জেলে গিয়েছে আমার স্ত্রী। এতে কোনও লজ্জা নেই। আমরা দিন আনি দিন খাই। একটা ঘর চেয়েছিলাম। পুলিশ মারল। যতদিন না দাবি পূরণ হচ্ছে আমাদের লড়াই চলবে।’


একই কথা গ্রেপ্তার হওয়া গোপাল সামন্ত, কৃষ্ণেন্দু বর্মণদের পরিবারের সদস্যদের। উদ্বেগ আছে, তবে ভীত নয় তাঁরা। জেল হেপাজতে থাকা সিপিআই(এম) কর্মী আশিস গুছাইতের বাবা শয্যাশায়ী। স্ত্রী, মা, সন্তানদের নিয়ে সংসার একমাত্র রোজগেরে সদস্য আশিস। মানুষের স্বার্থে লড়াই করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। কাঁদছেন স্ত্রী। তবুও মনোবল হারাননি তিনি। সংসারে নিত্যদিনের অনটন। স্বামীকে পুলিশ অত্যাচার করেছেন, জানেন। তবে আস্থা রেখেছেন পার্টির ওপরেই। স্বামী কোনও দুর্নীতি করে তো জেলে যাইনি, বলছিলেন তিনি। 
তবে যেভাবে সেদিন নন্দকুমার থানার ওসি মনোজ ঝাঁ, কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল, মনোজ মণ্ডল, সৈয়দ মিলাদ আহমেদের মতো পুলিশকর্মীরা বিনা প্ররোচনায় উন্মত্তের মতো লাঠি চালায় নিরীহ জমায়েতের ওপরে, যেভাবে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আধ ঘণ্টা পরে পার্টি অফিসে হামলা চালানো হয়, পার্টির জেলা সম্পাদককে মারতে মারতে থানায় আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় তা আসলে শাসক তৃণমূলের গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment