এন আই এ-র জালে বীরভূমের আরেক দাপুটে পাথর ব্যবসায়ী তৃণমূল নেতা। ভোরবেলা বাড়ি থেকে তুলে সেই নেতাকে প্রথমে স্থানীয় থানায় দীর্ঘ জেরা করার পর তাকে কলকাতার উদ্দেশ্যে নিয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। এনআইএ সূত্রে জানা গেছে, এই নেতার সাথেও যোগ মিলেছে অবৈধ বিস্ফোরক কারবারের। এনআইএ-র জালে ধরা পড়া এই তৃণমূল নেতার নাম ইসলাম চৌধুরী। বাড়ি বীরভূমের পাইকর থানার বড়লিপাড়া গ্রামে। ইসলাম চৌধুরী কুশমোড়-২ অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি। তার স্ত্রী পারভিন বিবি পঞ্চায়েত সদস্য। দাপুটে নেতা হিসাবেই এলাকায় পরিচিত। তৃণমূল মন্ত্রী, বিধায়ক থেকে শুরু শাসকদলের সব স্তরের সাথে তার ঘনিষ্ঠতার খবর জানেন সকলে। এদিন ভোর পাঁচটা নাগাদ তার বাড়িতে হানা দিয়ে এই তৃণমূল নেতা, তার বাবা ও স্ত্রীকে পাইকর থানায় নিয়ে এসে জেরা শুরু করে এনআইএ। প্রায় ছয় ঘন্টা জেরার পর স্ত্রী, বাবাকে ছেড়ে দিলেও তৃণমূল নেতাকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এনআইএ। যদিও কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা মুখ খোলেননি তবে তৃণমূল নেতার বাবা জানিয়েছেন, ‘‘কলকাতা নিউটাউনে নিয়ে গেল ছেলেকে। বিস্ফোরকের জন্য বলল...’’ বাবার কথা শেষ হতে না হতেই তার অনুগামীরা তড়িঘড়ি তাকে সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে চলে যায়। সূত্র মারফত জানা গেছে, এনআইএ তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে ল্যাপটপ, নথিপত্র ছাড়াও নগদ টাকা, গয়না ও একটা রিভলবার বাজেয়াপ্ত করেছে। কিছুদিন আগেই বীরবভূমের আরেক তৃণমূল নেতা নলহাটির মনোজ ঘোষ বিস্ফোরক মজুতের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই এই ইসলাম চৌধুরী এসেছে এনআইএ র র্যাডারে।
গত ২৮ জুন সকাল আটটা নাগাদ আচমকা বাহাদুরপুরে তৃণমূল প্রার্থীর ক্রাশারে হানা দেয় এনআইএ’র তদন্তকারীরা। প্রায় সাত ঘন্টা ধরে চলে তল্লাশী। অবশ্য তখন সেখানে ছিলেন না পাথর কলের মালিক মনোজ ঘোষ। তারপরেও আর ওমুখো হয়নি সে। গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। তবে ক্রাশারের ম্যানেজারকে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, তল্লাশী চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। সেই তল্লাশীতে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল দেশি পিস্তল, কার্তুজ, ১৩০টি জিলেটিন স্টিক ও ৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। পাশাপাশি ক্রাশারের অফিসে থাকা সিসিটিভি’র ডিভিআরও বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গেছে এনআইএ। সিল করে দেওয়া হয়েছিল অফিস। এরপর গত ১০ জুলাই মনোজ ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছিল এনআইএ। অপরদিকে এই দাপুটে তৃণমূল নেতা মনোজ ঘোষ জিতে যায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে। এলাকার মানুষের মত, সেভাবে তো প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়নি। দাপটের জেরে মনোজ ঘোষ তো আগেই এলাকার দখল নিয়েছিল। বিরোধীদের সেভাবে মাথা তুলতে দেয়নি। সেই মনোজ ঘোষের গ্রেপ্তারের ২২ দিন পর এনআইএ পাকড়াও করেছে আরেক তৃণমূল নেতাকে।
Comments :0