মোদী সরকারের বিশেষ করে স্বয়ং নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর কর্পোরেট দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আর সেই কর্পোরেটের মালিক যদি আদানি বা আম্বানি হয় তাহলে তো কথাই নেই। আসলে যে দলটা চলে কর্পোরেটের টাকায় সেই দল এবং তাদের নেতারা কর্পোরেট স্বার্থকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে সেটাই স্বাভাবিক। অবশ্য আদানিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা একটু বেশি। তাই আদানিদের প্রত্যাশা পূরণে মোদী কখনোই কার্পণ্য করেন না। আদানিদের বাসনা ছিল দেশের বিমানবন্দরগুলির কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ কবজা করা। মোদী তাই দেশের জনগণের করের টাকায় গড়ে তোলা বিমানবন্দরগুলি এক এক করে তুলে দিয়েছেন আদানিদের হাতে। এখন দেশের বিমানবন্দরগুলি সহ সব লাভজনক বিমানবন্দরগুলির মালিক মোদী বন্ধু আদানি। একইভাবে দেশের বৃহৎ ও মাঝারি সমুদ্র বন্দরগুলিও চলে গেছে আদানিদের হাতে। এখন চলছে দেশের খনিজ সম্পদ হস্তান্তরের কাজ। বিভিন্ন রাজ্যের পাহাড়-জঙ্গলের নিচে মজুত খনিজ সম্পদ লুটের বন্দোবস্ত হচ্ছে। সর্বত্র লক্ষ লক্ষ একর বনাঞ্চলের দখল পাচ্ছে আদানিরা। মোদী জমানায় যত রকমের নতুন শিল্প প্রকল্প হচ্ছে তার বেশিরভাগেরই মালিকানা চলে যাচ্ছে আদানি সহ কয়েকটি ঘনিষ্ট কর্পোরেটের দখলে। সৌর বিদ্যুৎ, উইন্ড মিল, সামরিক উৎপাদন প্রকল্প, আধুনিক চিপ প্রকল্প ইত্যাদি সবটাই কার্যত উপহার হিসেবে গেছে আদানি-আম্বানিদের কাছে। অর্থাৎ গত এক দশকের মধ্যে শিল্প-বাণিজ্যের মানচিত্র অনেকটা বদলে গেছে। গড়ে উঠেছে একচেটিয়া বৃহৎ কর্পোরেট সাম্রাজ্য, যার মাথায় আছে আদানি, আম্বানিরা।
আরএসএস-র রাজনৈতিক শাখা বিজেপি মতাদর্শগতভাবে হিন্দুত্ববাদের অনুসারী হলেও এবং ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষণা করলেও আদতে অর্থনীতির প্রশ্নে তারা একচেটিয়া কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থবাসী। কর্পোরেটের অধিক মুনাফা এবং অর্থনীতির লাগাম কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়াই মোদী সরকারের আসল উদ্দেশ্য। অবশ্য কর্পোরেটের ক্ষেত্রেও বাছবিচার আছে। যেসব কর্পোরেট আরএসএস-বিজেপি ঘনিষ্ট এবং অবশ্যই মোদীর জিগরিদোস্ত তারাই ধান্ধার ধনতন্ত্রের সবচেয়ে সুবিধাভোগী। মোদী জমানায় কর্পোরেট সম্পদ ও মুনাফা বৃদ্ধির হিংসভাগ গেছে আদানি-আম্বানিদের ঘরে।
সম্প্রতি ডাল আমদানিকে কেন্দ্র করেও মোদী সরকার নীরবে আদানি সেবায় মগ্ন হয়েছে। ২০২৩ সালে দেশে ডাল আমদানির ব্যবস্থা হয়। সেটা আমদানি করে মূলত আদানির সংস্থা। রাশিয়া ও কানাডা থেকে হলুদ ডাল আমদানি করে অতি সস্তায় যা দেশে সরকার ঘোষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য থেকে অনেক কম। সেই সস্তার আমদানি করা ডাল বাজারে বিক্রি করে দু’হাতে মুনাফা কামায় আদানিরা। আর মার খায় দেশের ডাল উৎপাদক কৃষকরা। পরে দেশে ডাল উৎপাদন বাড়লেও আদানিদের ডাল আমদানি চালু রাখতে আমদানি শুল্ক ফেরানো হয়নি। উপরন্তু ২০২৬ সালেও শুল্ক মুক্ত রাখার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ আরও এক বছর চুটিয়ে আদানিরা মুনাফা করতে পারবে।
প্রসঙ্গত নীতি আয়োগ এবং কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কস্ট অ্যান্ড প্রাইসেস-র পক্ষ থেকে দেশের বাজারে সস্তার ডাল আমদানি বন্ধ করার সুপাশি করা হলেও সরকার তা গ্রাহ্য করেনি। ফলে ক্রেতাদের বেশি দামে ডাল কেনা এবং কৃষকদের ডালের ন্যায্য দাম না পাওয়ার বিনিময়ে আদানিদের অতিরিক্ত মুনাফা নিশ্চিত হয়েছে। বস্তুত এটাই মোদী সরকারের আসল চরিত্র।
Editorial
লক্ষ্য সেই কর্পোরেট মুনাফা

×
Comments :0