FAKE RESIGNATION LETTER

সই জাল করে কর্পোরেশনের কর্মীর চাকরি কাড়ল তৃণমূল

কলকাতা

CPIM TMC BJP AIKS WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION WEST BENGAL POLITICS 2023 BENGALI NEWS

‘অপরাধ’ বামপন্থী রাজনীতির সক্রিয় কর্মী। তাই তাঁর সই জাল করে বানানো হলো পদত্যাগপত্র। ভুয়ো পদত্যাগপত্র ববহার করে ওই অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ কেড়ে নিলেন তৃণমূলের কাউন্সিলর। কাউন্সিলরের এই অপরাধে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত বরোও। এই মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে কলকাতার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের জোড়াবাগান স্ট্রিটে। 

২০২১ সালের কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে শহর সাক্ষী থেকেছে বেনজির ভোট লুটের। লুটের ভোটে তৃণমূলের বাক্সে গিয়েছে ৭৫ শতাংশ ভোট। কিন্তু একাধিক জায়গায় ঢালাও লুট চালাতে পারেনি তৃণমূল। হয়েছিল প্রতিরোধ। যেমনটা হয়েছিল ২১ নম্বর ওয়ার্ডে। দীর্ঘদিন ধরে এই ওয়ার্ডে সিপিআই’র কাউন্সিলর। ২০২১’র নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে একাধিক বুথ দখল করে সিপিআই কাউন্সিলর সুজাতা সাহাকে মাত্র ৪৪ ভোটে পরাজিত করেন তৃণমূল প্রার্থী মীরা হাজরা। 

তারপর থেকে শুরু হয় ওয়ার্ডে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীদের উপর অত্যাচার। ফতোয়া দেওয়া হয়, হয় তৃণমূল করতে হবে, মিছিলে হাঁটতে হবে, নইলে চাকরি থাকবে না। অধিকাংশ কর্মচারী বাধ্য হয়ে সেই ফরমান মেনে নিলেও ফতোয়া অগ্রাহ্য করেন স্বাস্থ্য বিভাগের অস্থায়ী কর্মচারী মুনমুন ব্যানার্জি। 

এরপর ৩বার মুনমুন ব্যানার্জিকে ডেকে হুমকি দেন তৃণমূল কাউন্সিলর। বলা হয়, তৃণমূলের মিছিলে না গেলে তোমার চাকরি আমরা খেয়ে নেব। হুমকিতে কাজ না হওয়ায় তাঁকে বলা হয়, ‘‘তোমাকে আর কাজে আসতে হবে না।’’

জানা গিয়েছে, নিজের অসহায় অবস্থা বর্ণনা করে ২০২২ সালের ২৯ জুলাই ৪ নম্বর বরো’র স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি লেখেন মুনমুন ব্যানার্জি। সেখানে তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘‘কাউন্সিলরের কথা শুনে মিছিলে না যাওয়ায় আমায় ১৫ দিনের জন্য কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়। সেই ১৫ দিন কেটে গেলেও আমায় কাজে যোগ দিতে দিচ্ছেন না কাউন্সিলর।’’

বরো স্তরের আধিকারিকের কাছে আবেদনের পাশাপাশি ২০২২ সালের ১৪ জুলাই কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ এবং সংশ্লিষ্ট মেয়র পারিষদ সদস্য রাম পেয়ারে রামের কাছেও কাজ ফিরে পাওয়ার আবেদন জানান তিনি। সেই চিঠিতেও বলা হয়, ‘‘হঠাৎ কাজ চলে যাওয়ায় আমি ও আমার শয্যাশায়ী মা খুবই সমস্যায় পড়েছি।’’

অভিযোগ, কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ স্তরে আবেদন জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। স্রেফ তৃণমূলের মিছিলে পা মেলাতে অস্বীকার করায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল মহিলার কাজ কেড়ে নেওয়া হয় শহর কলকাতায়। 

অবস্থার কোনও উন্নতি না ঘটায় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ৪ নম্বর বরো’র স্বাস্থ্য আধিকারিককে ফের চিঠি লেখেন মুনমুন ব্যানার্জি। সেখানে তিনি স্পষ্ট লেখেন, ‘‘আমার কাজের খুব প্রয়োজন। আমি কর্পোরেশনের কাজ করব না বলে কোথাও কোনও ইস্তফাপত্র জমা দিইনি।’’

এই চিঠি দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ৪ নম্বর বরো’র বৈঠকে মুনমুন ব্যানার্জির নামে একটি চিঠি জমা করেন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীরা হাজরা। ঝরঝরে ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘‘আমি আরও ভালো কাজের সুযোগ পেয়েছি। তাই আমি কর্পোরেশনের চাকরি থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।’’ ইংরেজিতে সই করা সেই চিঠি গৃহীত হয় বরো বৈঠকে। 

মুনমুন ব্যানার্জির জমা দেওয়া সমস্ত চিঠিতে তিনি বাংলায় সই করেছেন। কিন্তু ইস্তফাপত্রের চিঠিতে রয়েছে ইংরেজি সই। 

এরপর ৬ মার্চ ডেপুটি মেয়র এবং মেয়রকে ফের চিঠি দেন মুনমুন ব্যানার্জি। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন,‘‘আমি ইংরেজি জানি না। কিন্তু ইংরেজিতে লেখা এবং সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে আমি ইস্তফা দিচ্ছি। ওটা নকল চিঠি। কর্পোরেশনের এই কাজ আমার খুব প্রয়োজন।’’

এই প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘দুর্নীতির প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৃণমূলের জন্ম। তাদের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে চিটফান্ডের দুর্নীতির টাকায়। গোটা তৃণমূল দুর্নীতি প্রক্রিয়ার বাইরে থাকতে পারেনা মানসিক ভাবেই। সেইজন্য সই জাল করেও কাজ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখের হলেও সত্যি। এই জিনিস একমাত্র তৃণমূলই করতে পারে। আর পারে বলেই তারা মমতা ব্যানার্জির এত কাছের।’’

Comments :0

Login to leave a comment