Unemployment rate

বছরের প্রথম দিনেই বল্গাহীন বেকারির অশনি সঙ্কেত

জাতীয়

বেকারি রেকর্ড হারে বাড়িয়ে শেষ হলো বিদায়ী বছরের শেষ মাস। বছরের প্রথম দিনে বল্গাহীন বেকারি বেড়ে চলার অশনি সঙ্কেত দিয়েছে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই)। রবিবার সিএমআইই বেকারি নিয়ে সমীক্ষা রিপোর্টে জানিয়েছে, ডিসেম্বরে দেশে গড় বেকারি রেকর্ড হারে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮.৩ শতাংশ। যা গত ১৬ মাসে সর্বাধিক বৃদ্ধি। শহরে বেকারি হার আরও বেড়ে হয়েছে ১০.১ শতাংশ। গ্রামে সামান্য কম ৭.৪৪ শতাংশ। নভেম্বরে গড় বেকারি বৃদ্ধি হার ছিল ৮শতাংশ, শহরে বেকারি বৃদ্ধি হার ৮.৯৬ শতাংশ, গ্রামে তা ছিল ৭.৫৫ শতাংশ।


এদিন সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে সিএমআইই অধিকর্তা মহেশ ব্যাস বলেন, দেশে বেকারির এইরকম চড়া হারে বৃদ্ধি সম্ভবত আগে কখনো দেখা যায়নি। এদিকে গত বছরের শুরুতে বেকারি বৃদ্ধির হার কম থাকলেও বছরের শেষে তা রেকর্ড হারে বেড়েছে। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে ডিসেম্বরে বেকারির হার চড়া হারে বেড়ে চলাতেই গড় বেকারি চড়া হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা সংস্থা। এতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্য হরিয়ানাতে দেশের মধ্যে বেকারির হার সবচেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা হলো ৩৭.৪ শতাংশ। রাজস্থানে বেকারি বৃদ্ধি হার হলো ২৮.৫শতাংশ, দিল্লিতে তা ২০.৮ শতাংশ, ত্রিপুরায় বৃদ্ধি ১৪.৯ শতাংশ, বিহারে বৃদ্ধি ১৯.১ শতাংশ, ঝাড়খণ্ডে বৃদ্ধি ১৮শতাংশ।  এদিকে জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (এনএসও) জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বেকারির হার বেড়ে চলার আভাস দেয়। তারা জানায় সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বেকারি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.২ শতাংশ। এর পর থেকে বেকারির হার বেড়ে চলেছে। তাতে কোনও রাশ টানা যায়নি। ডিসেম্বরে তা সর্বাধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। 
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মত, মানুষের আয় কমে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় দেশের শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমে তলানিতে চলে যাওয়ায় আর্থিক বৃদ্ধির হার কমছে। এতে শিল্পে কাজ হারিয়ে বেকারিও চড়া হারে বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি দেশের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (এনএসও) সমীক্ষায় জানিয়েছে, অক্টোবরে শিল্পে বৃদ্ধির হারে রেকর্ড হারে অধোগতি ঘটেছে। তা হলো (-) ৪শতাংশ। যেখানে গত বছর অক্টোবরে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৪.২শতাংশ। শিল্পের উৎপাদনে বড় রকমের অধোগতিতে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হারও হ্রাস পাচ্ছে। এই তথ্য উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বৃদ্ধি হার কমে আসায়  অর্থনীতি  দুর্বল হয়ে পরেছে। এতে বাড়ছে বেকারি। এক্ষেত্রে আসন্ন বাজেটের আগেই অর্থনীতির সঙ্কট মোকাবিলায় সরকারকে চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগে বৃদ্ধিতে যে জোর দেওয়া  উচিত বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তবে এতে সরকারের কোন উদ্যোগ আজও চোখে পরেনি।
এদিকে মোদী সরকারের আমলে কর্পোরেটকে নানা আর্থিক তোফা দিলেও তাদের দেশে বিনিয়োগ সে হারে বাড়েনি। ফলে শিল্পে যে বিকাশ আশা করা হয়েছিল তা দেখা যায়নি। এবছর মোট কর আদায় হয়েছে ২৭.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা। এতে কর্পোরেট কর আদায় হয়েছে ৭.২লক্ষ কোটি টাকা। যা মোট করের ২৬ শতাংশ। এদিকে ২০১৩-১৪ সালে কেন্দ্রে মোট কর আদায় হয়েছিল ১১.৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। এতে কর্পোরেট কর আদায় হয়েছে ৩.৯ লক্ষ কোটি টাকা। যা মোট করের ৩৪ শতাংশ। ফলে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, কর্পোরেট থেকে কর আদায়ের পরিমাণ ৮শতাংশ হারে কমেছে। কর্পোরেটকে তা ছাড় দেওয়া হয়েছে। কর্পোরেটের দফায় দফায় কর ছাড়ের নামে তোফা মিললেও তাদের এতে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়েনি।পরিনামে শিল্পের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে  তাতে কর্মসংস্থানের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাতে রেকর্ড হারে বেড়েছে বেকারি।


এদিকে মোদী সরকার বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও সে চাকরি মেলেনি। সংসদে শ্রম মন্ত্রীকে বছরে ২কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি নিয়ে লিখিত প্রশ্ন রাখেন সাংসদ। প্রশ্ন ছিল, আদৌ কেন্দ্র কি বছরে ২কোটি  চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে? তবে সেই চাকরির কতটা দেওয়া হয়েছে ? জবাবে শ্রম মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব বছরে ২কোটি চাকরি নিয়ে একটি শব্দ বলেননি। তাঁর দাবি, সরকার কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।প্রশ্ন ছিল,তবে  কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কত নিয়োগ হয়েছে?মন্ত্রী জানাচ্ছেন ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১ এই পাঁচ বছরে  কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে ও কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় মোট ৪লক্ষ ৪৫ হাজার ৪১৮ জন নিয়োগ হয়েছে। ফলে বছরে ১লক্ষের কম নিয়োগ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারি ও কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় । অন্য সরকারি সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় শূন্যপদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯লক্ষ ৭৯ হাজার। যা নিয়োগ হয়েছে তার থেকে দ্বিগুন হারে বেড়ে চলেছে শূন্য পদের সংখ্যা। একদিকে বেহাল অর্থনীতিতে শিল্পে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় শ্রমিক ছাঁটাই বাড়ছে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তার সঙ্গে সরকারি নিয়োগ কার্যত কমে  গিয়ে শূন্য পদ বেড়ে চলায়  সরকারি ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থান থমকে গেছে। গ্রামীণ রোজগার প্রকল্পেও বরাদ্দ কমায় সেখানেও  অতিরিক্ত কর্মসংস্থান হচ্ছে না। ফলে নতুন বছরের  প্রথম দিনে ভয়াবহ বেকারির অশনি সঙ্কেত জানিয়ে দিচ্ছে সমীক্ষা রিপোর্ট।
 

Comments :0

Login to leave a comment