Anubrata mondal in delhi

তৃণমূলের সব চেষ্টাই ব্যর্থ আজই দিল্লি যাবে কেষ্ট?

জাতীয়

অবশেষে দিল্লির পথেই গোরু পাচারকাণ্ডে ধৃত মমতা ব্যানার্জির স্নেহধন্য অনুব্রত মণ্ডল। রাজধানীর রাউস অ্যাভিনিউ আদালত তাকে দিল্লিতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পক্ষেই রায় দিয়েছে সোমবার।
গোরু পাচারকাণ্ডে বিপুল টাকা নয়ছয়ের তদন্তে দিল্লিতে জেরা এড়াতে শাসক তৃণমূলের তরফে সর্বতোভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল। বিপুল টাকা খরচ করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বালকে অনুব্রত ওরফে কেষ্টর আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করেছিল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবুও শেষরক্ষা হলো না। দেহরক্ষী সায়গলের পথেই দিল্লিতে যেতে হচ্ছে কেষ্টকে।
কেষ্টকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার তৎপরতা শুরু হয়ে যায় এদিন বিকেল থেকেই। প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র আধিকারিকরা। যদিও এদিনই তাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। দিল্লির আদালতের আদেশের কপি আসানসোল জেলে এসে পৌঁছয় বিকেল পাঁচটার পরে। এখানেই গত চার মাস ধরে রয়েছে বীরভূমের এই বাহুবলী তৃণমূলী নেতা। জেলের নিয়ম অনুযায়ী বিকেল পাঁচটায় শেষবার ‘গুনতি’ হয়। এরপর কাউকে জেল থেকে বের করা যায় না। 
ফলে মঙ্গলবার সকালেই কেষ্টকে দিল্লি নিয়ে যেতে চলেছে ইডি। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সদর দপ্তরে রেখেই চলবে তার জেরা। পরে আদালতেও তোলা হবে। জেল হেপাজত হলে তাহলে কেষ্টকে তার দীর্ঘদিনের গোরু পাচারের সঙ্গী, নিরাপত্তারক্ষী পুলিশকর্মী সায়গল হোসেনের সঙ্গেই তিহাড় জেলে থাকতে হবে। যদিও কেষ্ট মণ্ডলের তরফে তার ঘনিষ্ঠরা এবং আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আগামীকালই দিল্লি হাইকোর্টে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করা হবে। 
গত ১৮ নভেম্বর দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে গোরু পাচারকাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে ধৃত কেষ্টর বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারির আবেদন জানায় ইডি। ইডি’র দাবি ছিল, কেষ্টকে দিল্লিতে নিয়ে এসে জেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করার আবেদন জানানো হয়। গোরু পাচার মামলায় দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের এক্তিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছিল কেষ্ট। কপিল সিব্বাল সেই মামলা লড়েন। যদিও গত ১৫ ডিসেম্বর দিল্লি হাইকোর্ট সেই আবেদন রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টেই ফিরিয়ে দেয়। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চও প্রভাবশালী তত্ত্বেই  মমতা ব্যানার্জির কাছে ‘বীর’ সম্মান পাওয়া কেষ্টর জামিনের আবেদন ফিরিয়ে দেয়। ডিভিসন বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিল, জেলে থাকাকালীন যার জামিনের জন্য বিচারককেই হুমকি চিঠি দেওয়া হয় তার থেকে বড় প্রভাবশালী আর কে আছে?
এরপর গত শনিবার ফের দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। দুপক্ষের দীর্ঘ সওয়াল-পালটা সওয়াল চলে। অনুব্রতর তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন পশ্চিমবঙ্গের মামলায় কীভাবে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট দেয়? এব্যাপারে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের এক্তিয়ার নেই বলেও দাবি করেন তিনি। ইডি’র তরফে পালটা বলা হয়, দিল্লি হাইকোর্ট থেকে রায় পেয়েই এর আগে গোরু পাচারকাণ্ডে কেষ্টর সহযোগী সায়গল হোসেনকে দিল্লিতে নিয়ে এসেই জেরা করা হয়েছিল। মানি লন্ডারিং  মামলায় নির্দিষ্ট সীমানা থাকতে পারেনা। তাছাড়া গোরু পাচারের টাকাতেই গাজিয়াবাদে জমি ও চিত্তরঞ্জন পার্কে ফ্ল্যাট কিনেছে কেষ্ট  মণ্ডল। গোরু পাচারের টাকাতেই চিত্তরঞ্জন পার্কের একাধিক ফ্ল্যাট, গাজিয়াবাদের বাংলো কেষ্টর নামে। তাহলে দিল্লিতে এনে জেরায় কী সমস্যা? সেদিন রায়দান স্থগিত ছিল।
এরপর এদিন রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট রায় দিলো। আদালত তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করে। তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে জেরার অনুমতি দেয়। ইডি’র দপ্তরেই হবে সেই জেরা। এই রায়ের পরেই তৃণমূল শিবিরে আতঙ্কের চেহারা। কেষ্টর জেরা আটকাতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও ময়দানে নেমেছিল। নিয়োগ করা হয় কপিল সিব্বালকে। মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টে নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল।
লটারিকাণ্ডের পাশাপাশি তাঁর কন্যা সুকন্যা, হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি ও দেহরক্ষী সায়গলের বয়ানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা কথিত ‘বীর’ অনুব্রতর মাথায় ‘অক্সিজেনের অভাব’ আরও বাড়াতে পারে! গোরু পাচার মামলায় গত ৪ নভেম্বর সায়গলের পরে এবার কি কেষ্টর গন্তব্যও হতে চলেছে সেই তিহাড় জেল? স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়েই এখন জল্পনা।
ইডি আধিকারিকদের কথায়, গোরু পাচারকাণ্ডে বিপুল পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে। কেষ্টর একাধিক আর্থিক লেনদেনের তথ্য মিলেছে। ভিনরাজ্যে বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। আসানসোল জেলে জেরায় সম্পূর্ণ অসহযোগিতা করেছে কেষ্ট। এবার দিল্লিতে জেরায় সে কী করে তাই দেখার। 
গত ১২ আগস্ট বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কেষ্টকে। সিবিআই হেপাজতে ১৪ দিন কাটানোর পরে গত চার মাস আসানসোল জেলেই রাখা হয়েছিল তাকে। সেখান থেকেই আবার ‘মমতা ব্যানার্জির উন্নয়ন’, পঞ্চায়েত ভোট ইত্যাদি নিয়ে মিডিয়ায় বক্তব্য রাখছিল কেষ্ট। ফলে তার দিল্লি যাত্রার খবর শুনে বীরভূমের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়েছে। 
এখনও পর্যন্ত গোরু পাচারকাণ্ডে কোন চার্জশিট দায়ের করেনি ইডি। যদিও আরেক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ইতিমধ্যে তিন দফায় চার্জশিট দায়ের করেছে। তাতে কেষ্টকে অন্যতম অভিযুক্ত শুধু নয়, সে শারীরিকভাবে এবং সক্রিয়ভাবে গোরু পাচারের অপারেশন চালাতো বলেই উল্লেখ করেছে সিবিআই। দিল্লিতে সদর দপ্তরে এনে কেষ্টকে জেরার রাস্তা যদিও প্রশস্ত করেছিল তার কন্যা সুকন্যা মণ্ডল ও হিসাবরক্ষক মনীশ কোঠারির জেরা। ইডি’ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেষ্ট-কন্যা সুকন্যা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বিদ্যুৎবরণ গায়েনের নামে দু’টি কোম্পানির হদিশ মেলার পরেই মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আরও মজবুত হয়েছে। দু’টি কোম্পানি কার্যত শিখণ্ডী সংস্থা হিসাবে কাজ করতো। কেষ্টর টাকা খাটতো এই দুই সংস্থায়। আবার সেই সূত্রেই সামনে আসে বিনয় মিশ্র-এনামুল হক-বিকাশ মিশ্রের যৌথ উদ্যোগের আরও তিনটি সংস্থা। এনামুলের হকের পঞ্চাশটির বেশি এমন ভুয়ো, শিখণ্ডী সংস্থা আছে যার অস্তিত্ব কেবল খাতায় কলমে!

 

 

Comments :0

Login to leave a comment