Atique murder follow up

তিন জায়গার অপরাধীদের জড়ো করল কারা, উঠছে প্রশ্ন

জাতীয়

আতিক আহমেদ ও তার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড ঘিরে অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটি হলো তিন আততায়ী পরস্পরকে চিনত কিনা। সম্ভবত না। লভলেশ তিওয়ারি বান্দার, মোহিত ওরফো সানি হামিরপুরের, অরুণ মৌর্য কাসগঞ্জের। পুলিশের খাতায় এদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা রয়েছে, কিন্তু স্থানীয় স্তরে। কোনও ‘গ্যাঙ’-এর সদস্য, এমন তথ্য নেই। আতিক হত্যাকাণ্ডের পরে পুলিশ এফআইআর-এ লিখেছে, এই আততায়ীরা বলেছে তারা আতিককে মেরে রাজ্যের বড় অপরাধী চক্র হয়ে উঠতে চাইছিল। এই বয়ানকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেবার মতো কোনও তথ্য নেই। 
বরং লভলেশ তিওয়ারিকে নিয়ে অন্য তথ্য রয়েছে। সে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। ইতিমধ্যেই স্মৃতি ইরানির ডাকা সভায় তাঁর উপস্থিতির ছবি পাওয়া গিয়েছে তারই ফেসবুকে। বিজেপি’র বান্দা জেলার প্রাক্তন সভাপতি পুষ্কর দ্বিবেদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবিও সে নিজেই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। এই দ্বিবেদী আবার নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার ছবি দিয়েছে। তিওয়ারির সাম্প্রতিক ফেসবুকেও হিন্দুত্ববাদী স্লোগান ও কথাবার্তা রয়েছে। 
বান্দার কটারা এলাকায় লভলেশের বাড়ি। তার বাবা যজ্ঞ তিওয়ারি একটি স্কুল বাস চালাতেন। রবিবার সকালেই স্কুল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁকে আর বাস চালাতে হবে না। তাঁর বক্তব্য, লভলেশ কখনও সখনও বাড়ি আসত। কী করত, কোথায় থাকত কিছুই বলত না। বহুদিন ধরেই তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ক্ষীণ। নেশাসক্ত ছিল। তার ভাইদের সঙ্গেও তার কোনও যোগাযোগ ছিল না। একবার এক মহিলাকে চড় মারায় জেলে আটক হয়েছিল। দ্বাদশ শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা করেনি। লভলেশের মা জানিয়েছেন, সে ধর্মপ্রাণ ছিল। প্রায়ই মন্দিরে যেত। ভক্তমণ্ডলীতে গানবাজনায় থাকত। কী করে এই দুষ্কর্মে সে ভিড়ে গেল তা বোঝা যাচ্ছে না। লভলেশের ভাই বেদ তিওয়ারি জানিয়েছে, এক হিন্দু সংগঠনে আগে তার দাদা কাজ করত। কিন্তু এখন করত বলে জানা নেই। এক সপ্তাহ আগে বান্দায় এসেছিল। 
হামিরপুরের সানির প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বছর দশেক ধরে সে বাড়িতে থাকে না। অপরাধেও জড়িয়ে গেছে। হামিরপুর জেলে এক বছর বন্দি ছিল। করারার পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, সানির বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে। তবে খুব সম্প্রতি কোনও মামলা স্থানীয় থানায় নেই। সানিরা তিন ভাই, এক ভাই আগেই মারা গিয়েছে। পরিবারের সদস্যরাও জানিয়েছেন, সানির সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই। 
কাসগঞ্জে অরুণ মৌর্যের বাবা-মা প্রয়াত। দুই ভাই দিল্লিতে ব্যবসা করে। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, এখানে অরুণকে দেখা যায় না। কোথায় থাকে, কী করে কারোরই জানা নেই। 
এহেন স্থানীয় স্তরের অপরাধীদের একসঙ্গে জোটালো কে বা কারা? অত্যন্ত দামি অস্ত্র তাদের হাতে তুলে দিল কারা? পুলিশি ঘেরাটোপে টিভি সম্প্রচার চলাকালীন হত্যা করলে তাদের যে ধরা পড়তে হবে, এ জেনেও এই কাজে কেন যুক্ত হলো তারা? উত্তর প্রদেশের পুলিশ এইসব প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয়নি। 
ভিডিওতে দেখা গেছে, হত্যাকারীরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিচ্ছে। স্পষ্টতই এই হত্যাকাণ্ডকে সাম্প্রদায়িক চেহারা দিতে এই স্লোগান। নিছক অপরাধীর এমন লক্ষ্য বা বুদ্ধি কোনোটাই থাকার কথা নয়। কে বা কারা তাদের এই স্লোগান দিতে শিখিয়েছিল, সে প্রশ্নও উঠেছে।

Comments :0

Login to leave a comment