Best who Never Played World Cup

দুনিয়া মাতালেও যাঁদের খেলা হয়নি বিশ্বকাপ

খেলা

Best who Never Played World Cup

জর্জ বেস্ট

ঘন্টার কাঁটা আরও কয়েক ধাপ এগোলেই এবারের মতো শেষ হবে ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। যবনিকা পড়বে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের মঞ্চে। ফের চার বছরের অপেক্ষা। মধ্যবর্তী সময়ে জন্ম নেবে বহু উদীয়মান তারকা। একইসঙ্গে ময়দান থেকে বিদায়ও নেবেন বহু দিকপাল। এরই মাঝে আমরা ফিরে তাকানোর চেষ্টা করব সেই ফুটবলারদের দিকে, দুনিয়া কাঁপালেও যাঁরা কোনওদিনও বিশ্বকাপে পা রাখেননি।

এই তালিকায় প্রথমেই আসবে জর্জ বেস্টের নাম। ৬০ এবং ৭০’র দশকের প্রথম ভাগে জর্জ বেস্টকে বিশ্বের সেরা উইঙ্গার এবং অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বলা হত। উত্তর আয়ারল্যান্ডার জর্জ, সেদেশের মানুষদের মতোই ছিলেন চিরবিদ্রোহী। ছিলেন নিজের মর্জির মালিক। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৪ সাল অবধি, ক্লাব ফুটবলের এমন কোনও ট্রফি নেই, যা তিনি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি পরে জেতেননি। কিন্তু এতকিছুর পরেও কোনওদিনও বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রাখতে পারেননি বেস্ট।

কারণ, বেস্টের সেরা সময়ে একবারের জন্য বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র আদায় করতে পারেনি উত্তর আয়ারল্যান্ড। জর্জ জাতীয় দল থেকে অবসর নেন ১৯৭৭ সালে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩১। মজার বিষয়, উত্তর আয়ারল্যান্ড বিশ্বকাপের ছাড়পত্র আদায় করে এর কয়েক বছর পরেই, ১৯৮২ সালে। কিন্তু ততদিনে নিজের সেরা ফর্ম বহুদূরে ফেলে এসেছেন বেস্ট। বিশ্বকাপ না খেললেও ইউরোপীয় ফুটবলে, বিশেষত ইংল্যান্ডের ফুটবলে এখনও জর্জ বেস্টকে ‘এনিগমা’ বলা হয়। এতগুলি বছর পরেও তিনি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। 

অ্যালফ্রেডো ডি’স্টেফানো

এই তালিকায় পরের নামটাই অ্যালফ্রেডো ডি’স্টেফানো। দুই রোনাল্ডো, জিনেদিন জিদানদের প্রজন্ম পেরিয়ে এখনও রিয়েল মাদ্রিদের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বিবেচিত হন ডি’স্টিফানো। ক্লাব ফুটবলের কৃতিত্বের জন্য দু’বার ব্যালন ডি’অর পেলেও ডি’স্টিফানো কোনওদিনও বিশ্বকাপে খেলেননি। 

এর মূল কারণ, ডি’স্টিফানোর সেরা সময়ে, অর্থাৎ ৫০’র দশকে দু’বার রাজনৈতিক কারণে বিশ্বকাপ বয়কট করে আর্জেন্টিনা। তার ফলে ১৯৫০ এবং ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা মাঠে নামেনি। ফলে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়োনোস আয়ার্সে জন্মানো ডি’স্টিফানোরও মাঠে নামা হয়নি। ১৯৫৬ সালে স্পেনের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন স্টিফানো। কিন্তু সেখানেও বিপর্যয়। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ৪ ম্যাচে স্টিফানো ২ গোল করলেও স্পেন ১৯৫৮ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।

যদিও স্টিফানোর প্রায় একার কৃতিত্বে ১৯৬২ সালের চিলি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করে স্পেন। কিন্তু বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগেই পায়ের পেশিতে চোট পান ডি’স্টিফানো। ফলে তাঁর আর মাঠে নামা হয়নি। সেবার স্পেনও গ্রুপ স্তরের বাধা পেরোতে পারেনি। এরপরেই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করেন অ্যালফ্রেডো ডি’স্টিফানো।

জর্জ উইয়া 

পিএসজি এবং এসি মিলানের হয়ে নিজের খেলাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন লাইবেরিয়ার এই মিডফিল্ডার। সেই পারফর্মেন্সের জোরেই ৯০’র দশকে জিতেছিলেন ২টি ব্যালন ডি’ওর। কিন্তু জাতীয় দলে যোগ্য সঙ্গতের অভাবে নিজের দেশকে একবারের জন্যও বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে হাজির করাতে পারেননি একমাত্র আফ্রিকান ব্যালন ডি’ওর বিজয়ী। বর্তমানে লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ‘ক্যাপ্টেন উইয়া’। তাঁর সরকারের আমলে সেদেশের ফুটবল পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হয়েছে। 

এরিক কাঁতোনা 

ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের অন্যতম সফল ‘প্লে মেকার’ বলা হয়ে থাকে কাঁতোনাকে। ক্লাবে সফল হলেও ফরাসি জাতীয় দলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি ‘কিং এরিক’। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন ফরাসী কোচ হেনরি মিশেলের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান এরিক। দল থেকে বাদ পড়তে হয়। ১৯৯০ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয় ফ্রান্স। তার ফলে চাকরি যায় হেনরি মিশেলের। তাঁর জায়গায় আসেন মিশেল প্লাতিনি। ফরাসি জাতীয় দলের ভরসা হয়ে ওঠেন এরিক কাঁতোনা। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের শেষ ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে জিততেই হত ফ্রান্সকে। সেই ম্যাচের প্রথমার্ধে কাঁতোনার গোলে এগিয়েও যায় ফ্রান্স। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে বুলগেরিয়াকে এগিয়ে দেন এমিল কস্তাদিনোভ। পরপর দুই বিশ্বকাপে স্বপ্নভঙ্গ হয় ফ্রান্সের। আঘাত লাগে ফরাসি জাত্যাভিমানে। ঢেলে সাজানো শুরু হয় ফরাসী জাতীয় দল। 

১৯৯৫ সালে ক্লাব ফুটবলে ক্রিস্টাল প্যালেসের এক সমর্থককে লাথি মেরে বিতর্কে জড়ান কাঁতোনা। তার ফলে ৯ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নির্বাসিত হন তিনি। খোয়াতে হয় জাতীয় দলের অধিনায়কত্বও। এরই মাঝে জাতীয় দলে উঠে আসেন জিনেদিন জিদান। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ফরাসি ফুটবল। অতীতের তিক্ততা একপ্রকার ভুলে যেতেই দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয় কাঁতোনাকেও।

লাজলো কুবালা

চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং স্পেন। তিন দলের হয়ে খেললেও বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি বার্সোলোনার ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় কুবালা। প্রথমে হাঙ্গেরি এবং পরবর্তীকালে চেকোস্লোভাকিয়া থেকে স্পেনে আশ্রয় নেন কুবালা। 

বার্সেলোনায় খেলার সুবাদে স্পেনের জাতীয় দলেও সুযোগ মেলে। কিন্তু যোগ্যতা অর্জন পর্বে তুরস্কের কাছে হেরে ১৯৫৪ বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব থেকেই বিদায় নেয় স্পেন। ১৯৬২ সালে স্পেন বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র পেলেও, ততদিনে ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে ফেলেছেন কুবালা। মজার বিষয়, ১৯৫৪ সালে ফেরেঙ্ক পুসকাসের নেতৃত্বে স্বপ্নের স্কোয়াড গড়ে হাঙ্গেরি। বহু হাঙ্গেরিয়ানের আক্ষেপ, সেই দলে কুবালা থাকলে হয়ত বিশ্বকাপ জয় আটকাতো না তাঁদের। আর কুবালাকেও বিশ্বকাপ খেলার জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হতো না। 

রায়ান গিগ্‌স

জর্জ বেস্টের মতো রায়ান গিগ্‌সকেও ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মনে করা হয়। কিন্তু বেস্টের মতোই তাঁর সেরা সময়, অর্থাৎ ১৯৯০-২০১০ অবধি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয় গিগ্‌সের দেশ ওয়েল্স। তারফলে ক্লাব ফুটবলের লড়াইয়ে জিদান, রোনাল্ডোদের সমকক্ষ হলেও বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রাখার অনুমতি পাননি গিগ্‌স। পরবর্তীতে ওয়েল্‌সের কোচের ভূমিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন গিগ্‌স। 

 

Comments :0

Login to leave a comment