সংসদে বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে গরিব ও মধ্যবিত্তদের উপর লক্ষ্মীর কৃপার উপর ভরসা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সীতারামনের বাজেট বক্তৃতা শেষ হবার পর বললেন মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন পূরণের বাজেট। অতীতে কোনও দিন কোনও বাজেটে মধ্যবিত্তদের এভাবে উজাড় করে ঢালা হয়নি। জোর দিয়ে বারবার মধ্যবিত্তদের কথা বলেছেন বটে কিন্তু গরিবের স্বপ্ন পূরণের কথা ভুলেও উচ্চারণ করেননি। যথারীতি বাজেট সমারোহ থেকে বাদ পড়ে গেছে কৃষক- খেতমজুর- ছাত্র- যুব- মহিলা, দলিত,আদিবাসীরা। কিন্তু যে মধ্যবিত্তদের স্বপ্নপূরণ নিয়ে এত মাতামাতি সেই মধ্যবিত্ত কারা? গোটা জনসংখ্যার কতটা অংশ তারা দখল করে আছে? বছরে ১২লক্ষ টাকা আয় পর্যন্ত করে ছাড় দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত অর্থে মাসে লক্ষ টাকা বেতন পায় কত জন? সাধারণ ধারণায় মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেতন পেলেই তাদের মধ্যবিত্ত ধরা হয়। তার নিচে নিম্ন মধ্যবিত্ত। আরও নিচে গরিব মানুষ। তাহলে কর ছাড়ে সত্যিকারের লাভবান হলো কারা? তুলনামূলকভাবে সম্পদশালীরা। এরা মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশও নয়। অর্থাৎ ৯৯ শতাংশের যেখানে কোনও লাভ নেই সেখানে এত নাচানাচি অর্থহীন। এদতসত্ত্বেও এর ফলে মধ্যবিত্তদের যেটুকু উপকার হয়েছে সেটা নিঃসন্দেহে ভালো। কিন্তু মনে রাখতে হবে তুলনামূলকভাবে বেশি আয়ের মানুষকে কর ছাড়ের সুযোগ করে দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয় সঙ্কুচিত করা হয়েছে। আর তার পরিণতিতে অন্যান্য সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ কমে গেছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় সরকারই স্বীকার করেছে গত পাঁচ বছরে মানুষের আয় বা মজুরি বাড়েনি। অথচ কর্পোরেট মুনাফা অনেক বেড়ে গেছে। যেহারে কর্পোরেট তাদের মুনাফা বাড়িয়ে তার সামান্য অংশ শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে ব্যয় করেনি। আয় ও সম্পদ বৈষম্য বৃদ্ধির পেছনে এটাও একটা বড় কারণ। মানুষের আয় বা মজুরি না বাড়ায় এবং পাশাপাশি উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। বাজারে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা হ্রাস তারই ফল। ফলে অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে গেছে। বৃদ্ধির হার কমে গেছে। ২০১৯ সালে কর্পোরেট কর অনেকটা কমিয়ে দেবার ফলে এবং শিল্পপতি ও কর্পোরেটকে নানাভাবে সুবিধা ছাড় দিয়ে, ঋণ মকুব করে, বকেয়া কর ছাড় দিয়ে যথেচ্ছ মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া হলেও তারা বিনিয়োগ করেনি। ফলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ থমকে গেছে, বৃদ্ধির গতি কমে গেছে।
এমন সঙ্কটের মধ্যে যখন দরকার কর্পোরেট ও বিত্তবানদের থেকে বেশি কর আদায় করে সরকারি ব্যয় বাড়ানো, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা তখন সরকার ব্যয় সঙ্কোচনের পথে হেঁটেছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে রেগা, খাদ্য, কৃষি, গ্রাম উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এমনকি নগর উন্নয়ন খাতেও প্রকৃত বরাদ্দ কমিয়ে ফেলা হয়েছে। তফশিলি জাতি উপজাতিদের জন্যও বরাদ্দ বাড়েনি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বরাদ্দ কমেছে। বলা যায় বেশিরভাগ মানুষকে বঞ্চিত করে মধ্যবিত্ত আখ্যা দিয়ে অতি অল্প সংখ্যক মানুষকে সামান্য কর ছাড় দিয়ে বিপুল প্রচার চালানো হচ্ছে। দরিদ্র ও মধ্যবিত্তকে প্রতারণা।
Budget 2025
নিষ্ঠুর প্রতারণা
×
Comments :0