UN population report

সুমতি হোক

সম্পাদকীয় বিভাগ

বিশ্বের মোট জনসংখ্যা সংক্রান্ত রাষ্ট্র সঙ্ঘের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৫ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৪৬ কোটিতে। কোনও দে‍শের প্রকৃত জনসংখ্যার হদিশ পাবার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা হলো জনগণনা। দুর্ভাগ্যের হলেও এটা সত্য ২০১১ সালে জনগণনার পর ২০২১ সালে পরবর্তী জনগণনার কথা থাকলেও মোদী সরকার যথেষ্ট সঙ্গত কারণ ছাড়াই জনগণনার কাজ বন্ধ রেখেছে। দীর্ঘদিন এব্যাপারে ধ্যাকনমগ্ন থাকার পর সম্প্রতি ঘোষণা হয়েছে ২০২৭ সালে জনগণনার কাজ শুরু হবে। তার রিপোর্ট জনসমক্ষে আসতে আসতে ধরে নেওয়া যায় ২০৩০ সাল হয়ে যাবে। তার মানে ২০৩১ সালে হিসাব মতো পরবর্তী জনগণনা হবার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। সেটা হয়ত হবে সেই ২০৪১ সালে। জনগণনায় মোদী সরকারের যখন এতই এলার্জি তখন জনসংখ্যার যৎসামান্য তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে সামান্য নমুনা সমীক্ষা নির্ভর সরকারের অনুমান এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্টের উপর। সেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৩ সালেই ভারত জনসংখ্যায় চীনকে অতিক্রম করে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশে পরিণত হয়েছে। আর কোন ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে না উঠলেও এই একটি ক্ষেত্রে অন্তত চীনকে পেছনে ফেলে মোদী জমানা বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে। অবশ্য অর্থনীতির আয়তন বা মাথাপিছু আয়ের প্রশ্ন উঠলে লজ্জায় মোদীদের মুখ লুকানো ছাড়া উপায় নেই।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বছরে গড়ে এক কোটিরও বেশি জনসংখ্যা  বেড়ে যাওয়ায় আর যা-ই হোক আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী নেতারা নিঃসন্দেহে খুশি হয়েছেন। কারণ এরা ভীষণভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে বরাবর সওয়াল করে থাকেন। অবশ্য তারা একান্তভাবেই হিন্দুদের সংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে, মুসলিম বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে নন। এরা বরাবর হিন্দু মহিলাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন হিন্দু মহিলারা যাতে ন্যূনতম চারটি সন্তান ধারণ করেন। মেয়েরা যাতে বেশি সন্তানের জন্ম দিতে পারে তাই তারা চান না মেয়েরা বেশি লেখাপড়া করুক, পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাকরি বাকরি সহ বাইরের কাজে যুক্ত হোক। চান মেয়েরা ঘরে থেকে সংসার সামলাক, যত বেশি সম্ভব সন্তানের জন্ম দিক, তাদের লালন পালন করুক, স্বামী সেবায় মন দিক।
অবশ্য এটা বলার উপায় নেই জনসংখ্যা বে‍‌ড়ে ১৪৬ কোটি হওয়ার ফলে বর্ধিত জনসংখ্যায় হিন্দুদের অংশ কতটা। একমাত্র জনগণনা হলেই সেটা সঠিকাভাবে বলা যাবে। তবে ২০১১ সালের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী মহিলা পিছু সন্তান ধারণে হিন্দুদের থেকে মুসলিমরা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও হিন্দুদের থেকে অনেক বেশি দ্রুত মুসলিমদের সন্তান কমছে। ১৬ বছর পরের জনগণনার তথ্য হয়ত সত্যি সত্যি হিন্দুত্ববাদীদের খুশি হবার কারণ থাকবে। তবে হতাশ হবার আশঙ্কা থাকছে অন্য কারণে। আরএসএস-বিজেপি যে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি করে তার অন্যতম প্রধান ভাষ্য হলো ভারতে মুসলিম পুরুষ চার-পাঁচটি বিয়ে করে। তাদের সন্তান সংখ্যা কুড়ি-পঁচিশ। তাতে নাকি সুনামির গতিতে দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে। অচিরেই নাকি দেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে। যদি এমন যুক্তি বিজ্ঞান বর্জিত ধারণা সত্য হতো তাহলে গত ৭০ বছরে জনসংখ্যায় মুসলিমদের অংশ তেরো-চৌদ্দ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খেত না। আগামী জনগণনায় যদি দেখা যায় মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হিন্দুদের সমান হয়ে গেছে অথবা কমে গেছে তাহলে হিন্দুত্ববাদীদের লজ্জায় মুখ দেখার জো থাকবে না। আসলে অন্ধ হিন্দুত্ববাদীরা বোঝে না জনসংখ্যা বৃদ্ধি নির্ভর করে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ইত্যাদির ওপর। ধর্মের পুটুলি গিলিয়ে জনসংখ্যা  বাড়ানো কমানো যায় না। বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভারতেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে। এই বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করেই দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে হবে। হিন্দু-মুসলিম নিয়ে লুডো খেললে আর একটা পাকিস্তান বা বাংলাদেশ হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।

Comments :0

Login to leave a comment