সংরক্ষণের সমস্যায় নিয়োগ এবং ভর্তি বন্ধ রাখা যাবে না। দ্রুত নিয়োগ এবং ভর্তির কাজ শুরু করতে হবে। বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন বিচারপতি কৌশিক চন্দ তাঁর নির্দেশে বলেছেন, ২০১০ সালের আগে যে তালিকায় ৬৬টি সম্প্রদায় সংরক্ষণের আওতায় রয়েছে, সেখান থেকেই নিয়োগ এবং ভর্তির কাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। 
এদিন কলকাতা কর্পোরেশনের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র পদে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় বিচারপতি চন্দ নির্দেশ দিয়েছেন দ্রুত নিয়োগের কাজ শেষ করতে হবে। আদালত বলেছে, কলকাতা কর্পোরেশন তাদের শূন্য পদের তালিকা আগামী সাত দিনের মধ্যে রাজ্যের পৌর দপ্তরের কাছে পাঠাবে। রাজ্য সরকারকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই পদের অনুমোদন দিতে হবে। এরপরই পশ্চিমবঙ্গ মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে। ২০১০ সালের আগে যে সংরক্ষণের তালিকা রয়েছে সেখান থেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রার্থী নিতে হবে। রাজ্যে নিয়োগে কোনও বাধা নেই। 
প্রসঙ্গত, ২০২৪সালে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চ ২০১২ সালের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) সংরক্ষণ তালিকা বাতিল করে দিয়েছে। সেই নির্দেশে আদালত বলেছিল, ২০১২সালে রাজ্য সরকার ওবিসি সংরক্ষণের যে তালিকা তৈরি করেছে তা বিধি মেনে হয়নি। সেই তালিকা বাতিল করার সময়ই ডিভিসন বেঞ্চ বলেছিল, ২০১০ সালের আগে যে তালিকা রাজ্যে রয়েছে তা থেকেই সংরক্ষণ বজায় রাখতে হবে। তবে এই নির্দেশ দেওয়ার সময় আদালত বলেছিল, এই নতুন তালিকা থেকে যে সমস্ত নিয়োগ এবং ভর্তি হয়েছে তা বাতিল হবে না। কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশের বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। 
শীর্ষ আদালতে এই মামলা বিচারাধীন থাকার সময়ই রাজ্য সরকার ফের একটি নতুন তালিকা তৈরি করে তার বিজ্ঞপ্তি জারি করে। ২০১২ সালে সংরক্ষণের তালিকায় ১৭৯টি সম্প্রদায় ছিল। ২০২৫ সালে সরকার যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সেখানে ১৪০টি সম্প্রদায় রয়েছে। এই তালিকায় অধিক অনগ্রসর (ক্যাটাগরি-এ) এবং অনগ্রসর (ক্যাটাগরি-বি) রয়েছে। বিধানসভায় নতুন করে কোনও বিল না এনে নতুন করে আইনের সংশোধন না করেই রাজ্য সরকার ১৪০টি সম্প্রদায়ের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। রাজ্যের নতুন এই বিজ্ঞপ্তিটি কলকাতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজশেখর মানথার ডিভিসন বেঞ্চ এই নতুন বিজ্ঞপ্তির ওপর আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। 
রাজ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে এবং স্কুল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে অযথা বিলম্ব হচ্ছে। সরকার বলছে, কলকাতা হাইকোর্টের সংরক্ষণ সংক্রান্ত নির্দেশ থাকায় এবং মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকায় নিয়োগ এবং ভর্তিতে বিলম্ব হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট করে বলেছে নিয়োগ এবং ভর্তি বন্ধ করে রাখা যাবে না। এদিকে, রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর কলেজে ভর্তির পোর্টালে বলেছে, ওবিসি সংরক্ষণের অধিক অনগ্রসর (ক্যাটাগরি-এ) এবং অনগ্রসর (ক্যাটাগরি-বি) অনুযায়ী প্রার্থীদের আবেদন করতে হবে। যে তালিকার ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে সেই তালিকাই ছাত্র-ছাত্রীদের মেনে চলার কথা বলা হয়েছে কলেজে ভর্তির পোর্টালে। 
আদালতের নির্দেশের ওপর মান্যতা না দিয়ে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরুর বিরুদ্ধে রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং শিক্ষা সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে। শুক্রবার এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।