editorial

প্রশ্ন অনেক

সম্পাদকীয় বিভাগ

ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণের ইতিহাসে ভারতের মাটিতে একক বিমানের বৃহত্তম ও ভয়ঙ্করতম দুর্ঘটনাটি ঘটে গেল প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাটের আমেদাবাদ বিমান বন্দরে। একদা রাষ্ট্রায়ত্ত বর্তমানে মোদী সরকারের কল্যাণে টাটাদের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ২৪২জন যাত্রী ও কর্মী নিয়ে আমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু টেক অফে-র পর এক মিনিট কাটতে না কাটতেই বিমানটি ভেঙে পড়ে একটি মেডিক্যা ল কলেজের হস্টেল ও নির্মীয়মাণ বহুতলে। একজন বাদে বিমানে থাকা সকলেই প্রাণ হারিয়েছেন। আর যেখানে বিমানটি ভেঙে পড়েছে সেখানে ঠিক কত জন মারা গেছে এবং আহত হয়েছে স্পষ্ট নয়। মার্কিন সংস্থা বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭ মডেলটি বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক মডেল হিসাবে প্রচারিত। তেমনি এই মডেলটি নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা ও আশঙ্কার কথা বারবার শোনা যায় যা অন্য কোনও মডেল নিয়ে শোনা যায়নি। বস্তুত বোয়িং ৭৮৭ বাণিজ্যিকভাবে প্রথম ২০১১ সালে চালু হবার পর থেকেই হাজারো সমস্যায় জর্জরিত। বিপদের আশঙ্কায় অনেক দেশেই এই মডেল বসিয়ে দেয় বোয়িং কর্তৃপক্ষ সেগুলি মেরামত করে এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ বদলায়। কিছু বিমান মেরামতির জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় বোয়িংয়ের কারখানায় উড়িয়ে আনা হয়।
বিভিন্ন দেশের বিমান সংস্থা এই বিমান চালাতে গিয়ে যেসব সমস্যার কথা বলেছে সেগুলি মেরামত হলেও গলদ যে একেবারে গোড়ায় সেটা জনসমক্ষে আনেন বোয়িং সংস্থারই দুই কর্মী। তারা দুনিয়াকে প্রথম জানান প্রয়োজনীয় গুণমানের যন্ত্রাংশ যেমন ব্যবহার হচ্ছে না তেমনি যন্ত্রাংশ জোড়ার কাজ অতিরিক্ত দ্রুততায় করার ফলে গঠনগত ত্রুটি থেকে যাচ্ছে যা নিরাপদ উড়ানের পক্ষে বিপজ্জনক। বোয়িং সংস্থা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও এই ড্রিম লাইনার বিমানে যথেষ্ট গলদ আছে তা শুরু থেকে ধরা পড়েছে। দুই কর্মী এমন অভিযোগও করেছেন যে নির্মাণ গলদ ও যন্ত্রাংশের মানের কারণে বিমানে আয়ু কমে যাবার আশঙ্কা আছে। বোয়িং ৭৮৭-কে ঘিরে যাবতীয় সন্দেহ ও আশঙ্কাই কি শেষে আমেদাবাদে বাস্তব হয়ে গেল?
ঘটনা যাই ঘটুক, এত মানুষকে মরতে হলো, স্বজন হারালেন আরও অসংখ্য মানুষ। এই সীমাহীন ও অপূরণীয় ক্ষতির দায় তাদের কারোর ছিল না। তবু তাদের মরতে হলো। সামগ্রিক বিমান পরিবহণ ব্যবস্থার গলদেই এই পরিণতি। মুনাফার লোভ যখন মানুষের জীবনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তখন বিমান নির্মাণ থেকে শুরু করে মেরামতি রক্ষণাবেক্ষণ সব কিছুই নির্মমভাবে অবহেলিত হয়। দ্রুত অর্ডার সরবরাহের জন্য বিমান নির্মাণে যেমন গুণগতমানের ঘাটতি থাকছে তেমনি বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলিও ন্যূনতম নিরাপত্তার ধার ধারে না। পাইলট ও কর্মী কম থাকায় অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। তেমনি বিমান সংখ্যা কম থাকায় বিশ্রামহীন ও রক্ষণাবেক্ষণহীনভাবে টানা চালানো হয়। সবটাই প্রতিযোগিতার নামে সর্বোচ্চ মুনাফা ও বাজার দখলের জন্য। পুঁজি, বাজার, মুনাফা ইত্যাদি যতদিন মানুষের জীবন থেকে বেশি গুরুত্ব পাবে ততদিন মানুষের জীবনের বিপন্নতা কাটার সুযোগ নেই।

Comments :0

Login to leave a comment