বিভিন্ন দেশে কোভিড সংক্রমণ ফের মাথা চাড়া দেওয়ায় সতর্কতার বার্তা দিয়েছে ভারত সরকারও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মনসুখ মান্ডভিয়া কোভিড বিধি অনুসরণ, ভ্যাকসিন নেওয়া ও জনবহুল এলাকায় মাস্ক পড়ার জন্য বুধবার আবেদন জানিয়েছেন।
কোভিডের সংক্রমণ বেড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনে। চীনের কথা সামনে আনা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই শীতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে আমেরিকায়। গড়ে দৈনিক ৪২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই আগের সপ্তাহের তুলায় ১৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটেছে গত সপ্তাহে। ৩৫ হাজার রোগীকে চিকিৎসা করতে হয়েছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবারই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এযাবৎ সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১০ কোটিতে পৌঁছেছে। কোভিড সংক্রমণ শুরু হবার পর থেকে ১০ লক্ষ ৮৮ হাজার মানুষ এই সংক্রমণে মারা গিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই কোভিডে মৃত্যুর ঘটনা সর্বোচ্চ। শীর্ষে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া, তারপরে টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নিউ ইয়র্ক।
জাপানে বুধবার নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২লক্ষ ১ হাজার জন। মঙ্গলবারের তুলনায় এই সংখ্যা ১৫,৪১২ বেশি। টোকিওতে ২১, ১৮৬জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। মঙ্গলবার চার মাসের মধ্যে প্রথমবার টোকিওতে সংক্রমণের সংখ্যা দৈনিক ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। অল্পবয়সিদের মধ্যে এই সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। মঙ্গলবার শেষ হওয়া সপ্তাহে জাপানে ২০ বছরের নিচে মোট ২লক্ষ ৫৭ হাজার সংক্রমিত হয়েছেন।
চীনেও সংক্রমণ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বেজিঙে সংক্রমণ শীঘ্রই শিখরে উঠবে।
মূলত বিএফ.৭ ভ্যারিয়্যান্টের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। বেজিঙ সহ দেশের বিভিন্ন প্রদেশে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চিকিৎসা কাঠামো শক্তিশালী করার কাজ চলছে। বিশেষ করে আইসিইউ শয্যা বৃদ্ধি করার জন্য হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার, একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে ও শহরে কোভিড বিধি শিথিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিচার করেই এই বিধির পরিবর্তন করা হচ্ছে। জানুয়ারি তৃতীয় সপ্তাহে সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তারপর থেকে কমতে থাকবে।
নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মনসুখ মান্ডভিয়া উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। পরে তিনি জানান, কোভিড শেষ হয়ে যায়নি। সতর্ক থাকা ও নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সদস্য জানিয়েছেন, দেশের মাত্র ২৭-২৮ শতাংশ মানুষ কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ভ্যাকসিন নেওয়া এবং মাস্ক পড়ে থাকা জরুরি। এই বৈঠকে জেনোমে সিকোয়েন্সিংয়ের ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন ভ্যারিয়্যান্টের যথাসময়ে খোঁজ পাবার জন্য তা প্রয়োজন বলে বৈঠকে বলা হয়েছে।
বৈঠকে মন্ত্রী জানান, ভারতে সংক্রমণ ধারাবাহিক ভাবেই কমেছে। ১৯ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে সংক্রমণ ১৫৮-তে নেমে এসেছে। কিন্তু গত ছ’সপ্তাহ ধরে বিশ্বে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। ১৯ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে বিশ্বের গড় দাঁড়িয়েছে দৈনিক ৫.৯ লক্ষ সংক্রমণ। বিএফ.৭ ভ্যারিয়্যান্টই এই বৃদ্ধির মূলে। ভারতে এই ভ্যারিয়্যান্টের তিনটি ঘটনা দেখা গেছে। ভারতে কেরালা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, তামিলনাডুতে সংক্রমণের সংখ্যা বেশি। এই পাঁচ রাজ্যেই মোট সংক্রমণের ৮৪ শতাংশ প্রত্যক্ষ করা গেছে। তবে সংক্রমণের তীব্রতা নেই।
Comments :0