জালিয়াতিতে দায়ী ভারতীয় হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসিকে ছাড় দিল ইন্টারপোল। আন্তর্জাতিক নজরদারি সংস্থার ‘রেড কর্নার নোটিশ’ থেকে মঙ্গলবার মুছে দেওয়া হয়েছে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অন্যতম অভিযুক্তকে।
ইন্টারপোল নোটিশে মেহুল চোকসির নাম সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। এই সংস্থার বক্তব্য, অ্যান্টিগুয়া থেকে চোকসিকে ডমিনিকায় অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। ন্যায় বিচারের আশঙ্কা জানানো হয়েছে। আপাতত এই অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ১৫ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতিতে অভিযুক্ত চোকসি এবং তাঁর আত্মীয় নীরব মোদী। মোদীর নাম যদিও চরম সতর্কতার তালিকায় রয়েছে। সংবাদমাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া দেয়নি সিবিআই বা ইডি। কিন্তু ইন্টারপোলের সিদ্ধান্ত তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।
চোকসি এবং নীরব মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরকারী দলে ঠাঁই পেতে দেখা গিয়েছে মেহুল চোকসি’কে। একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ‘মেহুল ভাই’ সম্বোধনও অস্বস্তি বাড়িয়েছে কেন্দ্রের সরকারের। ২০১৮’তে চোকসির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু তারপরও চোকসির সংস্থা গীতাঞ্জলী জেমসকে ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সংসদে তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধীরা।
পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক সিবিআই’র কাছে দায়ের করে অভিযোগ। বলা হয়, ব্যাঙ্কের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশে ভুয়ো ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ বের করে এই ব্যবসায়ী। দেশের ব্যাঙ্কের এই নিশ্চয়তার নথি দেখিয়ে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের থেকে সমানে ঋণ নেয় চোকসি এবং মোদী। ঋণ না মেটানোয় ১৫ হাজার কোটি টাকার দায় নিতে হয় পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে। জনগণের গচ্ছিৎ অর্থ দিয়ে জালিয়াতির দায় মেটাতে হয়।
সংশ্লিষ্ট অংশ জানাচ্ছে যে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশ কোনও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়। তবে সদস্য দেশগুলির পুলিশ এবং প্রশাসনিক স্তরে সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকে এই নোটিশে নাম থাকা ব্যক্তিবর্গের যাতয়াতে। নাম সরিয়ে নেওয়ার পর এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াতে বাধা থাকবে না। চোকসিকে ফিরিয়ে এনে দেশের বিচারব্যবস্থার সামনে হাজির করানোর প্রয়াস, ধাক্কা খাবে।
ললিত মোদী থেকে মেহুল চোকসি এবং নীরব মোদী জুটি কেবল নয়। ইডি বা সিবিআই জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করার পরও একের পর এক অভিযুক্তকে দেশ ছেড়ে পালাতে দেখা গিয়েছে। কেন্দ্রের সরকার এবং বিজেপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরতম অবস্থানের দাবি করলেও বারবার ফস্কা গেরো বেরিয়ে পড়েছে। ইন্টারপোলের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে এসেছে সেই আলোচনা।
Comments :0