ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা সহ অন্যান্য দাবিতে সোমবার দিল্লির বুকে হতে চলেছে কৃষকদের ‘মহাপঞ্চায়েত’। রামলীলা ময়দানে এই সমাবেশে হাজার হাজার কৃষক সমবেত হতে চলেছেন। ইতিমধ্যেই উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি থেকে তাঁরা রওনা দিয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পাঞ্জাবে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমস্যা সত্ত্বেও কৃষকের ঢল নামতে চলেছে রাজধানীতে।
সংযুক্ত কৃষক মোর্চার ডাকেই এই মহাপঞ্চায়েত হচ্ছে। রবিবার মোর্চার তরফে সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষক নেতারা বলেন, মোদী সরকার কোনও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি, তাই বাধ্য হয়েই কৃষকরা ফের পথে নামছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে সারা ভারত কৃষকসভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, তিন কৃষি আইন এনে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের ফসল কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ৩৮৫ দিন কৃষকরা একটানা অবরোধ করে। দেশের প্রায় সমস্ত কৃষক সংগঠন সংযুক্ত কৃষক মোর্চায় শামিল হন। তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে সেই লড়াই পরিচালিত হয়। ৬০০ জনের বেশি শহীদ হন। তারপর একদিন প্রধানমন্ত্রী আচমকাই ঘোষণা করেন তিন আইন প্রত্যাহার করা হলো। সরকার জানায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা না করে তা সংসদে পেশ করা হবে না। কৃষক আন্দোলন চলাকালীন যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হবে। সরকার তো আর রাস্তার লোক নয়, সেই জন্য সরকারের কথা শুনে কৃষকরা সাময়িক ভাবে আন্দোলন স্থগিত রেখেছিল। কৃষি আইন চালু করতে না দেওয়া ছিল ওই লড়াইয়ের বিরাট সাফল্য। কিন্তু ১৪ মাস কেটে গেছে। সরকার কোনও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এমএসপি নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য কোনও চিঠি দেয়নি। সরকার নিজেকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছে। প্রমাণ হয়েছে তারা কৃষক বিরোধী। কৃষকরা ক্ষুব্ধ। রাজ্যে রাজ্যে ট্রাক্টর মিছিল হয়েছে, বিক্ষোভ হয়েছে, হরিয়ানায় মহাপঞ্চায়েত হয়েছে। সোমবার রাজধানীর বুকে মহাপঞ্চায়েত থেকে নতুন আন্দোলনের শুরু হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে দর্শন পাল বলেন, ২০২৩ এবং ২০২৪ বড় আকারের কৃষক আন্দোলনের সাক্ষী থাকবে। কৃষকদের জ্বলন্ত সমস্যা সব রাজনৈতিক দলের ইশ্তেহারে অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা বাধ্য করব।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন উঠেছিল, আবার আগের মতো মাসের পর মাস রাজধানীর সীমান্ত অবরুদ্ধ হয়ে থাকবে কিনা। উত্তরে হান্নান মোল্লা বলেন, সেবারেও আমরা রামলীলা ময়দানেই সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। সরকার আমাদের অনুমতি দেয়নি। আমরা বলেছিলাম পুলিশ যেখানে থামাবে সেখানেই আমরা বসে পড়ব। তারা রামলীলায় আসতে দেয়নি, তাই আমরা দিল্লির সীমান্তে বসেছিলাম। যদি রামলীলা ময়দানে সেদিন আমাদের ঢুকতে দিত আমরা বিক্ষোভ দেখিয়ে ফিরে যেতাম। সরকার মূর্খের মতো বাধা দিয়েছিল বলেই প্রতিরোধ তীব্র আকার নিয়ে নেয়। দর্শন পাল বলেন, সোমবারের সমাবেশের জন্য যাঁরা আসছেন তাঁরা দিল্লিতে গুরদোয়ারা সহ কিছু জায়গায় থাকবেন। সেখান থেকে রামলীলা ময়দানের দিকে মিছিল করবেন। দিল্লি পুলিশের কাছে অনুরোধ করব এই মিছিলে হস্তক্ষেপ না করতে, শান্তিপূর্ণ ভাবে রামলীলা ময়দানে সমাবেশের দিকে মিছিল যেতে অনুমতি দিতে।
রবিবার সকালেই মোর্চার নেতারা সভায় বসেছিলেন। সেখানে তাঁরা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার তথাকথিত ‘উন্নয়নের’ অভিমুখ কর্পোরেট স্বার্থবাহী। কৃষকদের আয় কমছে, কৃষিজমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, কর্পোরেটের মুনাফার স্বার্থে অরণ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সরকার ২০২১-এর ৯ ডিসেম্বর লিখিত ভাবে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা রক্ষা করা হচ্ছে না। মোর্চার দাবি, সকল শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে। এমএসপি নিয়ে সরকার যে কমিটি গঠন করেছে এবং যে আলোচ্য বিষয় রেখেছে তা কৃষকদের স্বার্থের পরিপন্থী। এই কমিটি বাতিল করে কৃষকদের প্রতিনিধিদের রেখে নতুন কমিটি তৈরি করতে হবে। ৮০ শতাংশ কৃষক ঋণের দায়ে দেনাগ্রস্ত, কৃষিঋণ মকুব করতে হবে। বিদ্যৎ সংশোধনী বিল, ২০২২ জেপিসি-তে পাঠানো ঝবেছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। সরকার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোর্চার সঙ্গে আলোচনা না করে এই বিল সংসদে পেশ করা হবে না। একই সঙ্গে মোর্চা দাবি করেছে, কৃষির জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে, গ্রামীণ এলাকায় ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনা মাসুলে দিতে হবে। অকার্যকর, কার্যত পরিত্যক্ত প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার বদলে সর্বজনীন নতুন বিমা প্রকল্প চালু করতে হবে। সমস্ত কৃষক ও খেতমজুরের জন্য মাসিক ৫ হাজার টাকার পেনশন প্রকল্প চালু করতে হবে। লখিমপুর খেরিতে কৃষক হত্যায় মূল ষড়যন্ত্রকারী অজয় মিশ্রকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা থেকে বরখাস্ত করতে হবে।
Comments :0