খেলা দেখার আগেই আমি যা ভেবেছিলাম, সেটাই হলো ম্যাচে। দিদিয়ের দেঁশর ধুরন্ধর ট্যাকটিক্যাল ফুটবলেই বাজিমাত ফ্রান্সের। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আগে আত্মঘাতী গোল ছাড়া একটিও গোল হজম না করা মরক্কোর বিরুদ্ধে ২-০ গোলে জিতল ফ্রান্স। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। মরক্কো পিছিয়ে পড়ল একটা জায়গাতে, অভিজ্ঞতায়। ভালো খেললেও এত বড় ম্যাচের চাপ ধরে রাখতে পারেনি ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের ছেলেরা। চাপ ধরে রাখতে না পারার প্রমাণ হলো অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলা।
খেলার শুরুতে দু’দলই একে অপরকে মেপে নিচ্ছিল। নিজেদের মধ্যে পাস খেলছিল। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য। তার মধ্যেই দ্রুত গোল পেয়ে যায় ফ্রান্স। ম্যাচের ৫ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে রাফায়েল ভারানে ডিফেন্সের ফাঁক দিয়ে থ্রু বাড়ান গ্রিজম্যানের উদ্দেশে। তিনি বল পেতেই সময় নষ্ট না করে দিয়ে দেন এমবাপের কাছে। কিলিয়ান বল ধরতেই চার-পাঁচ ডিফেন্ডার তাঁকে ঘিরে ধরেন। ওই জটলার মধ্যে থেকে এমবাপে শট মারেন। তাঁর শটে যদিও গোল হয়নি। আমাদের সময় এরকম তিন চার ফুটবলার ঘাড়ে নিয়ে খেলতে পারত সুভাষ ভৌমিক। কোনও ফুটবলার যদি বিপক্ষের একাধিক ডিফেন্ডারকে ব্যস্ত রাখতে পারেন, তাহলে সুবিধে হয়ে যাওয়া অন্য ফুটবলারদের। যাঁরা ওই সময় বক্সের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকেন। এমবাপেকে যখন মরক্কোর ফুটবলাররা ঘিরে, তখন ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থিও। রিবাউন্ড বলটি থেকে থিও পা’টা অনেকটা উঁচুতে তুলে নিখুঁত প্লেসমেন্টে জালে জড়ান। থিও’র গোলটা দেখে মনে পড়ে গেল, আমি একবার এরকম জেসিটির গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে বল চাটা মেরেছিলাম।
তবে যাই হোক, গোল খেয়ে দমে যায়নি মরক্কো। বরঞ্চ ওরা বাড়তি উদ্যম নিয়ে খেলছিল। সুযোগ তৈরি করেও গোল করতে পারেননি। মরক্কোর লম্বা ডিফেন্ডারটি যে ব্যাক ভলিটি মারলেন, অসামান্য প্রয়াস ছিল। ফ্রান্সের গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচিয়ে দেন। আরেকবার বাঁ-দিক ঝাঁপিয়ে দূরপাল্লার একটি শট বাঁচাতে হয়েছিল লরিসকে। প্রথমার্ধে ব্যবধান বাড়িয়ে ফেলতে পারত ফ্রান্স। কাজে লাগাতে পারেননি জিরু।
দ্বিতীয়ার্ধেও ছন্দ ধরে রেখেছিল মরক্কো। প্রথম কুড়ি মিনিট মতো ভালো চেপে ধরেছিল মরক্কো। একবার দু’টি প্রচেষ্টা রুখে দেন রাফায়েল ভারানে ও ইব্রাহিমা কোনাতে মিলে। উপামেকামো খেলতে পারেননি, তাঁর জায়গায় কোনাতে ভরসা দিয়েছেন। ভারানের সঙ্গী হয়ে ফ্রান্সের ডিফেন্সকে জমাট রেখেছিলেন। মরক্কো গোলমুখ খুলতে না পারার একটি কারণ যদি হয় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা অর্থাৎ কখন বল ছাড়তে হবে, কখন বল দখলে রাখতে হবে বুঝে উঠতে পারেনি। অনেক সময় দেখা গিয়েছে, ফাইনাল পাস বাড়াতে দেরি করে ফেলেছে মরক্কো। অন্য কারণটি হলো, ফ্রান্সের দৃঢ় ডিফেন্স। ৬৫ মিনিটের পর ওয়ালিদের হঠাৎই দু’টি পরিবর্তন মরক্কোর খেলায় ছন্দ নষ্ট করে। তারপরও হামদুল্লাহ চেষ্টা করেছিলেন, স্কিল দেখিয়েছিলেন। তাঁর খেলা দেখে বোঝা গেল এই পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা কম। ডেম্বেলে এদিন ছন্দে ছিলেন না। দেশঁ ম্যাচ রিডিং এতটাই ভালো, তাঁর দু’টি পরিবর্তন আবারও প্রমাণ করল। ডেম্বেলেকে তুলে মাঠে নামান তরুণ মুয়ানিকে। নেমেই প্রথম টাচে গোল করে ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে ফ্রান্সের। শেষ দু’টি খেলায় আহামরি খেলেননি এমবাপে। অথচ সেমিফাইনালে দু’টি গোলের ক্ষেত্রে এমবাপের অবদান অনস্বীকার্য। বক্সের মধ্যে বল ধরেন চার-পাঁচ ডিফেন্ডারকে ইনসাইড-আউটসাইড মেরে পায়ের জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই গোলের ঠিকানা লেখা পাস বাড়িয়ে দেন। মুয়ানি সহজেই গোল করেন। পরপর দু’বার ফাইনালে গিয়ে ইতালি, ব্রাজিলের মতো তাঁদের সামনেও কাপ ধরে রাখার হাতছানি।
En Finale
অভিজ্ঞতার জোরেই ফ্রান্স ফের ফাইনালে
×
Comments :0