PM Modi

আক্রান্ত ইরানকেই উত্তেজনা প্রশমনের পরামর্শ মোদীর

জাতীয়

ইরানের উপরে আমেরিকার হামলার নিন্দা করতে পারলেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারতীয় সময় রবিবার ভোরে ইরানের তিন পরমাণু কেন্দ্রে হাজার হাজার টন বোমা ফেলেছেন মোদীর ‘ফ্রেন্ড’ ট্রাম্প। তার কিছু সময় পরে ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসৌদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সে কথা জানিয়ে নিজেই এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ইরানের রাষ্ট্রপতি পেজেশকিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছি। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি। অবিলম্বে উত্তেজনা প্রশমন, আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পথ বের করতে হবে আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য। 
একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ যে বারে বারে বলছে তার পরমাণু কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না। এমনকি ট্রাম্প সরকারও চলতি বছরের শুরুতেই জানিয়েছিল ইরান এমন কিছু করছে না। তারপরও ইরানের পারমানবিক কেন্দ্রের উপরে হামলার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা জানাতে পারলেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী! তাঁর বিবৃতিতে শুধুই ‘গভীর উদ্বেগ’, ‘সাম্প্রতিক উত্তেজনা’ শব্দবন্ধনী। কেন উত্তেজনা, কে হামলা করল সেটুকুও বলার হিম্মত জোটাতে পারেননি ‘বিশ্বগুরু’। 
কয়েকদিন আগেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে ডেকে ভোজ দিয়েছেন ট্রাম্প। তারপর ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। সেই পাকিস্তানও এদিন ইরানের উপর মার্কিন হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দা করেছে। যথেষ্ট কড়া শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে। 
সম্পূর্ণ একতরফা এবং বিনা প্ররোচনায় ইরানের উপরে হামলা চালায় ইজরায়েল। ইরানের পরমাণু কেন্দ্র ছাড়াও বিজ্ঞানী এবং সামরিক কর্তাদের হত্যা করেছে ইজরায়েল। এবার আমেরিকা সেই সংঘাতে ইজরায়েলের সঙ্গে যোগ দিয়ে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রের উপরে হামলা করল। কিছুদিন আগেই ইরানের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল আমেরিকা। তার মধ্যে এই হামলায় তো ট্রাম্পের ভূমিকা স্পষ্ট। তারপরে আক্রান্ত দেশকেই উত্তেজনা প্রশমনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি! বিনা প্ররোচনায় ইরানের উপরে হামলার দুই কুশীলব ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর এগারো বছরের শাসনে সখ্য বাড়িয়েছেন মোদী। পশ্চিম এশিয়া সম্পর্কে ভারতের চিরাচরিত অবস্থান থেকে সরে মার্কিন-ইজরায়েল অক্ষের মধ্যে নিয়ে ফেলেছেন ভারতকে। তাই এদিনও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইরানের উপরে মার্কিন হামলার নিন্দা করতে পারলেন না। যেমন লাগাতার প্যালেস্তাইনের উপরে ইজরায়েলের হামলা সম্পর্কেও নীরব আছেন। 
উল্লেখ্য, ভারতের বামপন্থী দলগুলি একযোগে এই হামলার নিন্দা করেছে। শনিবারই পশ্চিম এশিয়া সম্পর্কে মোদী সরকারের অবস্থানের কড়া সমালোচনা করে সোনিয়া গান্ধীর লেখা প্রতিবেদন একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি লেখেন, ইজরায়েল যেভাবে ইরানে হামলা চালিয়েছে সেটা ইরানের সার্বভৌমত্বে আঘাত। এটা বেআইনি, একতরফা এবং আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা। কংগ্রেস এই হামলার তীব্র ভাষায় নিন্দা করছে। মোদী সরকারের নিরপেক্ষ থাকার মৌন অবস্থানকে সরাসরি ‘নীতি বিরুদ্ধ’ এবং ‘কাপুরুষোচিত’ বলে আক্রমণ করেন তিনি। ভারতের সঙ্গে ইরানের পুরানো বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ টেনে সোনিয়া বলেছেন, শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, ইরানের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক যোগও রয়েছে। অতীতে একাধিকবার কাশ্মীর ইস্যুতে রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান। এ কারণেই মোদী সরকারের উচিত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরব হওয়ার। তারপরেও মোদী এদিন আক্রান্তকেই উত্তেজনা প্রশমনের পরামর্শ দিয়েছেন।

Comments :0

Login to leave a comment