ছিল ৯৭,৮০৮ কোটি টাকা প্রায়। তা এগারো মাসের মধ্যে মাত্র ৭০০০ কোটি টাকায় নেমে এল কী করে? মুখ্যমন্ত্রীর দু’দিন ধরনা কর্মসূচি ঘোষনার পর এই প্রশ্ন প্রশাসনের অনেক মহলেই।
প্রশ্নের কি শেষ আছে? আরও আছে।
আগামী ৩১ মার্চ আর্থিক বর্ষ শেষ। তার আগের দু’দিন ধরনা দেবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় একটি বছর ছেড়ে দিয়ে হঠাৎ এখন, আর্থিক বছর শেষ হওয়ার মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনা কর্মসূচি কেন?
ঠিক ওই দু’দিন কেন বেছে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী? তা নিয়ে নানা ধন্দ দেখা দিয়েছে। জড়ো হয়েছে সন্দেহ।
প্রশ্ন উঠেছে, মমতা ব্যানার্জির সরকার এক বছরে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (এনজিও)-কে দিয়েছে ২৭,০৪৮ কোটি টাকা। এই এনজিওগুলির বড় অংশই তৃণমূলের নেতা, নেত্রীদের নামে বেনামে পরিচালিত বলেই আশঙ্কা। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই বিপুল পরিমাণ টাকা এনজিও-দের দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিএজি-ও। সেই বছরই, যখন এনজিও পাচ্ছে ২৭,০৪৮ কোটি টাকা, রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলিকে মমতা ব্যানার্জি দিয়েছেন মাত্র ১১,২৮৫ কোটি টাকা।
সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী গ্রামোন্নয়নের ৭০০০ কোটি টাকা বকেয়ার জন্য দু’দিনের ধরনায় বসতে যাচ্ছেন কেন?
কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের কাজ সহ নানা প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না বলেই এবার ধরনা — মমতা ব্যানার্জি মঙ্গলবার ওডিশা যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে তা জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না, মমতা ব্যানার্জির এই দাবি অনেক দিনের। মঙ্গলবার মমতা ব্যানার্জি দাবি করেছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের বকেয়ার পরিমাণ ৭ হাজার কোটি টাকা। এই টাকার মধ্যে গত আর্থিক বছরের হিসাবও আছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০-র নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে জানিয়েছিলেন, রাজ্যের বকেয়া ৪৯ হাজার কোটির বেশি টাকা। কিন্তু তখন তিনি ধরনায় বসেননি। সেখানেই শেষ নয়। গতবছর, অর্থাৎ ২০২২-র ৩০ এপ্রিল রাজ্য সরকার এবং শাসক দল তৃণমূল আলাদা করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কত বকেয়া তার হিসাব পেশ করেছিল। তখন বলা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের মোট বকেয়া ৯৭,৮০৭ কোটি টাকা। সেই বকেয়া উদ্ধারের জন্যও মমতা ব্যানার্জি ধরনায় বসেননি।
এগারো মাসের মধ্যে রাজ্যের বকেয়া প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা কমে গেল কী করে? বিজেপি-ও এই নিয়ে কোনও প্রশ্ন করছে না।
এই ধরনা কি তৃণমূল নেত্রীর আর একটি গিমিক? স্টান্ট? এই প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষত ধরনার এই বিস্ময়কর দিন নির্বাচনের পরে।
দুটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে প্রশাসন এবং তৃণমূলের মধ্যে। প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রী ধরনায় থাকাকালীনই নরেন্দ্র মোদী একশো দিন সহ কয়েকটি প্রকল্পের একাংশ টাকা ছাড়তে পারেন। কিন্তু এই প্রশ্নে রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়,‘‘ওই সময়ে টাকা ছেড়ে তা একদিনের মধ্যে খরচ করা, কিংবা খরচের উদ্যোগ নেওয়া প্রায় অসম্ভব। অন্তত একশো দিনের কাজে অসম্ভব বটেই। কারণ চলতি আর্থিক বছরের জন্য রাজ্যের কোনও লেবার বাজেটই অনুমোদন পায়নি। এই পরিস্থিতিতে কোনও কাজে টাকা দেওয়া যাবে, আর কোনটায় যাবে না, তাই স্পষ্ট নয়। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর ধরনায় বসার ৪৮ঘণ্টার মধ্যে, কিংবা আগে কেন্দ্রের টাকা দেওয়ার সম্ভাবনা কম।’’ আর একটি কারণও আছে। রাজ্যে সমীক্ষা করতে এসে কেন্দ্রের প্রতিনিধিদল যে ত্রুটিগুলি শুধরানোর নির্দেশ দিয়েছিল জেলাগুলিকে, তার অনেক কিছুই এখনও প্রশাসন করতে পারেনি। শুধু মাত্র পঞ্চায়েতের কয়েকজন কর্মী এবং অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কয়েকটি জেলা। এই পরিস্থিতিতে একশো দিনের প্রকল্পের টাকা আর্থিক বছর শেষ হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক রিলিজ করলে নতুন বিতর্ক দেখা দেবে।
যা কেন্দ্রীয় সরকার চাইবে না। বিজেপি-ও চাইছে না।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই অঙ্ক অনেকটাই স্পষ্ট। তাহলে তাঁর দু’দিনের ধরনা কেন?
মুখ্যমন্ত্রী যখন আম্বেদকারের মূর্তির নিচে ধরনা দেবেন, তখন কয়লা, বালিসহ দুর্নীতির তদন্তগুলির ক্ষেত্রে কোনও উল্লেখযোগ্য কোনও ঘটনা ঘটবে? অনুব্রত তিহার জেলে। পার্থ চ্যাটার্জি জেলে। জেলে মানিক ভট্টাচার্যের মতো বিধায়ক। জেলে শান্তনু ব্যানার্জি, অয়ন শীল, কুন্তল ঘোষের মতো বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা। ইতিমধ্যেই এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) ডাক দিয়েছে রাজ্যের আইন মন্ত্রী মলয় ঘটককে।
কবে ডাক পেয়েছেন মমতা ব্যানার্জির সরকারের আইনমন্ত্রী? সেই ২৯মার্চ— ধরনা শুরুর দিন!
Mamata Banerjee dharna
২৭ হাজার কোটি এনজিও-কে দেওয়া মুখ্যমন্ত্রী ৭ হাজার কোটির জন্য ধরনায়!
×
Comments :0