মহামারীর সময় বামপন্থীরা যে দায়বদ্ধতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেই দায়বদ্ধতা নিয়েই দাঙ্গাবাজ আর লুটেরাদের হাত থেকে রাজ্য বাঁচানোর লড়াই চালিয়ে যাবে বামপন্থীরা। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে এক বিরাট সমাবেশে একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, কোভিড মহামারীর সময় সরকারের দেখা মেলেনি। তখন যে বামপন্থীরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে মরণাপন্ন মানুষকে বাঁচাতে ছুটেছিল, বাংলাকে রাজনৈতিকভাবে রক্ষা করতেও তারাই লড়াই চালিয়ে যাবে। আমরা বামপন্থীরা গ্রামে গ্রামে, শহরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রতিরোধের আন্দোলন গড়ে তুলবো, যাতে দাঙ্গাবাজ বিজেপি এবং তোলাবাজ তৃণমূল পায়ের তলায় মাটি না পায়। এই লড়াইয়ে মানুষের ঐক্য গড়ে তুলবে লাল ঝান্ডাই। বাংলার মানুষকে জাত-পাত-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা নির্বিশেষে এককাট্টা করতে হবে।
সিপিআই(এম)’র দুর্গাপুর পূর্ব ১, ২ এবং ৩ নম্বর এরিয়া কমিটির যৌথ আহ্বানে মাসাধিককাল নিবিড় প্রচার শেষে এদিন এই জনসমাবেশ হয় বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা এইচএফসি সংলগ্ন নাসির অ্যাভেনিউ জুড়ে। মানুষের সমাগমে রাস্তা উপচে ভিড় ছড়িয়ে পড়ে সভাস্থলের চারপাশেও। মুচিপাড়া পর্যন্ত মাইকের ব্যবস্থা ছিল। বহু মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেলিমের বক্তব্য শোনেন। সমাবেশে তিনি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি, পার্টিনেতা পঙ্কজ রায় সরকার। সভাপতিত্ব করেন সিদ্ধার্থ বসু। লুটেরাদের হাত থেকে শিল্প শহর দুর্গাপুরকে রক্ষা করো, অবিলম্বে দুর্গাপুর পৌর কর্পোরেশনের নির্বাচন চাই— এই দাবিতেই এদিন সোচ্চার ছিলেন মানুষ। পাঁচ দফা দাবিতে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বাড়িতে গিয়ে প্রচার চালানো হয়েছিল। সমাবেশ সফল করে তোলার জন্য স্থানীয় মানুষই অর্থ সাহায্য করেছেন। এদিনের সভায় মহিলা এবং যুবকদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া।
সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেন, তিল তিল করে গড়ে ওঠা রাজ্যটাকে লুটের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত করেছে নরেন্দ্র মোদী ও মমতা ব্যানার্জির দুই সরকার।
মানুষের বিপদ বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। দুই সরকারই মানুষকে ধাপ্পা দিয়ে লুট করেছে। করোনাকালে মানুষকে যমের দুয়ারে ঠেলে দিয়ে এখন দুয়ারে সরকার দেখানো হচ্ছে! পিএম কেয়ারের কোটি কোটি টাকা বেআইনিভাবে ব্যবহার করে দেশবাসীকে ভাঁওতা দেওয়া হয়েছে। যোগীর রাজ্য উত্তর প্রদেশে মানুষ মরার পরে শ্মশান পায়নি, গঙ্গায় লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরাজ্যেও কিটস, মাস্ক, ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। কেন্দ্র আর রাজ্য মিলে একদিকে রেশন বরাদ্দ ছাঁটাই করছে, অন্যদিকে বলছে খাদ্য সুরক্ষা করে দিয়েছি! তৃণমূল সরকার এখন আবার ‘রক্ষাকবচ’ এনেছে! কার রক্ষাকবচ? চন্দন কাঠ, সোনা পাচার, কয়লা পাচারে পরিবার নিয়ে ফেঁসে আছে ভাইপো। দুবাই, ব্যাঙ্কক, লন্ডন সব হিসাব আছে, সেই ফাইল দেখাচ্ছে অমিত শাহ। আর মমতা ব্যানার্জি বলছেন, দাদা পায়ে পড়ি রে।
সমাবেশ থেকে সেলিম তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। পঞ্চায়েত থেকে নবান্ন, মানুষ দুর্নীতির হিসাব চাইছেন। নেতা-মন্ত্রীদের বুক ধড়ফড় করছে। এদের পাশে থেকে মানুষকে আক্রমণ করলে কেউ রেহাই পাবেন না। মানুষ খেপে গেলে কী হতে পারে পিংলা, মুর্শিদাবাদ তার উদাহরণ। পুলিশের অফিসারদের একাংশও তৃণমূলের সঙ্গে দুর্নীতিতে যুক্ত। কিন্তু যারা এখনও সৎ রয়েছেন তাঁরা তৃণমূলের অপরাধের শরিক হবেন না, সরে দাঁড়ান। নইলে গোটা পুলিশবাহিনীর বদনাম হবে, চোরেদের না ধরে তাদের রক্ষা করলে মানুষের চোখে পুলিশও ভিলেন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, তৃণমূলের চোরেদের পাহারা দিচ্ছে রাজ্য পুলিশ, আর বিজেপি’র চোরেদের পাহারা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় পুলিশ। কিন্তু চুরির টাকায় লাল ঝান্ডা তৈরি হয়নি, তারা চোরেদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সেই জন্যই তৃণমূল এবং বিজেপি’র নেতাদের ঘুম উবে গেছে, ওরা এখন সকাল-বিকেল লাল ঝান্ডা দেখতে পাচ্ছে। সমাবেশে গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি এবং পঙ্কজ রায় সরকার দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল বাঁচানোর ডাক দিয়েছেন। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার যেভাবে শিল্প ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে তার বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
Comments :0