অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়
অশোকনগরে বাণিজ্যিক তেল-গ্যাস উৎপাদন করার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল ওএনজিসি। ফের আশার আলো দেখা যাচ্ছে অশোকনগরের কাছেই গাইঘাটায়। সেখানে জোরদার চলছে তৈল অনুসন্ধানের কাজ। বনগাঁর চাঁদপাড়ায় ক্যাম্প অফিস গড়ে ফিল্ড পর্যবেক্ষণের কাজ চালাচ্ছে অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি)’র আধিকারিকরা। গাইঘাটার ডুমা পঞ্চায়েত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে ওই অনুসন্ধান।
আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও এই অনুসন্ধানের কথা জানায়নি ওএনজিসি। তবে এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, জানুয়ারি পড়তেই অনুসন্ধান বেশ জোর কদমে শুরু হয়েছে। সে সব মাঠে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে সেখানে করা হয়েছে সর্ষে চাষ। মাঘ মাসে ওই সর্ষে তোলার সময়। তারই মধ্যে দিয়ে সর্ষে গাছ মাড়িয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন অনুসন্ধানকারীরা। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি অশোকনগরে বাণিজ্যিকভাবে তেল, গ্যাসের উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা। তাই এবছরের মধ্যে গাইঘাটার জ্বালানি অনুসন্ধানের কাজ শেষ করতে পারলে তা রাজ্যের জ্বালানি ভাণ্ডার মানচিত্রের ক্ষেত্রকে বাড়িয়ে দেবে। সেই লক্ষ্যে জোরদার করা হয়েছে খননের কাজ।
গাইঘাটার ডুমা পঞ্চায়েতের বিস্তর এলাকায় প্রতিদিন যন্ত্র দিয়ে মাঠে মাঠে গর্ত করার কাজ চলছে। মাঠের ওপর সর্ষে খেতের ওপর দিয়েই পাতানো হয়েছে লাল রঙের কেবল তার। মাঠে মাঠে রীতিমতো জাল বিস্তার করেছে ওই তার। বিঘা প্রতি একটি বা দুটি গর্ত খুঁড়ে সেখানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেখা হচ্ছে মাটির নিচের জ্বালানি ভাণ্ডারে পরিসর। কখন চার বর্গফুট, কখন পাঁচ বর্গফুট মাটি খুঁড়ে মেশিনের মাধ্যমে লোহার পাইপ বসানো হচ্ছে। ওই পাইপের মধ্যে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে তা দূর থেকে ফাটানো হচ্ছে।
জোরালো সেই বিস্ফোরণে মাঝেমধ্যেই কেঁপে উঠছে গোটা মাঠ। মাঠের পাশ দিয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় যাত্রীরা সেই শব্দ পাচ্ছেন।
কর্মরত ঠিকাদারের কর্মীরা জানাচ্ছেন, মাটির নিচে ১২০ ফুট গর্ত করা হচ্ছে। যেখানে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে, তার কাছে মাটিতে পোঁতা হচ্ছে লম্বা অ্যান্টেনা। ওই অ্যান্টেনা দিয়ে চলছে তথ্য সংগ্রহের কাজ। ওই সব তথ্যকে সংগ্রহ করে পরে তা বিশ্লেষণের কাজটি করছেন ওএনজিসি’র বিশেষজ্ঞরা। এই কাজের জন্য যশোর রোডে আনা হয়েছে বড় বড় বীক্ষণ যন্ত্র। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য ভাণ্ডারকে চূড়ান্ত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে চাঁদপাড়ার ক্যাম্প অফিসে বলে এলাকা সূত্রে জানা যাচ্ছে। মাঠের সর্ষে চাষ নষ্ট করে চার বর্গফুট জমিতে গর্ত করার ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৩০০ টাকা। সামান্য কটা টাকা হলেও এই কাজে এলাকার কৃষিজীবী মানুষের উৎসাহের শেষ নেই।
অশোকনগরের মতো এখানেও তেল-গ্যাস মিলতে পারে এই আশায় বুক বেঁধেছে বড়সেহেনা ও মণ্ডল পাড়া গ্রামের মানুষজন।
বিভূতিভূষণ রেল স্টেশন লাগোয়া ওই এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি বিদ্যুতের অভাবে ওই এলাকার কৃষিজীবী মানুষরা জলসেচ করতে পারতেন না। গরমে ফসল প্রায় ফলানো যেতো না। ষোলো বছরের প্রতীক্ষার পর বড়সেহেনা গ্রামে ইলেকট্রিক এসেছে। এবছর গরমের ধান ফলাতে পারবেন কৃষকরা। চাষে তেমন রমরমা না হওয়ায় এলাকার মানুষকে বছরের পর বছর পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে যেতে হতো। জৈব জ্বালানি অনুসন্ধান শুরু হতেই এলাকার মানুষরা তাই অত্যন্ত উৎসাহী। ফসলের ক্ষতিকে উপেক্ষা করে তাঁরা অনুসন্ধান দলকে সাধ্যমতো সাহায্য করে চলেছেন। যদি তৈল ভাণ্ডার মেলে, তাহলে ওই এলাকার মানুষদের ভবিষ্যৎ পালটে যাবে।
Comments :0