STORY / MAYURI MITRA / ABAR ASIBA / MUKTADHARA / 3 AUGHST 2025 / 3rd YEAR

গল্প / ময়ূরী মিত্র / আবার আসিব / মুক্তধারা / ৩ আগস্ট ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

STORY  MAYURI MITRA  ABAR ASIBA  MUKTADHARA  3 AUGHST 2025  3rd YEAR

গল্প / মুক্তধারা , বর্ষ ৩

আবার আসিব 

ময়ূরী মিত্র


ভিখিরি হয়েই জন্মেছে বাপ ও বাপের মেয়ে ৷ রোজ তারা ভিক্ষের চাল ডাল উনুনে ফোটায় ৷ অনেকটা জল দেয় - শিলনোড়া কাঁচা হলুদ ও কাঁচা লঙ্কা বেটে  ফুটন্ত জলে দেয় এবং খিচুড়ি হয়ে গেল বলে খুশি হয় ৷ চাল ডালের পরিমাণ কম তো ! খিচুড়ির জলটা একটু ঝাল ঝাল হলে বেশি খাবার ইচ্ছেটাও চলে যায় ৷ আবার জিভেও তার আসে ৷ 

          

গঞ্জের ধারে ভিখিরি  হয়ে থাকতে থাকতে কম খাওয়ার এই পদ্ধতিটা মেয়ে আবিষ্কার করেছে ৷  অবশ্য আবিষ্কারের সুখ সে পায় না ৷ প্রচণ্ড তরল খিচুড়ি উনুন থেকে  নামতেই একটা থালা আর একটা বাটির মধ্যে বড্ড ঝগড়া বেঁধে যায় ৷  থালা বাপের -- থালায় ছড়িয়ে খেতে সুবিধে হবে বলে মেয়েই বাপকে থালাটা দিয়েছে ৷ কিন্তু বাপ কি বুঝবে তা ! পুরো খিচুড়ি ঢেলে দেয় পাতে ৷ মেয়ের বাটি ফাঁকা ৷ যুবতী মেয়ের পেট খিদের খাপরা হয়ে থাকলে সংসারের যে অকল্যাণ হয় তা কি বোঝে বাপটা ! রাস্তায় গড়া হলেও  বাপ মেয়ের মাঝের এই চারকোণা  জায়গাটুকু সংসারই তো বটে ! কথায় আছে - শিল উনুন যেখানে সংসার সেখানে ৷ 

            

 ভাদ্রের আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে এই ছড়াটাই আওড়াচ্ছিল মেয়ে ৷ বাপের পায়ে ব্যান্ডেজ ৷ সাদা ব্যান্ডেজের গা বেয়ে টাটকা রক্ত ৷ দুপুরের ঠা ঠা রোদ বাপের  রক্তপা ভালো করে  দেখছিল  ৷ বাপের সঙ্গে ঝগড়াটা আজ একটু বেশি হয়ে গেছে গো ৷ আসলে ভিখিরীর সংসারে চাল যেমন মাপা -ঝগড়াও পরিমিতি রেখে ৷ ভাষা মাকড়সার রসের মতো ৷ -কিন্তু সময় বাঁধা থাকে ৷ একটা সময় বাটি থালা গায়ে গা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে যায় ৷ বাড়তি খাবার ভিখিরির সংসারে বেশি ঝামেলা পাকায় ৷ না খাওয়ার সু -অভ্যেস নষ্ট হয়ে যায় যে ৷ আকাশের বদলে মন ছাদ চায় ৷বাটির সঙ্গে জল খাবার মাজা ঘটি লাগে ৷

                 

কদিন ধরে ওই বাড়তিতেই মজে যাচ্ছিল মেয়েটা ৷ পাঁঠার দোকানের মেজ ছেলে পৈতৃক দোকান ছেড়ে নতুন লাল সিমেন্টের মেঝেতে মাংস টুকরো করে ৷ বেশ কটা টুকরো আজ মেয়েটাকে দিয়ে বলেছিল --যা বাপ লুকিয়ে আলাদা করে চচ্চড়ি করে খাগে যা ৷ গত্তি ছাড়া মেয়েমানুষের শরীর মানায় না ৷ মেয়েটা তবু হাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৷ কদিন ধরেই নতুন দোকান খুলে মেজোটা পাঁঠার এটা সেটা দিচ্ছে তাকে ৷ আজ দেখল --দুটো মেটে একটা বিচিও দিয়ে দিয়েছে ৷ মেজো কসাই তাড়া দিল --যা যা আর দাঁড়াস না ৷ কাস্টমার আসছে ৷ তো সেই মাংস ছোট আলুর টুকরো দিয়ে জুতিয়ে রাঁধার পর যখন খেতে যাচ্ছে ,চুলের মুঠি ধরে কী মার মারল বাপটা ! নিজের ভাগের খিচুড়ি পুরো খেল ৷ তারপর মেয়ের মাংসে টান দিল ৷ ব্যাস সব মাটিতে  ৷ কুকুর চাটতে লাগল ঝোল মেটে ৷ বাপ পা দিয়ে পিসগুলো সরাবার চেষ্টা করাতে দিল কামড় ৷ গঞ্জের  ডাক্তারের কাছে  ব্যাণ্ডেজ করিয়ে নিয়ে এই ফিরেছে বাপ মেয়ে  ৷ ডাক্তারের পয়সা বাকি ৷ মেজো কসাই মেয়েকে মাংস দিলেও বাপের ব্যান্ডেজের  টাকা কিছুতে দেবে না ৷ চাইতে অবশ্য মেয়ে গিয়েছিল ৷ কাস্টমারের সামনে এমন  খেঁকিয়ে উঠল ! তারও তো নতুন দোকান ! তাড়াতাড়ি লাভের মুখ মেজ কসাইকে দেখতেই হবে ! 


                       

ওঠ - সন্ধে হল ৷ ওঠ রে ---

ঘুম ভেঙে গেল মেয়ের ৷ বাপ রে ! না খেয়ে এত ঘুমিয়েছে সে ৷ ওই কষা মাংস খেলে অবশ্য ঘুমোতে হত না ৷ ঢেকুর তুলতে হত নাহয় হাগতে যাও বার বার ৷ 


আবার বলল বাপ --

ওঠ ! ভাদ্রের দুপুর হুট করে বন্ধ হয়ে সন্ধে নামে ৷ গাঁয়ে আমার ঠাকুমা বলত - ভাদ্রের দুপুরে হঠাৎ তালা পড়ে যায় ৷ দিনের ভিন্ন সময়ের ভিন্ন ভিন্ন দরজা আছে কিনা !  ওরে ওঠ ৷ গঞ্জের বাজারের আলো কমবে এবার ৷ চ চ -- তাড়াতাড়ি খেয়ে নি ৷ আমি ফ্যানভাত করেছি ৷ বাটি নিয়ে বসে যা ৷


ভাদ্রের চাঁদে খেতে বসেছে বাপ মেয়ে ৷

বাপের ব্যান্ডেজের রঙ এখন পানের খয়ের ৷

জলওয়ালা ভাত জলের মতো সুড়ুত করে টেনে মেয়ে বলে ---


বাপ --ও বাপ --তোমার ঠাকুমার রান্নাঘরে  কী কী বাসন ছিল গো বাপ ?  আচ্ছা বাপ সে  পান খেত ? 


বাপ আর এক হাতা জোলো ভাত দিল ৷ এহে ! শুধু জল !  ফ্যানও হতে পারেনি ৷ এত জল ফ্যান হতে আগুন লাগে অনেক ৷ 


মেয়ের বাটির ভাতে খেয়াল নেই ৷ তবে বাটির সঙ্গে কথা বলে  চলেছে মেয়ে  -- হ্যাঁ হ্যাঁ বুড়ি মানুষ যখন পান তো খাবেই ৷ তা ওই পানের ডাব্বায়  জাঁতি ছিল ? --যেটা দিয়ে  অল্প মাংস   কুচ কুচ কেটে  অনেকটা কিমা বানানো যায় ? ---মেটেগুলো  কুচো সুপুরি করে ফেলা যায় ! ছিল বাপ ? 


বাপ দেখল -মেয়েটা দুই আঙ্গুল কাঁচির মতো করে চাঁদের নীচে ধরেছে  ৷ 


ও মেয়ে কী কাটিস ? কাটছিস কী ? 


চাঁদের আলো বাড়ছে ৷

গঞ্জের আলো জ্বললেও  বোঝা যাচ্ছে না ৷ 

চাঁদের কলঙ্ক যেমন -অন্য আলো ঢেকে দেওয়ার মহিমাও তেমন !


ও বাপ .......!

Comments :0

Login to leave a comment