রবিবার সকালে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সিকিমে পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান গোপীনাথ মাকুড়ের(৩৩) শেষ কৃত্যে সম্পন্ন হল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার ভালুকা গ্রামে। তাঁর বাবা, মা, স্ত্রী, দুই ভাই ও পরিবারের অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে হাজারো মানুষ চোখের জলে গোপীনাথ মাকুড়কে শেষ বিদায় জানালেন।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার সকাল ৮টায় সিকিমে লাচেন সেনাছাউনি থেকে আর একটি জায়গায় বদলির নির্দেশ পেয়ে যাওয়ার সময় ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি সেনা কনভয়ের একটি কনভয়ের টায়ার ফেটে যাওয়ার ফলে সেটি উল্টে যায়। ঘটনাটি ঘটে জেমা এলাকায়। এই দুর্ঘটনায় ১৬জন সেনা প্রাণ হারান। গাড়িতে ২০ জন ছিলেন তার মধ্যে ৪ জন গুরুতরভাবে আহত হয়ে আছেন বলে সেনাসূত্রে জানানো হয়।
ঘটনা হল একেবারে প্রান্তিক কৃষক গোপীনাথ মাকুড়ের বাড়ি বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ অঞ্চলের ভালুকা গ্রামে। তার সেনাবাহিনীতে কর্মজীবন শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষ হওয়ার পরও সেই তিনবছর বর্ধিত কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী এক ছেলে ও দুই ভাই। তাঁর স্ত্রী মল্লিকা মাকুড় রবিবার জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। তার পরের দিন এই দুর্ঘটনার খবর পান তাঁরা। ছেলে সোহাম পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র। বাঁকুড়া শহরে তাঁরা একটি বাড়িও বানিয়েছেন। আগামী নতুন বছরেই সেখানে গৃহপ্রবেশের পরিকল্পনা ছিল।
সব কিছুই আমাদের তছনছ হয়ে গেল। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী মল্লিকা। গোপীনাথ মাকুড়ের বাবা মধুসূদন মাকুড় জানান, তাঁর সন্তান শুধু তাঁর একার নন, সারা দেশের সন্তান গোপীনাথ। তিনি বুক ফাটা যন্ত্রণা নিয়েই বলতে চান দেশের জন্য তাঁর ছেলে জীবন দিয়েছে। তার জন্য গর্ববোধ করি আমি। মা যমুনা মাকুড়ের মুখে কোন কথা নেই। বোবা কান্নায় তিনি বধির হয়ে বসেছিলেন। এদিন সকালেই বাঁকুড়ার জেলাশাসক রাধিকা আয়ার, বিষ্ণুপুরের এস ডি পিও কুতুবুদ্দিন খাঁ ও উচ্চপদস্থ পুলিশ ও প্রশাসনের অন্যান্য অংশের আধিকারিকরা ভালুকা গ্রামে আসেন। এই ঘটনার খবর দুদিন আগেই এলাকায় পৌঁছানোর ফলে কাতারে কাতারে মানুষ সকাল থেকেই গ্রামে আসতে থাকেন। গোপীনাথ তাঁদের খুবই আপনজন ছিলেন। অত্যন্ত মিশুকে ছেলে হিসাবে তাঁর পরিচিতি ছিল। এরকম দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু বহু মানুষকে কাঁদিয়ে দিয়েছে। সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে এদিন তাঁর মরদেহের কফিন আসার পর মানুষের ভিড় আরও বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গান সেলুট দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিদায় দেওয়া হয়।
Comments :0