Modi Trump

আত্মমর্যাদাহীন

সম্পাদকীয় বিভাগ

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)’র বিবেচনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা অ‍‌তি দক্ষিণপন্থী তথা নয়া ফ্যাসিবাদী শক্তির অংশ ভারতের মোদী সরকার এবং তার পরিচালক আর এসএস-বিজেপি। এই মূল্যায়নেরই স্বীকৃতি মিলেছে ইতালির নয়া ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। বর্তমান বিশ্বে রক্ষণশীল, অতি দক্ষিণপন্থী ও নয়া ফ্যাসিবাদী রাজনীতির যে নয়া ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে হাতে হাত মিলিয়েছেন তাদের অন্যতম একজন হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর না‍ম উল্লেখ করেছেন মেলোনি। তিনি নিজে ছাড়া অন্য আরও দু’জন হলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি জাভিয়ের মিলেই। বস্তুত এই চার রাষ্ট্রপ্রধানই নাকি বর্তমান নয়া ফ্যাসিবাদী বিশ্বে চার প্রধান স্তম্ভ। ওয়াশিংটনে আয়োজিত ‘কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে’ ট্রাম্পের পাশাপাশি মেলোনিও ভাষণ দিয়েছেন। সেই ভাষণে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। রক্ষণশীল অতি দক্ষিণপন্থী নীতির জয়ধ্বজা উড়িয়ে বামপন্থার বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছেন। মেলোনির ভাষণ এবং ট্রাম্পের উদ্যোগে অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির প্রসারে এমন সম্মেলনের আয়োজন থেকে স্পষ্ট বিশ্বের দেশে দেশে স্বতন্ত্র বা বিচ্ছিন্নভাবে অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির বিকাশে আটকে নেই। তারা নিজেদের মধ্যে মেলবন্ধন করে নয়া ফ্যাসিবাদী বিশ্ব মঞ্চ গড়তে চাইছে। তার জন্য সর্বাগ্রে যেটা জরুরি, বামপন্থাকে আক্রমণ করছে। তারা চাইছে পুঁজিবাদের উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নির্মূল করে নয়া ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করতে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো মেলোনির মোদী স্তুতি এবং ট্রাম্পের আমেরিকা ও মোদীর ভারতকে এক করে দেখাতে মোদীদের কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। এমনকি ইন্দো-মার্কিন পণ্য আমদানি-রপ্তানি নিয়ে ক্রমাগত ভারতের বিরুদ্ধে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে গেলেও ভারতের মোদী নীরবে সব হজম করে যাচ্ছেন। ভারতকে বিশ্বের সর্বোচ্চ হারে শুল্ক চাপানো দেশ হিসাবে মন্তব্য করে তিনি হুঙ্কার দিয়েছেন মার্কিন পণ্যে ভারত যে হারে শুল্ক চাপাবে আমেরিকাও সেই হারে ভারতীয় পণ্যে শুল্ক চাপাবে। বেশি শুল্ক চাপিয়ে ভারত একতরফা বা‍ণিজ্যের উদ্বৃত্ত করে যাবে সেটা চলবে না। ভারতের সুবিধার জন্য আমেরিকার স্বার্থহানি করা যাবে না।
ইদানীং ভারতের বিভিন্ন প্রকল্পে বিশেষ করে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিপুল মার্কিন অনুদান (ইউএস এইড) নিয়েও ট্রাম্প প্রবল ক্ষুব্ধ। কয়েকদিন আগে ভারতে ইউএস এইড-র অনুদান পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভারতের নির্বাচনে ভোটের হার বাড়ানোর জন্য ২১০ লক্ষ ডলার মার্কিন অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে ট্রাম্প বার বার বলছেন। ওয়াশিংটন রক্ষণশীল রাজনীতির সম্মেলনে বলেছেন ভারত তাদের নির্বাচনে ১৮০ লক্ষ ডলার মার্কিন অর্থের সুবিধা নিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো কি বাণিজ্য শুল্ক কি নির্বাচনে মার্কিন অনুদান নিয়ে ট্রাম্প বার বার আক্রমণ করে গেলেও মোদী সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। স্বয়ং মোদী তো বোবা হয়ে বসে আছেন। আসলে ট্রাম্পকে মোদীদের ভীষণ দরকার। তাই ট্রাম্পের হুমকি-অপমান সহ্য করতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। নয়া ফ্যাসিবাদী রাজনীতির অবিচ্ছিন্ন অংশ হিসাবে ট্রাম্প-মোলোনিদের সঙ্গে যে মোদীদের থাকতেই হবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment