‘‘বিজেপি তৃণমূল কেউই চায় না পঞ্চায়েত নির্বাচন সময়ে হোক। এদের লক্ষ্য লোকসভা নির্বাচনের সময় এক সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট করানো। হলদিয়া ও দুর্গাপুর পৌরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও নির্বাচন হয়নি। আসলে এই দু’টি দল গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে না।’’ বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে এই প্রতিক্রিয়া দেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য এবং রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
বৃহস্পতিবার জল পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের দশম সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশ হয়েছে হলদিয়ায়। বুধবার থেকে শুরু হয়ে এই সম্মেলন এদিনই শেষ হয়েছে। সম্মেলন শেষে হলদিয়ার টাউনশিপ এলাকায় সমাবেশ হয়। বক্তব্য রাখেন সিআইডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন, গণআন্দোলনের নেতা রবীন দেব, সিআইটিইউ রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জি, জলপথ পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক টি নরেন্দ্র রাও, সমর মণ্ডল, বিমান মিস্ত্রিও। সভাপতিত্ব করেন সিডি নন্দকুমার। মঞ্চে ছিলেন গণ আন্দোলনের নেতা হিমাংশু দাস, ইব্রাহিম আলি, সুব্রত পন্ডা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।.
সমাবেশে সেলিম বলেন, ‘‘আধুনিক শহরের উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। দেশের অর্থনীতির মূল ক্ষেত্র বন্দর। সমস্ত মুনাফা দেশের কোষাগারে আসে। সেইরকম অর্থনীতির চালিকাশক্তি বন্দরকে ব্যক্তি মালিকানায় বিক্রির লক্ষ্য নিয়েছে দেশের বিজেপি সরকার।’’
সেলিম বলেন, ‘‘দেশের প্রতিটি বন্দর সহ রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলিকে রক্ষা করার তাগিদ একমাত্র বামপন্থীদের আছে। দেশের প্রতিটি বন্দরের নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং’-র জন্য বামপন্থী সাংসদরাই দাবি করেছিলেন সংসদে। কলকাতা বন্দরকে আধুনিক চেহারা দেওয়ার কারিগর বামপন্থীরা।" তিনি বলেন যে কলকাতা বন্দরকেও বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার দিকে এগচ্ছে বিজেপি সরকার। আবার আদানির সঙ্গে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে নবান্নে।
সেলিম বলেন, ‘‘তাজপুরে নতুন বন্দর আদানিকে বরাত দেওয়া উপলক্ষ মাত্র। আসলে হলদিয়া বন্দরকে আদানির হাতে তুলে দিতেই এমন পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। নরেন্দ্র মোদির মেয়াদে নতুন আন্তর্জাতিক মানের বন্দর ও রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র গড়ে ওঠার বদলে লাভজনক বন্দর ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।"
তৃণমূল ও বিজেপির সম্পর্কে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি নিজের ভাইপো ও পরিবারের লোকেদের রক্ষার জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা করেছেন বিজেপি’র সঙ্গে। ওপরে লড়াইয়ের কথা বললেও আসলে সবটাই সমঝোতার উপর টিকে রয়েছে। উত্তরবঙ্গে বিভাজনের খেলা খেলছে এই দুটি দল। রাজবংশী, গ্রেটার কোচবিহারের নামে রাজ্য ভাগের চক্রান্ত চলছে।" তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী এতদিন মমতা ব্যানার্জির ছবি দেওয়া ঝান্ডার তলায় থেকে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে শিল্প কলকারখানা তাড়িয়েছে। তৃণমূলের জামা গায়ে এতদিন তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট চালিয়ে এখন সাধু হওয়ার চেষ্টা করছে।"
সাংবাদিকদের প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘আবাস যোজনায় ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। তৃণমূলের উপপ্রধান প্রধানদের নাম তালিকায় রয়েছে। এত দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করল না কেন তার জবাব বিজেপিকেই দিতে হবে।" লালন শেখ মৃত্যু প্রসঙ্গে সেলিম বলেন সিবিআইয়ের অপদার্থতায় এমন ঘটনা।
সিআইটিইউ'র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, ‘‘এরাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের লক্ষ্য ছিল বন্দরকে কেন্দ্র করে শিল্পতালুক গড়ে উঠবে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল তার উদাহরণ। তৃণমূলের সময়ে হলদিয়া এখন কি অবস্থায় তা উপলব্ধি করছেন হলদিয়াবাসী। বন্দরে ঠিকাদার আগেও ছিল। তখন বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন কোনও নিয়ন্ত্রণ তো নেই বরং পুরো বন্দরকেই ঠিকাদারের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।
সভায় রবীন দেব বলেন, ‘‘কলকাতায় বন্দর হাসপাতালকে বেসরকারিকরণের চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু সিআইটিইউ'র আন্দোলনে সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। ২৭ বছর আগে বন্দর শ্রমিকদের সম্মেলন হয়েছিল এ রাজ্য তথা হলদিয়ায়। তখন সরকার শ্রমিকদের স্বার্থবাহী ছিল। বর্তমান সময়ে মালিকপক্ষের স্বার্থ নিয়ে সরকার শোষণ করছে শ্রমিকদের উপর। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেছিল। তৃণমূল মানুষের সেই অধিকার হরণ করছে।’’ সুভাষ মুখার্জি বলেন, ‘‘হলদিয়ার শ্রমিকরাও জানেন সিআইটিইউ-ই একমাত্র তাঁদের স্বার্থবাহী। ভয় ভীতি, হুমকি, সন্ত্রাসে সামনে আসতে পারছেন না। কিন্তু সমর্থন সিআইটিইউ’র প্রতি আছে।
Comments :0