Pegasus

পেগাসাস দোষী সাব্যস্ত

সম্পাদকীয় বিভাগ

অভিযোগ ওঠার পর পাঁচ বছর ধরে মামলার থেকে সাইবার স্পাইওয়ার মেগাসাস নির্মাতা ইজরায়েলি প্রযুক্তি সংস্থা এনএসও-কে দোষী সাব্যস্ত করেছে আমেরিকার একটি আদালত। ক্যালিফোর্নিয়ার সেই আদালত তাদের রায়ে জানিয়ে দিয়েছে হো‌‌য়াইটঅ্যাপের সার্ভারে বেআইনিভাবে ঢুকে পেগাসাস ১৪০০ গ্রাহকের মোবাইল হ্যাক করে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানের উপর নজরদারি চালিয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে এনএসও’র পক্ষ থেকে যুক্তি প্রমাণ বিস্তর হাজির করা হলেও আদালতে তা গ্রাহ্য হয়নি। আদালতের রায় স্পষ্ট হয়ে গেছে বিভিন্ন দে‍‌শের সরকার এবং সরকারি সংস্থার হয়ে এনএসও ১৪০০ মোবাইলে নজরদারি করেছে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। প্রধানত সরকার বিরোধী সমাজকর্মী, শিক্ষক-অধ্যাপক, আইনজীবী, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের সক্রিয় ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে নজরদারি চালানো হয়। চিহ্নিত এবং আদালতে বিচার্য ১৪০০ ফোন নম্বরের মধ্যে ৩০০টি নম্বর ভারতের। সেই তালিকায় ছিল বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী সহ সরকারের কুনজরে থাকা ব্যক্তিরা। ৩০০ ভারতীয় অর্থাৎ মোদী সরকারের অপছন্দের সন্দেহভাজন ৩০০ ভারতীয়র নাম থাকায় স্বাভাকিভাবেই নিশ্চিত হয়ে যায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার অথবা কোনও সরকারি এজেন্সি এনএসও’র কাছ থেকে পেগাসাস স্পাইওয়ার কিনেছে এবং তার ভিত্তিতে এনএসও ৩০০ জনের উপর নজরদারি চালিয়েছে। সেই সময় এই নিয়ে দেশময় ক্ষোভের ও প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও মোদী সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে গেছে। সরকার জানায় তারা কোনও নজরদারি চালায়নি। অবশ্য পেগাসাস কেনা হয়েছিল কিনা সেই প্রশ্নের স্পষ্ট না বা হ্যাঁ উত্তর দেয়নি। অন্যদিকে ইজরায়েলি সংস্থা জানিয়েছিল তারা পেগাসাস বিক্রি করে কিন্তু নজরদারি করে না। নজরদারি ক্রেতারা করে। অথচ মার্কিন আদালত জানাচ্ছে এনএসও শুধু পেগাসাস বিক্রি করে না, ক্রেতার হয়ে নজরদারিও চালায়। ভারতে এই নজরদারি অভিযোগ ওঠার পর এক গুচ্ছ মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে তাদের দায়িত্ব দেয় বিষয়টি খতিয়ে দেখার। কমিটি তাদের রিপোর্টে জানায় মোবাইল পরীক্ষা করে নজরদারির কোনও প্রমাণ তাদের নজরে পড়েনি। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে তারা জানিয়েছে তাদের তদন্তের কাজে সরকার কোনোরকম সহযোগিতা করেনি। সেই তদন্ত রিপোর্ট আজও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। এখন আমেরিকার আদালত নজরদারি চালানো হয়েছে বলে রায় দেবার পর ভারতের সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান এবং কোর্ট নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তেমনি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে মোদী সরকার কেন সহযোগিতা করেনি সেই প্রশ্নও নতুন করে উঠতে বাধ্য। এই অবস্থায় বিষয়টি নতুন করে সরকারের বিরুদ্ধে ঝড় তোলার ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। নতুন করে তদন্ত করা জরুরি। একে ঘিরে অনেক প্রশ্নের জবাব মোদী সরকার দেয়নি। শুধু অস্বীকার করে দায় সেরেছে। সুপ্রিম কোর্টেও ফের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ ওঠা দরকার। ঠিকঠাক তদন্ত হলে প্রমাণ হয়ে যাবে মোদী সরকার বিরোধীদের দমন করতে, কোণঠাসা করতে তাদের গতিবিধি, কার্যকলাপ ও ভাবনা-চিন্তার ওপর কড়া নজরদারি চালিয়েছিল।

Comments :0

Login to leave a comment