Editorial

ক্ষমতার লোভে বলি মণিপুর

সম্পাদকীয় বিভাগ

আবার হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর। নরেন্দ্র মোদীর অতি স্বাদের ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের ব্যর্থতা মণিপুরে এতোটাই মাত্রাছাড়া হয়ে পড়েছিল যে তাকে হজম করা মোদী-শাহ’র সাধ্যেও কুলায়নি। তাই এক রকম ঘাড় ধাক্কা দিয়েই ভেঙে দিতে হয়েছে বীরেন সিং’র নেতৃত্বাধীন নিজেদেরই দলীয় সরকারকে। বীরেন সিং’র নেতৃত্বে মণিপুরে বিজেপি’র সরকার থাকলেও সেটা ছিল একটা সুবিধাবাদী ধান্দাবাজের সরকার। যার লক্ষ্য উদ্দেশ্য রাজ্যের উন্নয়ন, ‍‌বিভিন্ন অংশের  মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল না, ছিল ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজনকে উসকে দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা।
মণিপুর উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই গোষ্ঠীর মধ্যে আরএসএস’র দীর্ঘকালের কাজের সুবাদে বিজেপি’র খানিকটা প্রভাব আছে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়-জঙ্গলে বসবাসকারী আদিবাসী‍‌ কুকি-জো’র সঙ্গে মেইতেইদের সংঘাত জিইয়ে রেখে এবং মা‍‌ঝেমধ্যে উসকে দিয়ে স্থায়ী অশান্তির জমি তৈরি করে রাখাই ছিল বীরেন সিং সরকারের প্রধান কাজ। বীরেন মেইতেই গোষ্ঠীর লোক। মেইতেইদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী সশস্ত্র  গোষ্ঠী আরাম্বাই টেঙ্গল। আরাম্বাই টেঙ্গলেরই সহযোগী মেইতেই মহিলাদের জঙ্গি সংগঠন মেইরা পাইবির। এই দু’টি সংগঠনের পেছনে রয়েছেন বীরেন সিং। নিজের শক্তি, প্রভাব ও ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য তিনি টেঙ্গল ও পাইবির সদস্যদের হিংসায় উসকানি দেন। তার এমন কুকর্মের  অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে আছে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটে‍‌জে। তিনি আরাম্বাইকে হিংসা ছড়াতে, গোলমাল পাকাতে, অশান্তির আগুন জ্বালাতে নির্দেশ দিয়েছেন।  এমনকি সরকারি অস্ত্রাগার লুট করার কথাও বলেছেন। ভাবা যায় এমন এক ব্যক্তিকেই মোদী-শাহরা বেছে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য। আসলে মণিপুরে বিজে‍‌পি’র সরকার গড়তে হলে বীরেন ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে সম্ভব নয়। অতিরিক্ত মেইতেই প্রেম এবং কুকি বিদ্বেষ নিয়ে সরকার চালাতে গিয়ে তিনি মণিপুরকে ভৌগোলিকভাবে এবং অধিবাসীগতভাবে দ্বিধাবিভক্ত করে দিয়েছেন এবং তাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে হিংস্রতায় নামিয়েছেন। মণিপুরের  সাম্প্রতিক হিংসার আগুনের জন্য দায়ী বীরেন সিং এবং অবশ্যই মোদী-শাহদের ডাবল ইঞ্জিনের উদগ্র কামনা।
শেষ পর্যন্ত হিংসা-অশান্তি এতোটাই লাগামছাড়া হয়ে পড়ে যে দলের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে মোদী-শাহদের ভেঙে দিতে হয় সেই সরকার। কিন্তু ক্ষমতার ‍লোভ এতোটাই প্রবল যে বিধানসভা জিইয়ে রাখে ফের সরকার গড়ার আশায়। বিরোধীদের দাবি মেনে নতুন করে নির্বাচনে সায় দেওয়া হয়নি। কিন্তু মুশকিল হলো হাজার যোগবিয়োগ-গুণভাগ করেও বীরেনকে বাদ দিয়ে সরকার গড়া যাচ্ছে না। অমিত শাহ চেষ্টা করলেও পেছন থেকে কাঠি নেড়ে ভেস্তে দেবার ছক করেন বীরেন।
সর্বশেষ অশান্তি ছড়ায় আরাম্বাই টেঙ্গলের সেনা প্রধান কানন সিংকে সিবিআই গ্রেপ্তারের পর। আগের গুচ্ছ অপরাধের মামলা কাননের বিরুদ্ধে। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে সিবিআই। বস্তুত কানন বীরেন ঘনিষ্ট। কানন গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তুলকালামকাণ্ড শুরু করে তাদের জঙ্গি বাহিনী। অভি‍‌যোগ পেছন থেকে মদত দিচ্ছেন বীরেন। তাই তারা সেনা-পুলিশকে তোয়াক্কা না করে যথেচ্ছ হিংসায় মেতে উঠেছে। অনুমান বীরেনকে বাদ দিয়ে সরকার গড়ার চেষ্টা বরবাদ করতে এটা বীরেনেরই শক্তি প্রদর্শনের খেলা। ক্ষমতার জন্য মণিপুরকে সত্যিই ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়ে‍‌ছে মোদী-শাহরা।

 

Comments :0

Login to leave a comment