বইকথা — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
রাজকীয় রূপকথার অনবদ্য আখ্যান : রাজকাহিনী
সৌরভ দত্ত
শিশু সাহিত্যিক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর রচিত হয়েছিল অমোঘ সাহিত্য। সত্যজিৎ রায় এর প্রচ্ছদ ও ছবি সংযুক্ত সিগনেট প্রেস থেকে ছাপা রাজকাহিনী শৈশবের গল্পকথার এক অনন্য নিদর্শন। সমগ্র গ্রন্থে প্রদর্শিত হয়েছে নয়টি আখ্যান কাহিনি। প্রথম কাহিনী শিলাদিত্যের জন্ম বৃত্তান্ত ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের কথা উঠে এসেছে লেখনীতে।ব্যবহৃত হয়েছে অনুপম ছবি।“বোধ হল যেন শীতের ভয়ে একটি সন্ধ্যাতারা সূর্য মন্দিরে আশ্রয় চায়!ব্রাহ্মণ দেখলেন কন্যাটি সুলক্ষণা,অথচ বিধবার বেশ তিনি জিজ্ঞাসা করলেন –কে তুমি?কি চাও” প্রশ্নও উত্তর এর মার্জিত অক্ষরে লেখা হয়েছে নষ্টালজিক রাজকাহিনী। যেখানে শেষাংশে রয়েছে –“বিধর্মী শত্রু সেনার মন্দির চূর্ণ করে বল্লভীপুরের ছারখার করে চলে গেল।”“গোহ” আখ্যানে বর্ণিত চিত্র –“প্রকাণ্ড বটগাছের মাঝে পাতায় -ঢাকা ছোটখাট পাখির বাসাটি যেমন,গগনস্পর্শী বিন্ধ্যাচলের কোলৈ চন্দ্রাবতীর শ্বেতপাথরের রাজপ্রাসাদ ও তেমনি সুন্দর,তেমনি মনোরম ছিল”। ঘটনার অভ্যন্তরে রয়েছে চন্দ্রাবতী আর গোহকের কথা।“বাপ্পাদিত্য” নামাঙ্কিত রচনাটি বেশ অভিনব। যেখানে –“মহারাজ নাগাদিত্য দলবল নিয়ে ভেরি বাজিয়ে হৈ-হৈ শব্দে পর্বতের শিখরে চড়লেন;বজ্রের মতো ভয়ঙ্কর সেই মেরির আওয়াজ শুনে অন্যদিন মহিষের পাল জল ছেড়ে উঠে পালাত, বনের পাখি বাসা ছেড়ে আকাশে উঠত,”।“পদ্মিনী” নামক রচনায় কথিত আছে–“বাপ্পাদিত্যের সময় সময় মুসলমানেরা ভারতবর্ষে প্রথম পদার্পণ করেন। তারপর থেকে সূর্য বংশের অনেক রাজা অনেকবার চিতোরের সিংহাসনে বসেছেন,”।“সংগ্রামসিংহ” লেখায় অবনীন্দ্রনাথ অনবদ্য –“লড়াই জিতে আসবার পরদিন থেকে কুম্ভ হাতের তলোয়ার তিনবার মাথার উপর ঘুরিয়ে ফার্সি না আরবীতে কি জানি কি সাপের মন্তর না ব্যাঙের মন্তর আউড়ে তবে নিজের সিংহাসনে বসতে লাগলেন।” সমগ্র বইটিই আবর্তিত হয়েছে একটি রাজকাহিনীর সুদীর্ঘ ইতিহাস ও মিথকে আবর্তিত করে । শৈশবের রূপকথার দেশ এর পাশাপাশি অম্লান কৈশোর এর ছোঁয়া রয়েছে গ্রন্থটিতে।
গ্রন্থনাম–রাজকাহিনী
রচয়িতা–অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রকাশক–সিগনেট প্রেস
মূল্য–দু টাকা চার আনা
Comments :0