UGC rules

ইউজিসি’র বিধি মানা যাবে না

সম্পাদকীয় বিভাগ

যুক্তি ও বিজ্ঞান বর্জিত মনগড়া ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের চৌহদ্দির মধ্যে ভারতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনর্নির্মাণ করতে চায় আরএসএস। এই আরএসএস’র মতাদর্শে চালিত বিজেপি সেই লক্ষ্য পূরণে দায়বদ্ধ। বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পর সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে সিলেবাস পরিবর্তন থেকে শুরু করে নানা পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও হিন্দুত্বের আধারে শিক্ষা ব্যবস্থা বদলের ধারাবাহিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে তারা অনেকটা সফলও হয়েছে। কিন্তু দেশজুড়ে শিক্ষার সর্বক্ষেত্রে বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষায় বদল আনা সম্ভব না হলে আরএসএস প্রত্যাশিত আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। সেটা করতে পারে একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার হাতে থাকলে। আগে বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ছ’বছর বিজেপি কেন্দ্রে সরকার চালিয়েছিল। এখন মোদীর নেতৃত্বে তারা ২০১৪ সাল থে‍‌কে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনা করছে। এই সুযোগটা ব্যবহার করেই তারা এখন আঁটঘাট বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার গেরুয়াকরণে। গত দশ বছর ধাপে ধাপে অনেক কিছুই বদলে ফেলা হয়েছে। এবার নেওয়া হয়েছে বড়সড় পদক্ষেপ।
ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে শিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থার অধীনে রাখা আছে। তাই শিক্ষা সংবিধানের যুগ্ম তালিকাভুক্ত। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে অতিকেন্দ্রীকৃত কোনও ব্যবস্থা সংবিধান অনুমোদন করে না। অথচ আরএসএস’র পছন্দ মতো শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে দরকার পুরোপুরি কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব। রাজ্যগুলির যদি কর্তৃত্ব থাকে তাহলে যে রাজ্যে বিরোধীরা সরকার চালাবে সেখানে আরএসএস ফরমুলা প্রয়োগ হবে না। আর বিজেপি’র পক্ষে কোনোদিন কেন্দ্র ও রাজ্যে রাজ্যে শুধুমাত্র বিজেপি সরকার গড়া সম্ভব নয়। তাই কৌশলে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাটাকেই কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বে নিয়ে যাবার চেষ্টা চলছে। আইনের ধারা ও বিধি বদল করে একাজ করা হচ্ছে।
এতকাল রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরিচালনায় রাজ্য সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সুশাসন ছিল। ইউজিসি’র আংশিক কর্তৃত্ব থাকলেও শিক্ষক-উপাচার্য শিক্ষাকর্মী নিয়োগে তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না। এবার  মোদী সরকার সেই ইউজিসি’র মাধ্যমে কেড়ে নিতে নতুন বিধি করেছে। এই বিধি চালু হলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যাবতীয় উচ্চ শিক্ষার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে কেন্দ্রের হাতে। রাজ্যগুলি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ গড়ে তুলবে। রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি করে দেবে কিন্তু সেগুলি পরিচালনায় তাদের কোনও ভূমিকা থাকবে না। কেন্দ্র নিযুক্ত রাজ্যপালরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করবেন। ইতিমধ্যে সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার মাথায় আরএসএস ঘনিষ্ঠ লোকদের বসানো হয়েছে। দেশের বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও আরএসএস’র লোকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এটা কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যাবে না। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার রক্ষা, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে রক্ষা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিচালন ব্যবস্থার স্বার্থেই এই অশুভ প্রয়াস আটকাতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment