Ultra Rightists

অতি দক্ষিণপন্থা

সম্পাদকীয় বিভাগ

ধান্দার ধনতন্ত্র কিভাবে লুটেরার ধনতন্ত্রে রূপান্ত‍‌রিত হয়ে দেশের গোটা অর্থনীতিকেই গ্রাস করতে পারে এযুগে ভারতই তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। পুঁজিবাদী অর্থনীতি যেদিন থেকে নব্য উদারনীতির পথ অনুসরণ করতে শুরু করে সেদিন থেকেই ধান্দার ধনতন্ত্রের জয়যাত্রা শুরু। আর নব্য উদারনীতির মধ্যে শাসক যখন ঘনিষ্ঠ ও পছন্দের কর্পোরেটকে দেশের বস্তুগত ও শ্রমসম্পদ যথেচ্ছ হারে লুট করার অবাধ ছাড়পত্র পায় তখন অতিমাত্রায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে লুটেরা ধনতন্ত্র। গণতন্ত্র যদি শক্তিশালী থাকে মানুষের অধিকার যদি সুরক্ষিত থাকে, দেশে যদি ন্যায় ও আইনের শাসন বলবৎ থাকে তাহলে সম্পদ ও সুযোগের সীমাহীন অসমবণ্টন থাকতে পারে না। এমনকি তথাকথিত বুর্জোয়া গণতন্ত্রও যদি শক্তিশালী থাকে তাহলেও অসম বণ্টনের গতি নিয়ন্ত্রিত হয়। ভারতের বুকে এখন সেই বুর্জোয়া গণতন্ত্রও বিপন্ন। ধর্মান্ধতার উপর ভিত্তি করে অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতি বিজ্ঞান ও যুক্তিবোধকে নাকচ করে ধর্মীয় আবেগ সর্বস্বতায় ডুবিয়ে রাখতে চাইছে মানুষকে। সেই সুযোগে দেশের যাবতীয় সম্পদ জলের দরে বা বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হচ্ছে পছন্দের কর্পোরেটের হাতে। এই প্রক্রিয়ায় গত এক দশকে দেশের বেশিরভাগ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে গুটিকয় কর্পোরেটের হাতে।
বামপন্থী রাজনীতি সর্বদা সম্পদের সমবণ্টনের কথা বলে এবং সমবণ্টনের লক্ষ্যেই কাজ করে। মধ্যপন্থী বুর্জোয়া রাজনীতি সমবণ্টন তথা সম্পদের কেন্দ্রীভবনের পথে চললেও খানিকটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু দক্ষিণপন্থী এবং অতি দক্ষিণপন্থী বুর্জোয়া রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণের কোনও বালাই নেই। তাদের লক্ষ্যই দেশের যাবতীয় সম্পদ অল্প সংখ্যক ধনকুবের তথা কর্পোরেটের হাতে হস্তান্তরিত করা। তাতে রাষ্ট্রের লাগাম চলে যাবে তাদের হাতে। তারাই দেশের রাজনীতি-সমাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। সরকারের রি‍‌পোর্টও থাকবে তাদের হাতে। এই প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পদহীন, অধিকারহীন করে সরকার তথা রাষ্ট্রের দাসে পরিণত করার চেষ্টা হয়।
আরএসএস-বিজেপি’র নামে ভারতে যে রাজনীতি শক্তিশালী হয়েছে সেটা আসলে অতি দক্ষিণপন্থারই রাজনীতি। অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতি সর্বত্র, সব দেশের একই পোশাকে আত্মপ্রকাশ করে না। তবে সর্বত্রই অতি দেশপ্রেম ও উগ্র জাতীয়তাবাদের একটা অভিমুখ থাকে। কোথাও বর্ণবাদ, কোথাও অভিবাসী তার অনুষঙ্গ হয়। উগ্র জাতীয়তাবাদের ঝড় তুলতে হলে একটা বিদেশি শত্রুপক্ষ জরুরি। শত্রু না থাকলেও পায়ে পা দিয়ে বিরোধ তৈরি করে শত্রু তৈরি করা হয়। অতি দক্ষিণপন্থার আর একটি বৈশিষ্ট্য শক্তির আস্ফালন। তাই তার সময় শক্তির উপর বেশি জোর দেয়। দেশের সাধারণ নাগরিকের সাধারণ চাহিদা পূরণের থেকে বেশি গুরুত্ব পায় সময় শক্তিতে বলীয়ান হওয়ায়।
ভারতে বর্তমান শাসক দলের মধ্যে এই সব বৈশিষ্ট্যই পুরোমাত্রায় রয়েছে। যত বিদেশি শক্তির জুজুর ভয় দেখানো যাবে তবেই মানুষকে দেশপ্রেমের জোয়ারে ভাসানো যাবে। মানুষের প্রয়োজনের শিল্পের বদলে সমর শিল্পে জোর দেওয়া যাবে। যুক্তিহীন, অন্ধবিশ্বাস অটুট রাখতে ধর্মকে পুরোমাত্রায় রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে শাসককে দেবতার দূত ভাবানোর চেষ্টা হচ্ছে। অর্থাৎ ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভাজন, ধর্মীয় সংখ্যাগুরুবাদ, দেশপ্রেম, উগ্র জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি মিশেলে এমন এক রাজনৈতিক ইকোসিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে যেখানে দেশের মানুষ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। নেতা, রাষ্ট্র, সরকারের উপর অন্ধ বিশ্বাস তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। যাতে মানুষ সব কিছুকে ভবিতব্য বলে মেনে নেয়। 

Comments :0

Login to leave a comment