Waqf amendment

ভনিতা না দেখিয়ে সংসদে ভোট দিক ওয়াকফ সংশোধনী বিরুদ্ধে: সেলিম

কলকাতা

ছলচাতুরি চলবে না। যারা সংসদের ভিতরে আছেন, তাঁরা ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সেখানে ভোট দিয়ে বিরোধিতা করুন। মোদী সরকারের আনা ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সোমবার অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 
এদিন ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই অবস্থান কর্মসূচিতে সেলিম বলেছেন, ‘‘আমরা সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে মনে করি, ওয়াকফ সংশোধনী বিলের পিছনে মোদী সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। তাই সংসদের ভিতরেও এর বিরোধিতা করছি, রাস্তায় আপনাদের পাশে এসেও বিরোধিতা করছি। কিন্তু যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ৩৭০ ধারা, সিএএ, এনআরসি’র বিরোধিতার ভান করে সংসদে বিরোধিতা করার বদলে চূড়ান্ত সময়ে অনুপস্থিত থাকে, ভোটদানে বিরত থাকে, তাদের চালাকি চলবে না। যারা বিজেপি’র বিরোধিতা দেখায়, তারা ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে নিজের দলের সাংসদদের ভোটদানের জন্য হুইপ দিক।
কেন্দ্রীয় সরকারের আনা ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের উদ্যোগে এদিন ধর্মতলার এই কর্মসূচিতে মহম্মদ সেলিম ছাড়াও আইনজীবী শামিম আহমেদ, তারিকুল আনোয়ার, বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী, পার্সোনাল ল বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মওলানা আবু তালিব রহমানি, সদস্য মওলানা মহম্মদ কামরুজ্জামান, জামাতে ইসলামি হিন্দের রাজ্য সভাপতি ডাঃ মসিহুর রহমান, আহলে হাদিসের সাধারণ সম্পাদক মওলানা মারুফ সালাফি, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মওলানা সামসুদ্দিন সহ বিভিন্ন মুসলিম ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আগামী ১৩ মার্চ দিল্লির যন্তরমন্তরে পার্সোনাল ল বোর্ডের পক্ষ থেকে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনেও রাজ্যের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে সভা থেকে। সভায় নওশাদ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘‘এরাজ্যের বিধানসভায় লোকদেখানো প্রস্তাব আনাটা যথেষ্ট নয়। সংসদে কারা কার্যকরী প্রতিবাদ করছে, সেটাই আসল কথা। রাস্তায় প্রতিবাদ করার জন্য তো মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে নামবেনই।’’ শামিম আহমেদ বলেছেন, ‘‘ওয়াকফ ট্রাইবুনাল ও ওয়াকফ বোর্ডের দায়িত্ব ছিল সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ করা। পশ্চিমবঙ্গে যা ওয়াকফ সম্পত্তি আছে, তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে গরিব মুসলিমদের শিক্ষা ও সামাজিক বিকাশের বিপুল সুযোগ ছিল। তার বদলে নতুন সংশোধনী আইন এনে সরকারের হাতে, কালেক্টরেটের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হচ্ছে।’’ 
মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘শুধু মুসলিমদের নয়, দেশের সব জনগোষ্ঠীর নিজস্বতা ও স্বকীয়তা রক্ষার অধিকার ভারতের সংবিধান দিয়েছে। মোদী সরকারের এই বিল সংবিধানের মৌলিক ধারণার বিরোধী, ১৪ ও ১৫ ধারার সঙ্গে মেলে না। যাঁরা মুসলিম সংখ্যালঘু, তাঁদেরও নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সংগঠন গড়ে তোলার ও পরিচালনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। একইভাবে আইন অনুযায়ী বিভিন্ন মন্দির, গুরুদ্বার ও অন্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনার আইন আছে। কাজেই অজুহাত হিসাবে মোদী সরকার যে অভিন্নতার কথা বলছে, তা আদৌ সত্যি নয়। সংবিধান অভিন্নতা চাপানোর কথা বলেনি, আইনের চোখে সমতার কথা বলছে। ওয়াকফ বিল সংশোধনীর নামে সরকার অভিন্নতা চাপাতে চাইছে। দেবগৌড়া-গুজরাল সরকারের সময়ে ১৯৯৭ সালে সংসদে ওয়াকফ নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠিত হয়েছিল। আমি তার প্রস্তাবক ছিলাম, সিকান্দার বখতকে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। এক দশকের বেশি সময় সেই জেপিসি চলেছিল, রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল। সারা দেশের ওয়াকফ সম্পত্তির হিসাব ও রক্ষণাবেক্ষণে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কী কী করণীয়, তা বলা হয়েছিল। ওয়াকফ সম্পত্তিকে জবরদখল মুক্ত করার জন্য আমরা পশ্চিমবঙ্গে ওয়াকফ ট্রাইবুনাল বানিয়েছিলাম। নির্বাচিত ওয়াকফ বোর্ড বানানো হয়েছিল। এখন ওরা আগের জেপিসি’র রিপোর্ট কার্যকরী না করে আইন বদল করে ওয়াকফ সম্পত্তিতে রিয়েল এস্টেট বানাতে চাইছে, যেভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ বেচে টাকা কামাতে চাইছে। তার জন্য ওয়াকফ নিয়ে মিথ্যা প্রচার করে বলছে, মুসলিমরা জমি দখল করেছে।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘নয়া ফ্যাসিবাদী কায়দায় মোদী সরকার ক্রমাগত ধাপে ধাপে আক্রমণ বাড়াচ্ছে। বাজপেয়ী সরকারের সময় থেকে আমরা ওদের লুকানো অ্যাজেন্ডার কথা বলছি। বাজপেয়ী-আদবানির সময় থেকে আমরা বলছি, মামলা কেবল মসজিদের নয়। ওরা তিলে তিলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে খতম করে সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদ কায়েম করতে চায়। তখন অনেকে বন্ধু ছিল ওদের। এখন চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতীশ কুমারের মতো বন্ধুদের উপরে ভর করে তৃতীয় মোদী সরকার এগতে পারবে না ভেবেছিলেন অনেকে। কিন্তু মিটিং-সিটিং হয়েছে, অনেক সেটিং হয়েছে। আরএসএস’র ঘোষণাই আছে, হিন্দুত্বের প্রকল্পের পথে বাধা মুসলিম, খ্রিস্টান আর কমিউনিস্টরা। আক্রমণ আসলে শুধু এদের উপরে নয়, গোটা দেশের উপরে। ওরা মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানাতে চায়। এই লড়াই আলাদা আলাদাভাবে লড়ে জেতা যাবে না, সব মানুষকে একসঙ্গে হতে হবে। এমন পরিবেশ বানানো হচ্ছে যে দাড়ি-টুপি দেখলেই স্টেশনে, ট্রেনে প্রকাশ্যে বেইজ্জতি করা হচ্ছে। জুনাইদ, একলাকের সঙ্গে অন্য রাজ্যে যা হয়েছিল, আজ তা এরাজ্যে হুগলী, মালদহ, মুর্শিদাবাদের মানুষের সঙ্গে হচ্ছে। রমজান মাস, ঈদ, রামনবমী ঘিরে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এমন পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে, যাতে মানুষ হক ছেড়ে জানমান নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু করে। এর বিরুদ্ধেই ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে।’’
মোদী সরকারের আনা ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সোমবার ধর্মতলায় বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছেন মহম্মদ সেলিম।

Comments :0

Login to leave a comment