ক্লাস পিছু ৩০০ টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অতিথি লেকচারার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়। এই মর্মে ২৪ মার্চ নোটিশও দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। মূলত মঙ্গলবার থেকে বিষয়টি সামনে আসে। এবং ঝড়ের গতিতে এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে রাজ্যের শিক্ষামহল।
ঠিক কী ছিল নির্দেশিকায়?
২৪ মার্চ বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, পদার্থবিদ্যা বিভাগে অস্থায়ী চুক্তির ভিত্তিতে ৪জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এরমধ্যে ২জন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে ন্যানো সায়েন্স বিষয়ের জন্য, ১জনকে নিয়োগ করা হবে ইলেকট্রনিক্স পড়ানোর জন্য। অপর শিক্ষকের জন্য নির্দেশিকায় নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৌরভ দত্তের সই থাকা নোটিশ অনুযায়ী, আবেদনের জন্য ফিজিক্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। একইসঙ্গে নেট পরীক্ষা পাশ করা কিংবা পিএইচডি ডিগ্রি থাকাও আবশ্যক।
নোটিশে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, সপ্তাহে সর্বাধিক ৪টি ক্লাস পড়াতে পারবেন অতিথি শিক্ষকরা। যদিও ক্লাসের সংখ্যা পরবর্তীকালে বৃদ্ধি পেতে পারে।
এই নোটিশ ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। শিক্ষামহলের বক্তব্য, নোটিশ অনুযায়ী একজন অতিথি শিক্ষক সপ্তাহে সর্বাধিক ১২০০ টাকা পারিশ্রমিক পাবেন। মাসিক হিসেবে তা ৪৮০০ টাকা। বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষককে এই পরিমাণ বেতন দেওয়া, তাঁকে অপমান করার সামিল।
এই প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থপ্রতীম বিশ্বাস বলেন, রাজ্য সরকারের ‘নন স্যালারি গ্র্যান্ট’ থেকে অতিথি শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। ফলে এই ধরনের নোটিশ কিংবা নির্দেশিকা থেকে রাজ্য সরকারের শিক্ষানীতি স্পষ্ট হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো উচ্চশিক্ষাতেও স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না। তার পরিবর্তে স্বল্প বেতনে অস্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে। এত স্বল্প পরিমাণ বেতন হওয়ায় শ্রেষ্ঠ মেধা শিক্ষকতায় আসতে চাইছে না। তার ফলে উচ্চশিক্ষার মানের সঙ্গে আপোষ করতে হচ্ছে।
শিক্ষামহলের অভিমত, রাজ্যে শিল্প নেই। পরিষেবা ক্ষেত্রও স্তব্ধ। তারফলে রাজ্যের শিক্ষিত যুবসমাজের কাছে কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান অবলম্বন ছিল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা । কিন্তু বর্তমানে সেটাও সঙ্কুচিত। তারফলে বাধ্য হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছে এরাজ্যের মেধা। তারফলে ‘ব্রেইন ড্রেন’ প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত হচ্ছে প্রতিদিন। এরফলে উন্নয়নের নিরিখে আরও পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ।
Comments :0