MINOR KILLED

মাথা থেঁতলে পড়ুয়াকে খুন আরেক ছাত্রের

জেলা

ভাস্কর দাশগুপ্ত: পুরুলিয়া 
 প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রকে মাথা থেঁতলে খুন করার অভিযোগ উঠলো ক্লাস এইটের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে! যুক্তি দেওয়া হয়েছে, স্কুলের কেউ মারা গেলে ছুটি পাওয়া যায়। তার একটু ছুটির দরকার, পড়াশোনার হাত থেকে রেহাই পেতে। অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও  চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে পুরুলিয়া জেলার মানবাজারে। ৬ বছর বয়সি শিশু প্রথম শ্রেণির ওই ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার হয় গত ২৯ জানুয়ারি। ঘটনার তদন্তে নেমে এক সপ্তাহ পর পুলিশ আটক করে ক্লাস এইটের নাবালক কিশোরকে। সে এই খুনের কথা নিজের মুখে জানিয়েছে বলে পুলিশের বক্তব্য। যদিও মনস্তত্ত্ববিদদের বক্তব্য, নেহাত ছুটি পাওয়ার জন্যই এই খুনের ঘটনা যুক্তিগ্রাহ্য নয়। এর পিছনে, যে শিশুটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার মধ্যে কোনও কারণে অপরাধপ্রবণতা জন্ম নিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।    
পুরুলিয়া জেলার মানবাজার থানা এলাকার ঘাসতোড়িয়া সারদা শিশুমন্দির আবাসিক স্কুলের এই হাড়হিম করা ঘটনা ঘটেছে। স্কুলের কেউ মারা গেলে নাকি ছুটি পাওয়া যায়! আর সেই শুনেই খুদে পড়ুয়াকে খুন করার ইচ্ছা জাগে বলে অভিযোগ উঠল অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। ঘটনার আকস্মিকতায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলাজুড়ে। বেসরকারি ওই আবাসিক স্কুলে নাবালক শিশুকে মাথা থেঁতলে খুনের ঘটনায় তদন্তের পর আটক করা হয়েছে অষ্টম শ্রেণির ওই নাবালক কিশোরকে। 
মৃত শিশুর নাম সুদীপ মাহাত (৬), বাড়ি কেন্দা থানার কেশ্যা গ্রামে। প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। সে ওখানে প্রায় তিন বছর ধরে পড়াশোনা করছিল। আর অষ্টম শ্রেণির যে পড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সে ১০-১২ দিন আগে ওই আবাসিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২৯ জানুয়ারি  বিকেলে হোস্টেল সংলগ্ন মাঠে খেলা করতে গিয়েছিল প্রথম শ্রেণির ওই শিশুটি। পরে হোস্টেল সংলগ্ন পুকুরপাড়ে ওই শিশুর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। সেদিন বিকেলেই ওই শিশুকে প্রথমে মানবাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকেরা ওই শিশুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।  শিশুটির নাক, মুখে ক্ষতচিহ্ন থাকায় সন্দেহ হয় সকলের। 
পরদিন, ৩০ জানুয়ারি, বুধবার, শিশুর দেহের ময়নাতদন্ত হয় পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয় মৃত শিশুর পরিবার। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমে গত সোমবার ওই বিদ্যালয়েরই অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে আটক করেছে। জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার জানিয়েছেন, পুলিশ তদন্ত করার পর অষ্টম শ্রেণির ওই পড়ুয়াকে তারা আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ করে তখনই জানা যায় যে কেউ মারা গেলে ছুটি মেলে—এটি শুনে সে বিদ্যালয়ের ওই শিশুটিকে পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করেছে। অষ্টম শ্রেণির ওই পড়ুয়াকে প্রথমে পুরুলিয়ার শিমুলিয়া আনন্দমঠ জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাছে পেশ করা হয়। সেখান থেকে হুগলির কল্যাণভারতী হোমে পাঠানো হয়েছে তাকে। গোটা ঘটনায় হতভম্ভ দুই পরিবারই। 
মনস্তত্ববিদ অধাপিকা ডাঃ নীলাঞ্জনা সান্যাল এই ঘটনা প্রসঙ্গে এদিন বলেন, নেহাত ছুটি পাওয়ার জন্য ৬ বছরের একটি শিশুকে মাথা থেঁতলে খুন করেছে ১৪ বছরের এক কিশোর— এটি যুক্তিগ্রাহ্য নয়। যদি সত্যিই সে এই কাজ করে থাকে, তাহলে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। এই কিশোরকে যদি তার বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে ভালো করে নজর করা যায়, তাহলে দেখা যাবে কোনও না কোনও পারিপার্শ্বিক কারণে তার মধ্যে একটি অপরাধপ্রবণতার উপসর্গ জন্ম নিয়েছে। দেখা যাবে, নিয়মবিরোধী কাজ বা নিয়মকে ভাঙার একটা তাগিদ তার মধ্যে রয়েছে। সেই জেরে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে পরে ছুটির যুক্তি খাড়া করছে। হতে পারে, এই ছেলেটি নিজে অত্যাচারিত বা কাউকে ক্রমাগত মারধর খেতে দেখেছে এর আগে। সেই থেকে মনের মধ্যে একটা ছাপ পড়ে আছে, ফলে তার মনের মধ্যে সেভাবে আবেগের কোনও জায়গা নেই। নাহলে এইভাবে একটি শিশুকে মেরে ফেলা খুব সহজ ব্যাপার নয়।       

Comments :0

Login to leave a comment