RG KAR HOSPITAL

ধর্ষণ-খুন অন্য কোথাও?

রাজ্য

আর জি করের চারতলার চেস্ট মেডিসিনের সেমিনার রুমই কী আসল ঘটনাস্থল? তদন্তের প্রথম থেকেই তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। এমনকি আর জি করের নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নামা প্রতিবাদীরাও সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন।
এবার কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির রিপোর্ট সামনে আসায় আর জি কর কাণ্ডের তদন্ত নয়া মোড় নিল।
সিএফএসএলের রিপোর্টে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে, চারতলার সেমিনার রুমে সেদিন আর জি করের পড়ুয়া চিকিৎসকের সঙ্গে শারীরিক ধস্তাধস্তির কোন প্রমাণ মেলেনি। শুধু তাই নয়, ভৌগলিক ভাবে সেমিনার রুমের যা অবস্থান তাতে সকলের অগোচরে একজন ব্যক্তি সেখানে ঢুকে একজন পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করল, তাও সম্ভব নয়। কলকাতা পুলিশের তদন্ত এমনকি সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশিটের বয়ানের গুরুত্বপুর্ণ অংশকেও কার্যত খারিজ করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির রিপোর্ট। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতেও তা এসেছে।
আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে যে রাতে গোটা রাজ্যের মানুষ রাস্তায় নেমেছিল, রাত দখল করেছিল, সেই ১৪ আগস্ট দিল্লি থেকে আসা সিএফএসএলের আধিকারিকরা আর জি করের চার তলার সেমিনার রুম পরীক্ষা করেছিলেন। যদিও ততদিনে ক্রাইম স্পট অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। সেমিনার রুম পর্যবেক্ষণ করে, একাধিক প্রমাণ যা মিলেছিল, সেসবই সংগ্রহ করে নিয়ে যান ওই আধিকারিকরা।
তার ভিত্তিতেই তৈরি করা এই রিপোর্ট ইতিমধ্যে সিবিআইকেও দেওয়া হয়েছে। এই রিপোর্ট স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে, সেমিনার রুমে ধস্তাধস্তির কোনও চিহ্ন মেলেনি। শুধুমাত্র কাঠের স্টেজ (পোডিয়াম) যেখানে ম্যাট্রেস পাতা ছিল, সেখানে মাথা এবং তলপেটের নিচের জায়গায় রক্তের দাগ মিলেছে। সেখানে ধর্ষণ বা খুনের ঘটনা ঘটলে যে সব চিহ্ন মেলার কথা বা জিনিসপত্রের ওপরে যে ছাপ থাকার কথা তার কিছুই পাওয়া যায়নি।
এখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাহলে কি হাসপাতালেরই অন্য কোথাও ধর্ষণ, খুন করে মৃতদেহটি এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল! সিএফএসএল রিপোর্টও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। রিপোর্টের বয়ানেই স্পষ্ট, নির্য়াতিতার দেহ কোনও জায়গা থেকে নিয়ে এসে সেমিনার রুমে পোডিয়ামের ম্যাটট্রেসে শোয়ানো হয়। যার ফলে নির্দিষ্ট ওই দুটি জায়গাতেই রক্তের দাগ মিলেছে। 
একই সঙ্গে সিএফএসএল রিপোর্ট বলছে, সেমিনার রুমের যা অবস্থান তাতে একজন ব্যক্তি সেখানে ঢুকলো, তারপর ধর্ষণ-খুন করে বেরিয়ে গেলো অথচ কারো চোখে পড়ল না, এটার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নার্সিং স্টেশনে চব্বিশ ঘন্টা কর্তব্যরত নার্স, চিকিৎসক এবং হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীরা থাকেন। সেটা পেরিয়েই করিডোর দিয়ে আসতে হয় সেমিনার রুমে, সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে যা কোনমতেই সম্ভব নয়।
তাহলে? চার তলার সেমিনার রুম যদি আদৌ ঘটনাস্থল না হয় তবে কোথায় খুন বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটলো? সিবিআই শুধুমাত্র কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিল কেন? উঠছে প্রশ্ন।
অকুস্থল চারতলাই, তা চার্জশিটে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। তাহলে কী যা খালি চোখে দেখা গেছে তার বাইরেও অন্য কোনও দৃশ্য রয়েছে উন্মোচনের অপেক্ষায়! চারতলার সেমিনার রুমে পোডিয়ামে মিলেছিল তরুণী চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন ক্ষতবিক্ষত নিথর দেহ! সেই দৃশ্যই একমাত্র সত্য, তা বলছে না সিএফএসএল রিপোর্ট। তাহলে সত্য কী? 
কোনভাবে কি হাসপাতালের আটতলা এবার এই তদন্তে গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠছে? চারতলার সেমিনার রুমের ঘটনাস্থলের সঙ্গে ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের আটতলা বা অন্য কোনও ফ্লোরের যোগসূত্র রয়েছে? উত্তর দেওয়ার দায় এবার সিবিআইয়েরই।
 

Comments :0

Login to leave a comment