Modi RSS

মোদীর কৃতিত্ব

সম্পাদকীয় বিভাগ

কেন্দ্রের আরএসএস-বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার দায় নেবার জন্য কেউ নেই। তবে যাবতীয় সাফল্যের একমাত্র ভাগীদার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অবশ্য সাফল্যের কৃতিত্ব দাবি করার তাঁর প্রয়োজন হয় না। দলে বা সরকারে সমস্ত সাফল্য তাঁকে অর্পণ করার জন্য সকলে এক পায়ে খাড়া। তা সে সীমান্তে নিরাপত্তার প্রশ্নে হোক বা ইউক্রেনের যুদ্ধ অথবা মূল্যবৃদ্ধির হার সব ক্ষেত্রেই সাফল্যের জন্য অহরহ চলে মোদী বন্দনা। কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার নভেম্বর মাসে কমায় এবং একই সঙ্গে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হারও কমে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কালবিলম্ব না করে করে দিলেন প্রধানমন্ত্রীই এই মূল্যবৃদ্ধি হ্রাসের আসল কারিগর।


সন্দেহ নেই নভেম্বর মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অর্থাৎ ৫.৮৮ শতাংশ হয়েছে। একইভাবে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হারও গত ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অর্থাৎ ৫.৮৫ শতাংশ হয়েছে। বছরের গোড়া থে‍‌কে টানা মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল অতিমাত্রায় চওড়া। যার জেরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে দফায় দফায় সুদের হার বাড়াতে হয়েছে কর্পোরেটের অসন্তোষ সত্ত্বেও। মাসের পর মাস ধরে উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় সাধারণ মানুষের জীবনে সঙ্কট নেমে আসে। অর্থের অভাবে বেশিরভাগ মানুষকে চাহিদা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠলেও কেন্দ্রীয় সরকার সক্রিয় হয়নি। ফলে মানুষকে দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। এখন নভেম্বর মাসে দেখা যাচ্ছে আচমকা মূল্যবৃদ্ধির হার অনেকটা কমে গেছে। মোদী কী এমন জাদুকাঠি নাড়লেন যে সীতারামনের ভাষ্য অনুযায়ী জিনিসের দাম কমে গেল! বস্তুত মোদী ঠিক কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তা খোলসা করেননি অর্থ মন্ত্রী।
মূল্যবৃদ্ধির কমেছে ঠিকই তবে তা আসলে কমেছে আনাজ ও ফলের ক্ষেত্রে। গম, ডাল, দুগ্ধজাত পণ্য, ভোজ্য তেল ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু কমেনি। মনে রাখা দরকার শীতের এই সময় আনাজ ফল বরাবরই কমে। কিন্তু গত বছর কমেনি এই সময়ে বৃষ্টির কারণে। তাই গত বছরের উচ্চ মূল্যের বিচারে এবছর মূল্যবৃদ্ধির হার অঙ্কের নিয়মেই কম দেখাচ্ছে। এতে প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কারও কৃতিত্ব বিন্দুমাত্রও নেই। রাম-শ্যাম-যদু-মধু যে কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকলেও এমনটাই হতো। কার্য‍‌ক্ষেত্রে খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্যেরই মূল্যবৃদ্ধির হার বেশ উচ্চ। যদি সেসব জিনিসের দাম কমাতে পারতেন তাহলে না হয় কৃতিত্ব দাবি করা যেত। মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ জ্বালানির দাম এবং তজ্জনিত পরিবহণ ব্যয়। লক্ষণীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোদীর এই জ্বালানির উপর অতি উচ্চ হারে কর বসিয়ে সমস্তরকমের পণ্য ও পরিষেবার মূল্য বাড়ানোর ব্যবস্থা করে রেখেছেন। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে মানুষ যুজতে পারে তখন, যখন তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের রোজগার বাড়ে। মোদী জমানায় রোজগারের জায়গাটা কার্যত শূন্য। তিনি চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে উলটো পথে হাঁটছেন।


মূল্যবৃদ্ধির বোঝা শেষ বিচারে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপে। কারণ, সাধারণ মানুষই শেষ ক্রেতা। তার আগে ব্যবসায়ী বা পণ্য উৎপাদকরা লোকসান করে পণ্য উৎপাদন করে না বা বিক্রি করে না। তারা তাদের মুনাফা ষোল আনা রেখেই পণ্যের দাম ঠিক করে এবং সাধারণ ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করে। এমন কি বেশি দামের জন্য বিক্রি কমলেও তাদের মুনাফার পরিমাণ কমে না। দাম তারা সেইভাবেই ঠিক করে। গত এক বছরে বিক্রি অনেক কমলেও মুনাফা কিন্তু সেই অর্থে কমেনি। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের পকেট লুট করে কর্পোরেট মুনাফা অক্ষত রাখা হয়েছে। মোদীর আসল কৃতিত্ব এটা।

Comments :0

Login to leave a comment