Rahul Gandhi Parliament

বিদ্যুৎ গতিতে খারিজ রাহুলের সাংসদ পদ

জাতীয়

এ যেন সুরাট-দিল্লি বুলেট ট্রেন। বৃহস্পতিবার রায়, সাজা ঘোষণা। আর শুক্রবারই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেল লোকসভা থেকে। উচ্চতর আদালতে আপিল, রায় পুনর্বিবেচনার সময়— এসব কিছুই নয়। চিত্রনাট্য তৈরিই ছিল। দুরন্ত গতিতে তা কেবল মঞ্চস্থ হওয়ারই ছিল। তা মেনেই এদিন মধ্যাহ্নভোজের পর থেকেই রাহুল গান্ধী আর সংসদে নেই। লন্ডনে তাঁর ভাষণ নিয়ে সাফাই, আদানি কাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন কোনও বক্তব্য, কোনও দাবিই আর তিনি রাখতে পারছেন না লোকসভায় দাঁড়িয়ে। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা থেকে আইনি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই খোলসা করে দিয়েছে একটা সুগভীর ষড়যন্ত্রের দিনলিপি। একদিকে শাসক দলই হল্লা তুলে সংসদের অধিবেশন বানচাল করে দেওয়া, সঙ্গে আড়ালে চলছিল রাহুলের মুখ বন্ধ করার কৌশল। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভির কথায়, প্রায় তামাদি হয়ে যাওয়া এক মানহানির মামলা হঠাৎ একমাস আগে বিচারপতি বদলে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়ে গেল। তারপরই রাহুলকে ঠিক দু’বছর জেল। আইনি বিশেষজ্ঞদের কয়েকজনের কথায়, এ তো লঘু পাপে গুরুদণ্ড। তাঁদের প্রশ্ন, এক মাস, ছয় মাস, এমনকি উনিশ মাস, তেইশ মাসও নয়, একেবারেই মেপে মেপেই কেন দু’বছরেরই জেল হলো রাহুলের। লক্ষ্য, রাহুলকে চোট দিয়ে গোটা বিরোধী শিবিরকেই একটা ধাক্কা দেওয়া।
নতুন ‘বিশ্বগুরুর’ গণতন্ত্রে বিরোধী কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখাটাই যখন চল হয়ে গেছে। রাজনৈতিক মহল, এই পর্বে এমনই প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তারই সঙ্গে স্পষ্ট হতে চলেছে, আদানি কেলেঙ্কারি থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই একেবারে অঙ্ক কষেই রাহুলকে ঘিরে একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্রই করা হয়েছে। ‘আইনগত ও রাজনৈতিক পথে’ এর মোকাবিলার কথা বলে প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস বলেছে, মোদী-যোগে আদানি মহা মেগা কেলেঙ্কারি নিয়ে জেপিসি গঠনের বদলে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদই খারিজ হয়ে গেল। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের এই মন্তব্যের সঙ্গেই মিলে যায় সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের প্রতিক্রিয়া। তাঁর মন্তব্য, লোকসভা থেকে রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজ হলো মূদ্রাস্ফীতি, বেকারি এবং এক ‘শিল্পপতি বন্ধু’ ভারতের অর্থনীতিকে ডুবিয়ে দেওয়ার মতো বিষয়গুলি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দিতে বিজেপি’র কৌশল। আদানি কাণ্ড নিয়ে জেরবার শাসক দল এই অধিবেশনের শুরু দিন থেকে রাহুলের লন্ডন ভাষণ প্রসঙ্গে টেনে বারে বারে সংসদ ভণ্ডুল করে দিয়েছে। আর বিরোধীরা বারে বারেই দাবি তুলেছেন, আদানি কাণ্ডে জেপিসি চাই। যে দাবির পক্ষে রাহুল ছিলেন সামনের সারিতেই। 
শেষ পর্যন্ত মোদীকে কটাক্ষ করার মামলায় বৃহস্পতিবার সুরাটের এক আদালত দোষী সাব্যস্ত করে রাহুলকে ২বছরের কারাবাসের সাজা দেয়। আর আজই কেরালার ওয়েনাড়ের ৫২ বছর বয়সি সাংসদ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদই চলে গেল। গতকাল থেকেই তা কার্যকরও হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, কোনও উচ্চতর আদালত থেকে স্থগিতাদেশ না হওয়া পর্যন্ত আট বছরের জন্য ভোটেও লড়তে পারবেন না রাহুল। কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতিকে রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিশেষ করে সংসদ থেকে দূরে রাখাই বিজেপি’র ছক বলে মনে করছেন কংগ্রেস সহ বিরোধী নেতৃত্ব।
বিজেপি যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকারই করছে। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজকে ‘বৈধ’ বলে দাবি করে সওয়াল করতেও নেমে পড়েছে বিজেপি নেতারা। বিজেপি রাহুল গান্ধী ‘স্বভাবগত অপরাধী’ বলে আখ্যা দিয়েছে। একই সঙ্গে কেউ কেউ হুমকির সুরেই কথা বলতে শুরু করেছেন। শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আথাওয়ালে যেমন বলেছেন, ‘ভারতীয় গণতন্ত্র নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য নিয়ে রাহুল ক্ষমা চেয়ে নিলেই আর ওর সাংসদ পদ চলে যেত না।’ খানিকটা যেন মোদীকে কটাক্ষ নয়, রাহুল দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন মোদী আমলে গণতন্ত্রের বিপন্নতার বিরুদ্ধে সরব হয়ে। আথাওয়ালের কথায়, ‘আমাদের অধ্যক্ষ ওম বিড়লা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা একেবারেই ঠিক। রাহুল গান্ধীকে শাস্তি দেওয়া খুবই দরকার ছিল। আদালতের বিষয়টা আলাদা ব্যাপার’। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য থেকে ষড়যন্ত্র ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মোদীর সবুজ সঙ্কেত ছাড়া ওম বিড়লা যে নিজে এমন সিদ্ধান্ত নেননি, রাজনৈতিক মহলে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। 
কংগ্রেসের দাবি, সত্যি কথার বলারই ‘শাস্তি’ পেলেন রাহুল। সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আজকের দিনটিকে ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের একটা কালো দিন’ বলে মন্তব্য করে জানিয়ে দিয়েছেন, আইনি চৌহদ্দিতে আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি বিজেপি’র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই আরও তীব্র করা হবে।
সাংসদ পদ খারিজের পর মুখ খুলেছেন রাহুল গান্ধীও। শুক্রবার বিকেল ৫টা ২৭ মিনিট নাগাদ এক টুইটে লিখেছেন, ‘‘দেশের কণ্ঠস্বরের জন্য লড়াই করছি। প্রতিটি মূল্য চোকাতে প্রস্তুত।’’ এর কিছু পরেই খাড়গে, সোনিয়া গান্ধী সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠকে বসেন। সেখানে পরে রাহুল নিজেও যোগ দেন বলে খবর। পরে এআইসিসি’র সূত্রে জানানো হয়, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কংগ্রেস দেশজুড়ে জনআন্দোলনে নামছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment