Editorial

রামই একমাত্র সহায়

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন অথবা মন্দিরে স্থাপিত রামমূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে ধর্ম উন্মাদনা ও ধর্ম আবেগকে এমন জায়গায় তুলে দেবার ব্যবস্থা হয়েছে যেন দেশের এবং মানুষের যাবতীয় সমস্যার সমাধান নিহিত আছে এই মন্দিরের মধ্যে। যে মন্দির পুরোপুরি সম্পূর্ণ হতে এখনও অন্তত আরও দু’বছর লাগবে এত তড়িঘড়ি সেই অসম্পূর্ণ মন্দির উদ্বোধনের পেছনে নরেন্দ্র মোদীরা কি এই বার্তাই দিতে চাইছেন মন্দির ছাড়া গতি নেই। দশ বছর দাপটে শাসন করে জি‍‌নিসের দাম কমানো দূরের কথা নিয়ন্ত্রণেও রাখতে পারেননি। মানুষের আয় যদি বাড়ে এবং কর্মহীন বেকাররা যদি কাজ পায় তাহলে নিশ্চিতভাবে মানুষের পারিবারিক আয় বাড়তে পারে। তখন জিনিসের দাম কিঞ্চিৎ বাড়লে সেটা সহনশীলতার মধ্যে থাকে। কিন্তু মোদী মানুষের আয় বাড়াতে পারেননি। ফলে মানুষের ক্রয় সামর্থ্য বাড়েনি। তারা যে পরিমাণ আয় করেন তা দিয়ে আগের পরিমাণ পণ্য-পরিষেবাও কিনতে পারছেন না। কৃষকের আয় যেটুকু বেড়েছে তার থেকে অনেক বে‍শি বেড়েছে চাষের খরচ ও অন্যান্য খরচ। ফলে গ্রামীণ ভারতে বিপন্নতার ছবি ঘরে ঘরে। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় হ্রাস পাবার ফলে ছাত্র-ছাত্রীর পেছনে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে। ফলে শিক্ষার আঙ্গিনা থেকে বিচ্ছিন্ন হবার প্রবণতা বেড়েছে। অর্থনীতির বিকাশের দ্রুতগামিতা নিয়ে‍‌ বিস্তর ঢক্কানিনাদ চলছে। বাস্তবে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ তেমন হচ্ছে না। বেসরকারি বিনিয়োগ তলানিতে ঠেকে যাবার ফলে সরকার বাধ্য হয়েছে বিনিয়োগ বাড়াতে। বাড়তি বিনিয়োগ করতে গিয়ে সরকারি ঋণ বাড়ছে। দেশের শ্রম সামর্থ্য মানুষকে কাজ না দিতে পেরে সরকারি ডোল বিতরণ করে তাদের ভোট কেনার চেষ্টা হচ্ছে। কর্পোরেট ভারত ভালো মুনাফা করছে বলা হলেও তাদের উৎপাদন ক্ষমতা কিন্তু বাড়ছে না। কর্মীখাতে ব্যয় কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে মুনাফা ধরে রাখছে। ফলে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। উলটে পণ্য পরিষেবার বাজার বাড়ছে না। অর্থাৎ অর্থনীতিতে সার্বিকভাবে একটা থমকে যাওয়া অবস্থা।
মোদীরা জানেন তাদের সার্বিক ব্যর্থতার কথা। এটাও জানেন অর্থনীতির মোড় ঘোরানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যদিকে দল চালানো এবং প্রচারের ঝড় তুলে মানুষকে ঘোল খাওয়াতে হলে কর্পোরেট অর্থ দরকার। কর্পোরেটকে সরকারিভাবে সুবিধা না দিলে কর্পোরেট দান মিলবে না। আর কর্পোরেট তোষণ অব্যাহত থাকলে জনগণের দুর্দশা অনিবার্য। উন্নয়নের ক্ষেত্রে, মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্কট নিরসনের ক্ষেত্রে সাফল্য না এলে ভোটে জেতা যায় না। কিন্তু মোদীদের ভোটে জিততে হবে। অতএব চাই চমক-নাটকের মোড়কে প্রচারের জলুস। চাই সত্যকে আড়াল করতে মিথ্যার শামিয়ানা। চাই উগ্র দেশপ্রেমের জোয়ার। চাই ধর্মান্ধতার আবেগে বেহুঁশ হওয়া ভক্ত। ২০১৪ সালে দুর্নীতি দমন, কালো টাকা উদ্ধার, সব বেকারদের হাতে কাজ, উন্নয়নের জোয়ার আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু উন্নয়ন ও অর্থনীতির বদলে তাকে দুর্বল করেছে। বেকারদের চাকরি মেলেনি। কালো টাকা দেশে ফেরেনি, দুর্নীতির অবসান হয়নি। কোন মুখে ২০১৯ সালে ফের ভোট চাইবেন? পুলওয়ামা-বালাকোটের নৈবেদ্য সাজিয়ে ভোটের উগ্রজাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে মানুষের মাথায় টুপি পরিয়ে ফের ক্ষমতায় এলেন। বললেন ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হবে। সব বাড়িতে পানীয় জল, শৌচালয় হবে। সবার জন্য ঘর হবে, সব ঘরে বিদ্যুৎ যাবে। কিছুই হয়নি। ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতি হবে। এবার কীভাবে ভোট আদায় করা যায়? এবার রাম মন্দির। মন্দির আবেগে, ধর্মের উন্মাদনায়, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় মানুষকে এতটাই আসক্ত করে দাও যেন আর কোনও কিছু নিয়ে ভাবতেই না পারে।

Comments :0

Login to leave a comment