কোন পদ্ধতিতে বিলকিস মামলার আসামীদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে? সোমাবার কেন্দ্রীয় এবং গুজরাট সরকারের কাছে এই সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য চেয়ে পাঠাল সুপ্রিম কোর্টের ২ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ।
২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যার সময় বিলকিস বানোকে ধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের ১৪জন সদস্যকে খুনের অভিযোগে ২০০৮ সালে দোষী সাব্যস্ত হন ১১জন। মুম্বইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দেয়। ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট ১১জনকেই মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। মুক্তির সুপারিশ করে কেন্দ্র। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে বিলকিস। সোমবার থেকে বিচারপতি কেএম জোসেফ এবং বিচারপতি বিভি নাগারাথনা’র বিশেষ বেঞ্চে শুরু হয়েছে সেই মামলার শুনানি।
শুনানি চলাকালীন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী ঋষি মালহোত্রা বলেন, তাঁর মক্কেলদের মুক্তি খারিজ করার জন্য আবেগ তাড়িত হয়ে আবেদন করা হয়েছে। এই ধরণের আবেদন আইনী ভাবে বৈধ নয়।
এর জবাবে দুই বিচারপতি জানান, আদালত আবেগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত নেয় না। আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, অত্যন্ত জঘন্য একটি অপরাধ এই ক্ষেত্রে সংগঠিত হয়েছে।
শুনানি চলাকালীন আদালত জানায়, বহুক্ষেত্রে খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন কারাবন্দী রয়েছেন। অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে তাঁদের মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাহলে এই ক্ষেত্রে কোন মাপকাঠিতে মুক্তি মিলল সেই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া উচিত।
বিলকিস বানো ছাড়াও বহু রাজনৈতিক কর্মী এবং সমাজকর্মী ধর্ষকদের মুক্তির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। সেই সমস্ত আবেদনের একযোগে শুনানি চলছে। সিপিআই(এম)’র পলিটব্যুরো সদস্য সুভাষিণী আলি, সাংবাদিক রেবতী লৌল এবং লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রূপরেখা ভার্মার তরফে আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ২০০৮ সালে মুম্বইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত যাবজ্জীবন সাজার রায় দেয়। তাই দোষীদের মুক্তির ক্ষেত্রেও মহারাষ্ট্র সরকারের মতামত নিতে হত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। একইসঙ্গে রায় দেওয়ার সময় আদালত দোষীদের ৩৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল। অনাদায়ে আরও ৩৪ বছর কারাদন্ডের নির্দেশ ছিল। সরকারি নথি থেকে প্রমাণিত, দোষীরা জরিমানা জমা দেয়নি। এবং তারফলে তাঁদের প্রাপ্য ৩৪ বছরের কারাদন্ডও তাঁরা ভোগ করেনি। সেক্ষেত্রে কীভাবে তাঁরা মুক্তি পেলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন গ্রোভার।
একইসঙ্গে গ্রোভার বলেন, ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে সিবিআই এবং মুম্বইয়ের আদালতের তরফে ১৪জনের মুক্তির বিরোধীতা করা হয়। কিন্তু তারপরেও একতরফা সিদ্ধান্তে বিলকিস কান্ডে দোষী প্রমাণিত প্রত্যেকে মুক্তি পেয়েছেন।
যদিও কেন্দ্রের যুক্তি, ১৪ বছর জেলে কাটানোর পরেই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা যায়। বিলকিস কান্ডের অপরাধীরা যেহেতু ইতিমধ্যেই ১৪ বছর জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন, তাই তাঁদের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
Comments :0