‘দিদির দূত’ হয়ে মানুষের কাছে যেতেই প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন তৃণমূলের নেতা বিধায়ক মন্ত্রীরা। কোথাও মন্ত্রীর সামনে অভিযোগকারীকে মেরে থামিয়েছেন তৃণমূলীরা, আবার কোথাও বিক্ষোভের চেহারা দেখে গ্রামে না ঢুকেই ফিরে গিয়েছেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। গ্রামের মানুষ তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের দেখলেই প্রশ্ন তুলছেন, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর ইছাপুর নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের সাইবনা এলাকায় যান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। সেখানে স্থানীয় যুবক সাগর বিশ্বাস তাঁকে বলেন, ভোটের সময় তৃণমূলের পক্ষ থেকে রাস্তা তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পঞ্চায়েত তা করেনি। ওই যুবক একথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর দিকে তেড়ে আসেন এক তৃণমূল কর্মী। মন্ত্রীর সামনেই অভিযোগকারীর গালে সপাটে চড় মারেন। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যান উপস্থিত সাংবাদিক সহ গ্রামবাসীরা। তাঁরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই তৃণমূল কর্মী কার্যত হুমকি দিয়ে বলে ‘তোদের এই সব বলতে এখানে ডেকেছি?’
পূর্ব বর্ধমানের গলসীর জয়কৃষ্ণপুরে এদিন তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুইকে গ্রামেই ঢুকতে দেননি বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। গ্রামের গরিবরা এদিন ক্ষোভ জানাতে গিয়ে বলেছেন, ভোটের সময় ওর ছবি দেখেছিলাম। তারপর আর আমাদের গ্রামে উনি পা দেননি। আবার ভোট এসেছে বলে দিদির দূতরা গ্রামে এসেছে ভোট চাইতে। ওদের আমরা গ্রামে ঢুকতে দেবো না। বিধায়ক তাঁর দলবল নিয়ে গ্রামে ঢোকার মুখে প্রবল প্রতিরোধ ও বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যেও বিবাদ লেগে যায়। পরিস্থিতি ঘোরালো হলে বিধায়ক তখনকার মতো গ্রামে না ঢুকেই চলে যান। তবে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বিকালে তিনি গ্রামে ঢোকেন বলে জানা গেছে।
শনিবার জোরালো ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ অসিত মালও। এদিন সকালে তিনি ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশা গ্রামে পা দিতেই ধেয়ে আসে স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশার অভিযোগ। ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের মাঝে জামাল শেখ রীতিমতো চড়া সুরে তাঁকে বলেন, ‘‘দেখে যান আমাদের হাসপাতালের কী অবস্থা। সামান্য ডেলিভারিও হয় না। ছবি হয় না। হয় সিউড়ি নয় বর্ধমান পাঠিয়ে দেওয়া হয় রোগীকে।’’ শুধু স্বাস্থ্য নয়, আবাস থেকে ভাতা, এলাকার বিধায়কের দেখা না পাওয়া, পদে পদে নানা অভিযোগ শুনতে হয়েছে সাংসদকে।
কুড়ি বছর ধরে তৃণমূল করা এলাকার প্রবীণ নবকুমার দাস চাঁচাছোলা গলায় বলেছেন, ‘‘এলাকার বিধায়কের তো টিকি পাওয়া যায় না। কস্মিনকালে এলেও কাচঢাকা গাড়িতে আসেন, চলেও যান।’’ শুধু ষাটপলশা নয়, এরপর বাসুদেবপুর, তারপর উজপুর গ্রামে গিয়েও মানুষের একই মেজাজের সামনে পড়েন সাংসদ।
একদিন আগেই এই জেলারই মাড়গ্রামে গিয়ে মানুষের এমনই অসন্তোষের সাক্ষী হয়েছিলেন জেলার অপর সাংসদ শতাব্দী রায়। চিত্র সাংবাদিকদের সামনে তিনি গ্রামবাসীদের বাড়িতে খেতে বসার ভান করে ছবি তোলা হয়ে গেলে উঠে গিয়েছিলেন। তাই নিয়েও ক্ষোভ দেখা দেয়।
পটাশপুরের বিধায়ক ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিক মানুষের ক্ষোভ টের পেয়েছিলেন আগেই। এদিন তাই মেদিনীপুরের তারকা বিধায়ক জুন মালিয়াকে সঙ্গে নিয়ে জেলা পরিষদের গাড়িতে করে দিদির দূত কর্মসূচিতে পটাশপুরের দাড়িপাটনা মৌজায় যান। গ্রামে ঢোকার আগেই নদী বাঁধে কয়েকশো মানুষ রাস্তা আটকে তাঁদের বিক্ষোভ দেখান। রাস্তা নেই, সবার ঘরে বিদ্যুৎ নেই, সরকারি পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। জবকার্ড নিয়ে দুর্নীতির নির্দিষ্ট অভিযোগও করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের নাম উল্লেখ করে করে। এলাকার স্কুলগুলিতে তফসিলি জাতি, আদিবাসীদের চালু স্কুলের হস্টেলগুলো বন্ধ।
এসব অভিযোগ করে গ্রামবাসীরা তাঁদের বলেন, আগে এইগুলি চালু করুন, রাস্তা সংস্কার করুন তারপর গ্রামে আসবেন। গ্রামের প্রতিবাদী মানুষের অনড় মনোভাব দেখে দুই বিধায়ক সহ তৃণমূলের নেতারা গ্রামে না ঢুকে পিছু হঠেন। সাংবাদিকদের সামনে এমন ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জুন মালিয়া বলেন, গ্রামের মানুষের ক্ষোভ আছে। এগুলো আগে সমাধান করার প্রয়োজন ছিল। এই কাজ এবার নিশ্চয়ই করা হবে।
Comments :0