উগ্র জাতীয়তাবাদ ও জাত্যাভিমানের শিখরে চড়ে আমেরিকার ৪৭তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারের সময় আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে আক্রমণাত্মক সুরে যেসব কথা বলেছিলেন যেসব আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি বিলিয়েছিলেন এবং যে দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন তার সবটাই বজায় রেখেছেন শপথের আগে ও পরের অনুষ্ঠানগুলিতে। বিশ্বজুড়ে অতি দক্ষিণ পন্থার রাজনীতি যে নতুন ইকোসিস্টেম তৈরির প্রয়াস চালাচ্ছে ট্রাম্প যে সেই সিস্টেমের নাটের গুরু হতে চান সেটা কথাবার্তায় এবং হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অতি দক্ষিণপন্থী তথা নব্য ফ্যাসিবাদী নেতা ও শাসকরা যেমন আমন্ত্রিত হয়ে শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন তেমনি ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ও বহুজাতিক কর্পোরেট কর্তারাও যথারীতি হাজির হয়েছেন। প্রাক শপথ ভাষণে উজার করে দিয়েছেন তাঁর অভিবাসী ঘৃণা। স্পষ্ট করে দিয়েছে বিদেশি তথা অবৈধ অভিবাসীদের তিনি আমেরিকায় থাকতে দেবেন না। নতুন করে আসার সব রাস্তা যেমন বন্ধ করে দেবেন তেমনি ইতিমধ্যে যারা এসে বাস করছেন তাদের সকলকে ধরে ধরে দেশছাড়া করবেন। ঘুরিয়ে এই বার্তা দেবার চেষ্টা করেছেন আমেরিকা শুধু আমেরিকানদের জন্য।
বারবার বলেছেন আমেরিকার গৌরব, আমেরিকার সম্মান, আমেরিকার মর্যাদা, আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে আমেরিকাকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন যাতে সারা পৃথিবী অবাক হয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে দেখবে। এটাও বলেছেন আমেরিকার স্বার্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। প্রাক নির্বাচনী পর্ব থেকেই তিনি বলে আসছেন স্বাধীন সার্বভৌম কানাডার অস্তিত্ব বিলোপ করে তাকে আমেরিকার অংশ করে নেবেন। দখল করবেন গ্রিনল্যান্ডও। অর্থাৎ ঔপনিবেশিক যুগের সাম্রাজ্যবাদের মানসিকতায় ফিরে গিয়ে ট্রাম্প মার্কিন সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য নতুন নতুন দেশ দখলের হুমকি দিচ্ছেন। আধুনিক উন্নত সভ্যতার অবদান গণতান্ত্রিক ভাবনাকে পরিত্যাগ করে ‘জোর যার মুলুক তার’ ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন ট্রাম্প। তাঁর আমেরিকা আগ’ নীতির সার কথা হলো বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী (ঐতিহাসিকভাবে) আমেরিকা হয়ে সেই দায় তারা নেবে না। আমেরিকার অর্থনীতির স্বার্থে তারা কার্বন নিঃসরণের হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে না। মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি বা বন্দোবস্ত অস্বীকার করবে। অর্থাৎ আমেরিকা নিজের স্বার্থে নিজের খেয়াল খুশি মতো চলবে। দুনিয়ার ভালো বা সমগ্র মানব সভ্যতার ভালমন্দ নিয়ে ভাবতে রাজি নয়। একই সঙ্গে আমেরিকার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীর অস্তিত্ব রাখতেও রাজি নয়। তাই দ্রুত শক্তিশালী দেশ হয়ে ওঠা চীনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। চীনকে যে কোনও মূল্যেই হোক দুর্বল করে রাখতে চায় আমেরিকা।
নিজেকে অতিমানবের মতো একনায়ক রূপে হাজির করতে ঘুরিয়ে ভগবানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার সঙ্গে নিজের বেঁচে থাকা এবং রাষ্ট্রপতি হওয়াকে জুড়ে দিয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন ভগবানের ইচ্ছায় তিনি সরেননি। ভগবান তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন আমেরিকার গৌরব ফেরানোর জন্য। অনেকটা এরকম ভাষ্যই শোনা গিয়েছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে। মোদীও বলেছিলেন জৈবিক প্রক্রিয়ায় মাতৃগর্ভে তাঁর জন্ম হয়নি, পরমাত্মা তাঁকে পাঠিয়েছেন ভারতের জন্য বিশেষ কিছু কাজ করার জন্য। কাজ শেষ হলে পরমাত্মাই তাঁকে তুলে নিয়ে যাবে। ট্রাম্প যেমন মার্কিন শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলছেন এবং নিজেকে বিশ্বগুরু জাহির করছেন। উগ্র দক্ষিণ পন্থার চরিত্র এমনটাই হয়ে থাকে।
Editorial
আমেরিকায় ট্রাম্প রাজত্ব শুরু
×
Comments :0