ন’মাসেরও বেশি সময় ধরে মাইনে পাচ্ছেন না। কোভিডেও কর্তব্য পালনে কোনও ত্রুটি রাখেননি। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে গিয়েছেন। উত্তর প্রদেশের সেই স্বাস্থ্যকর্মীরাই এবার গণআত্মহত্যার নির্মম পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান এবং ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মিলিয়ে কমপক্ষে ২৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী আগামী বুধবার একসঙ্গে আত্মহত্যা করতে চলেছেন। যোগী রাজ্যের বাস্তি জেলার এই কর্মীরা বারবার জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের দরজায় ঘুরেছেন। নিজেদের দুরবস্থার কথা জানিয়ে জেলা শাসককে চিঠি দিয়েছেন। মৌখিক আশ্বাস ছাড়া কিছুই জোটেনি তাঁদের। সরাসরি রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মী না হলেও তাঁদের মাইনের দায়িত্ব যোগী সরকারেরই। চুক্তির ভিত্তিতে একটি কোম্পানির অধীনে থেকে কাজ করেন তাঁরা। সেই কোম্পানির ম্যানেজারও জানিয়েছেন, সরকার টাকা না দেওয়ার জন্যই কর্মীদের মাইনে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বাস্তির বিভিন্ন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করেন এই কর্মীরা। তাঁদেরই একজন পেশায় ল্যাব টেকনিশিয়ান বিবেককুমার পান্ডে সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। যদি সোমবারও আমরা মাইনে না পাই, তাহলে বুধবার ২৬জন মিলে আত্মহত্যা করব। জেলা শাসকের কাছে গিয়েছিলাম। এ মাসের ১৫তারিখের মধ্যে সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা-ও হয়নি। ঠিক সময়মতো কর্মীদের মাইনে দেওয়া কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। তাতে কর্মীরা কাজে উৎসাহ পান। আমরা আর কাজ করার পরিস্থিতিতেই নেই’’। মার্চ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মাইনে পাননি এই কর্মীরা। সুরজকুমার পান্ডে নামে আরেকজন বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রয়োজনে আমরা সবসময়ই কাজ করতে রাজি। কিন্তু এতগুলো মাস বিনা মাইনেতে আমরা খিদের জ্বালায় জ্বলছি। কাজ করার অবস্থাতেই নেই।’’
সময়মতো সঠিক বেতনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন উত্তর প্রদেশের চুক্তিভিত্তিক ল্যাব টেকনিশিয়ান এবং ডেটা অপারেটররা। রাগিনি ত্রিপাঠি নামে এক ডেটা অপারেটরের কথায়, ‘‘আমাদের মাস মাইনে ১২ হাজার টাকা পাই। তা-ও সময়ে দেওয়া হয় না। আমরা স্থায়ী পদে চাকরির জন্য নির্বাচিত হলেও নিয়োগ হয়নি। তাহলে আমাদের মাইনে মাসে ৩৫ হাজার পর্যন্ত উঠতে পারত। যেখানে সম্মানই নেই সেখানে কাজ করব কী করে?’’ কর্মীদের বক্তব্য,‘‘গণআত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভাবিইনি। দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের দাবি সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরে নজরে আনার চেষ্টা করতে হচ্ছে। বিজেপি সরকারের উদাসীনতাতেই এই অবস্থা।’’
জেলা শাসককে লেখা চিঠিতে এই কর্মীরা নিজেদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন। বলেছেন, কী পরিমাণ আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। পরিবারেও কোনও সাহায্য করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় তাঁদের পক্ষে কাজ করা দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। তারপরও উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন আন্দোলন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পর ফের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, দু’তিন দিনের মধ্যে সব বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে।
Comments :0