Minakshi Mukherjee

জাত – ধর্ম নয়, লড়াইয়ের শর্ত হবে কাজ, রুটি, রুজি : মীনাক্ষী মুখার্জি

রাজ্য

 প্রতীম দে 

‘‘চোখের সামনে এখনও মইদুলকে দেখতে পাই। চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুলিশ কি ভাবে ওকে পিটিয়ে মেরেছিল। সুদীপ্ত, সইফুদ্দিনের লাশ আমরা কাঁধে করে নিয়ে এসেছি। লাশ কাটা ঘরের গন্ধটা এখনও নাকে লেগে আছে। যারা ওদের মেরেছে তাদের কি ছেড়ে দেওয়া যায়? যদি ছেড়েদি তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের বেইমান বলবে। বেইমান শুনতে লড়াইয়ের ময়দানে নামিনি।’’ ভরা ব্রিগেডের মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্যের সময় একথা বলেন মীনাক্ষী মুখার্জি।

৫০ দিনের ইনসাফ যাত্রার পর, রবিবার ছিল ব্রিগেড সমাবেশ। ‘যৌবনের ডাকে জনগনের ব্রিগেড’। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘যতদিন এই দেশের মানুষের জ্বালা যন্ত্রণা থাকবে ততদিন লড়াই করবে বামপন্থীরা। অতীতে অপশাসন, লুঠ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বামপন্থীরা লড়েছে। ২৯১০ কিলোমিটার হেঁটেছে বামপন্থীরা। কখনও শিক্ষার, দাবিতে কখনও হলদিয়া পেট্রো কেমিক্যাল, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বামপন্থীরা বার বার পথে নেমেছে। ইনসাফের লড়াই ধারাবাহিক। খেলা হবে বলেছিল। সেই মাঠ দখল করতে এসেছি, যেই ময়দানের লড়াইয়ের এজেন্ডা হবে না জাত, ধর্ম। লড়াইয়ের শর্ত হবে কাজ, রুটি, রুজি। সেই সর্ততে মাঠের দখল নেবে মূল এজেন্ডার কারিগররা।’’

নিজের শৈশবের প্রসঙ্গ তুলে মীনাক্ষী বলেন, ‘‘ছোট বেলায় বাবার সাথে ব্রিগেড আগে এসেছি। রাজনীতি করতে গেলে ২৫-৭৫ এর ভাগের কথা কেউ শেখায়নি। জেনেছি মানুষের কাঁধে হাত দিয়ে এগিয়ে যেতে। আমরা কথা দিতে পারি এই লড়াইয়ের ময়দান থেকে এক ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে দেবো না।’’

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলবদল করা প্রতিষ্ঠানিক চেহারা নিয়েছে। ২০২১ সালের নির্বাচনের বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়ে পরে তৃণমূলে গিয়েছে অনেকে। সেই প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারিকে কটাক্ষ করে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘এই ব্রিগেড থেকে বলতে চাই পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতাকে, চ্যালেঞ্জ করছে বিধানসভার স্পিকারের কাছে দল বদল করা বিধায়কদের পদ খারিজ করার আবেদন করুন। হাওয়া টাইট হয়ে যাবে।’’  এরা বিধানসভার ভিতরে বিজেপি বাইরে তৃণমূল।

ব্রিগেডের কিছুটা দুরেই রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা। তাদের সঙ্গে বার বার বিভিন্ন সময় গিয়ে দেখা করেছে ডিওয়াইএফআই নেতৃত্ব। সেই চাকরি প্রার্থীদের কথা তুলে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের অপদার্থতার জন্য টিভির সামনে চুল নামিয়ে দিচ্ছে একজন চাকরি প্রার্থী। এর দ্বায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। ওরা কাজ না পেলে আমাদের বাড়ির ছেলে মেয়ে গুলো কার কাছে পড়তে যাবে?’’ 

তিনি আরও বলেন, ‘‘এই লড়াই টেস্ট ম্যাচ। কিন্তু মাঝে মাঝে সিরাজের মতো খেলোয়াড় নামাতে হয়। যারা তিন দিনে খেলা শেষ করে দিতে পারে। ছাত্র যুবরা সেই মনোভাব নিয়ে নেমেছে।’’ 

তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপিকেও কড়া আক্রমণ করেছেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘দেশ বেচার কাজ যখন হয় তখন আমাদের কাজ দেশ বাঁচানোর। বিজেপি সব বেচে দিচ্ছে। এরা রেল, জঙ্গল, নদী নালা সব বিক্রি করছে। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে কারা জিতেবে? যারা দেশের অর্থনীতি শেষ করছে? নাকি যারা দেশ বাঁচাতে চাইছে তাদের জেতাতে হবে? যারা মানুষের হয়ে কথা বলে সেই বাঘের বাচ্চাদের পাঠাতে হবে লোকসভা, বিধানসভায়।’’ 

ডিওয়াইএফআই নেত্রী যখন এই কথা বলছেন তখন হাততালিতে ফেটে পড়ছে মাঠ। মিডিয়া সেন্টারের দখল নিয়েছে জনতা। একটা সময় স্টেজে যাতে কেউ উঠে না পরে তার জন্য হিমশিম খেতে হয় স্বেচ্ছাসেবকদের।

ব্রিগেডের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে এদিন মীনাক্ষী বলেন, ‘‘মানুষের কাছে হাত বাড়িয়ে দিলাম মাথা উঁচু করে লড়াই করার জন্য আসুন একসাথে লড়াই করি।

লড়াই নীতি আদর্শের দাবিতে। লড়াই সবে শুরু। আমাদের আবেদন, আসুন লড়াইয়ের মাটিকে আমরা সফল করুন।’’

Comments :0

Login to leave a comment