North Benga Junior Doctors

অনশন মঞ্চ থেকে হাসপাতালে চিকিৎসক তনয়া পাঁজা, উত্তরবঙ্গে অনশনে যোগ আরও এক চিকিৎসকের

রাজ্য জেলা

জুনিয়ার চিকিৎসক সন্দীপ মন্ডল।

২১৬ ঘণ্টার লাগাতার অনশনে এদিন দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েন জুনিয়র চিকিৎসক তনয়া পাঁজা। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে তবুও তিনি অনশন মঞ্চ ছাড়তে রাজি হননি। হাসপাতালে ভর্তি অলোক ভার্মা, সোমবার অসুস্থ হয়ে শৌভিক ব্যানার্জি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অনশনে যোগ আরও এক চিকিৎসকের। আরজি কর হাসপাতালে মহিলা পিজিটি চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের বিচার, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করা সহ দশ দফা দাবিতে টানা ১৯২ঘন্টা ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়ার চিকিৎসকদের আমরন অনশন অব্যাহত রয়েছে সোমবারও। দুইজন জুনিয়ার চিকিৎসক উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজের ইন্টার্ন সৌভিক ব্যানার্জি ও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মনঃস্তত্ত্ব বিভাগের পিজিটি প্রথম বর্ষের পড়ুয়া অলোক কুমার ভার্মা বসেন আমরন অনশনে। এদিন আরো একজন জুনিয়ার চিকিৎসক সন্দীপ মন্ডল যোগ দিলেন আমরন অনশনে। সেই সঙ্গে ১২ঘন্টার প্রতীকি অনশনে বসেছেন রামকৃষ্ণ মিশনের চারজন প্রাক্তনী। 
অনশনের দশদিন পূর্ণ হলো সোমবার। টানা অনশনের ইতিমধ্যেই অসুস্থ চার জুনিয়র চিকিৎসক। ধর্মতলার অনশনমঞ্চে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য। 
২১৬ ঘণ্টার লাগাতার অনশনে এদিন দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েন জুনিয়র চিকিৎসক তনয়া পাঁজা। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে তবুও তিনি অনশন মঞ্চ ছাড়তে রাজি হননি। দুপুর থেকেই পেট ব্যাথা ও দুর্বলতার কারণে তিনি মেডিক্যাল টিমের পর্যবেক্ষনে ছিলেন। আন্দোলনকারিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তনয়ার শারিরীক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তার মাথা ঘোরার পাশাপাশি বেশ কিছু শারিরীক সমস্যা দেখা দিয়েছে। রক্তচাপ কমে হয়েছে ৯৮/৭০। তাঁর নাড়ির গতি ৭৮ এবং ক্যাপিলারি ব্লাড গ্লুকোজ় (সিবিজি) ৬৩। চিকিৎসকদের পক্ষ জানানো হয়েছে সিবিজি ৬০-এর নীচে নেমে গেলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কিডনিও বিকল হয়ে যেতে পারে। এদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ সম্পূর্ণভাবে অচৈতন্য হয়ে পড়লে তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সিসিইউতে ভর্তি করার জন্য।
গত ১২ অক্টোবর অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন জুনিয়ার চিকিৎসক অলোক কুমার ভার্মা। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনও তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই রয়েছেন। এবার অসুস্থ হলে পড়লেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের আরও এক অনশনকারী সৌভিক ব্যানার্জি। তাঁকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গেছে এদিন সকাল থেকে তাঁর রক্তচাপ ওঠানামা করছিল। 


ধর্মতলার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়ার চিকিৎসকরা টানা অনশন আন্দোলনে রয়েছেন। অনশন চলাকালীন বিভিন্ন সময় প্রতীকি আন্দোলনে সামিল হয়েছেন সিনিয়ার চিকিৎসক সহ অন্যান্যরা। এদিন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনশনরত জুনিয়ার চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে শিলিগুড়ি ২৭নম্বর ওয়ার্ড নাগরিকবৃন্দের পক্ষ থেকে অনশন মঞ্চে যোগদান করেন নাগরিকেরা। ছিলেন তুফান ভট্টাচার্যা, সুজাতা ব্যানার্জি, বৈশাখী গোস্বামী, স্বপন নাগ, মনামী সান্যাল, রত্না ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকেও আন্দোলনে সম্মতি জানিয়ে প্রতীকি অনশনে বসেছেন প্রতিনিধিরা।
এদিন অনশন আন্দোলনে যোগ দিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের পিজিটি’র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জুনিয়ার চিকিৎসক সন্দীপ মন্ডল বলেন, ‘‘আন্দোলনের আগুন জ্বালিয়ে রাখতে ও আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই আজ থেকে অনশনে যোগ দিয়েছি। অনশন আন্দোলনের অনেকগুলি দিন পার হলেও সরকারের এবিষয়ে কোন হেলদোল নেই। ন্যায় বিচার আমাদের ন্যায্য অধিকার। তা যদি সরকার দিতে না পারে তাহলে কিছু বলার নেই। আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’ 
অন্যদিকে সমস্ত সিনিয়ার চিকিৎসক সোমবার থেকে দুই দিনের কর্মবিরতির পথে পা বাড়িয়েছেন। ফলে সরকারী বেসরকারী হাসপাতালের রোগী ও চিকিৎসা পরিষেবা অনেকটাই বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment