বেআইনী হাইব্রিড মাগুর মাছের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দিল্লির বাসিন্দা এক মাছ ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ বাবদ কমবেশি এক থেকে দেড় কোটি টাকা চাওয়ার অভিযোগে উত্তর ২৪পরগনার শাসন থানা ও স্বরূপনগর থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে সোমবার রাতেই গ্রেপ্তার করে কুখ্যাত সজ্জন আলম ওরফে লালন, জামাল উদ্দিন মণ্ডল ও সামাদ মণ্ডলকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় সজ্জন আলম স্বরূপনগর ব্লকের চারঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর তৃণমূলের যুব আঞ্চলের সভাপতি। সজ্জনের স্ত্রী ফরিদা খাতুন চারঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭৩/এ বুথের তৃণমূলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য। অন্যদিকে সামাদ মণ্ডল চারঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতে বারঘরিয়া তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। জামাল উদ্দিন মণ্ডল বাদুড়িয়ার রাজাপুরের বাসিন্দা। ধৃতদের মঙ্গলবার বারাসত আদালতে তোলা হলে আদালত ধৃতদের পুলিশি হেফাজত দেয়। আগামী ২০ জুন ফের তাদের আদালতে পেশের নির্দেশ দেয়। অপহরণ করে মুক্তিপণের অভিযোগ ওঠায় অসবস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস জেলা নেতৃত্ব। যদিও অপহৃত দিল্লির মাছ ব্যবসায়ী নাজিম চৌহানকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে শাসন থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, দিল্লির বাসিন্দা নাজিম চৌহান ও উত্তর ২৪পরগনার স্বরূপনগরের বাসিন্দা জসিমউদ্দিন মণ্ডল ওরফে রাজু যৌথভাবে বাদুড়িয়া থানা এলাকায় হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষের হ্যাচারি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এক বছর আগে ওই হ্যাচারি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পরে জসিমউদ্দিন দাবি করে নাজিম চৌহানের কাছে সে টাকা পাবে। পাশাপাশি নাজিম জানায়, সে জসিমউদ্দিনের কাছে টাকা পায়। এই নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই তাদের মধ্যে বিবাদ চলছিল। পরবর্তীতে বসিরহাটের বাসিন্দা এক তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতিতে ওই হ্যাচারি বিক্রি নিয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেয় নাজিম এবং জসিমউদ্দিন। হ্যাচারি বিক্রির পর হিসেব নিকেশ করে সমস্যা মেটানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী গত রবিবার দিল্লি থেকে বিমানে দমদম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় নাজিম চৌহান। রবিবার সকালে দিকে নাজিমের পৌঁছনোর আগেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায় জসিমউদ্দিন। সে ক্যাবচালক মিরাজুল গাজিকে নিয়ে অপেক্ষা করে। নাজিম চৌহানকে নিয়ে ক্যাব বসিরহাটের দিকে আসতে থাকে। শাসন থানার সন্ডালিয়ায় শিয়ালদহ হাসনাবাদ শাখার রেললাইন সংলগ্ন রাস্তার ধারে গাড়ি থেকে প্রাতঃকৃত্য সারতে নেমে পড়ে জসিমউদ্দিন। ঠিক তখনই পিছন থেকে আসা একটি গাড়ি থেকে কয়েকজন সেখানে আসে এবং নাজিম চৌহানকে ক্যাব থেকে নামিয়ে তুলে নেয় তাদের গাড়িতে। ওই ব্যবসায়ীর যাতে কোন সন্দেহ না হয়, তারজন্য জসিমউদ্দিনকেও একই গাড়িতে তুলে নেয় ওই যুবকরা। এরপর গাড়ি ছুটতে থাকে বসিরহাটের দিকে। অপহরণ করার পর বসিরহাটের কোন অজ্ঞাত জায়গায় দিল্লির ব্যবসায়ীকে আটকে রাখা হয়। এরপর দিল্লিতে ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছে ১ কোটি টাকার মুক্তিপণের দাবিও করে বলেই অভিযোগ অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরপরই ক্যাবের চালক মিরাজুল গাজি সটান চলে আসেন শাসন থানায়। গোটা ঘটনার বিবরণ জানিয়ে ক্যাব চালক অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজনের বিরুদ্ধে অপহরণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে ওই ব্যবসায়ীর অপহরণরণের মূল চক্রি জসিমউদ্দিন মন্ডল ওরফে রাজু। পুলিশের তদন্তের মোড়কে ঘুরিয়ে দিতে জসিমউদ্দিন নিজেও অপহৃত হওয়ার নাটক সাজিয়েছিল বলে তদন্তে জানতে পারে পুলিশ। পুলিশ এও জানায় অপহরণের কিছু সময় পরে ক্যাব চালককে ফোন করে জসিমউদ্দিন বলে, তোমার চিন্তার কিছু নেই। আমরা ওকে এক জায়গায় আটকে রেখেছি। টাকা পয়সা নিয়ে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া মিটে গেলেই ছেড়ে দেব। এরপরেই ওই মোবাইল নম্বরের লোকেশন ট্র্যাক করে তল্লাশি অভিযান শুরু করে শাসন থানার পুলিশ। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে অপহরণকারীরা দিল্লির ওই ব্যবসায়ীকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে চম্পট দেয়। বসিরহাটের বাসিন্দা নাজিম চৌহানের পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
Fish Trader kidnapped
অপহরণের দায়ে স্বরুপনগরে তৃণমূলের দুই নেতা সহ ধৃত ৩

×
Comments :0