Md Salim

দত্তপুকুরের ঘটনায় মাথাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? প্রশ্ন সেলিমের

রাজ্য

MD Salim

লব মুখার্জি: বারাসত

দত্তপুকুরের মোচপোলে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং দুষ্কৃতীচক্রের মাথাদের শাস্তির দাবিতে সোমবার বিক্ষোভ মিছিল করেছে সিপিআই(এম)। বহু মানুষের এই প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়ে পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, পঞ্চায়েতের ভোটের আগে এগরায় বিস্ফোরণের পরে মুখ্যমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন। এখন ভোট শেষ বলে মোচপলে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্তদের কথাই ভুলে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী? ৯জন প্রাণ হারিয়েছেন, বহু ঘরবাড়ি ভেঙেছে, অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত। এদের সবার ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। আর যারা মমতা ব্যানার্জি আর তাঁর ভাইপো এবং খাদ্য মন্ত্রীর ছবি লাগিয়ে আড়ালে বোমার কারবার করছিল তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে। 
বিস্ফোরণের বীভৎসায় এখনও আতঙ্কিত মোচপোল। শুধুমাত্র বেআইনি বাজি কারখানা নয়, মোচপোলের পাশেই বেরুনাল পুকুরিয়ার পরিত্যক্ত ইট ভাটার ভিতরে মিলেছে বিস্ফোরক তৈরির গবেষণাগার, শক্তিশালী বোমা তৈরির কারখানার হদিস। অথচ আগে থেকে এসব বন্ধ করার জন্য পঞ্চায়েত ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে যারা স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছিলেন, পুলিশ বেছে বেছে তাদেরই ১৮ জনকে ধরেছে, দুষ্কৃতীচক্রের মাথাদের কাউকে ধরছে না। এই কারণে ক্ষিপ্ত সাধারণ বাসিন্দারা। 
তাঁদের নিয়েই সোমবার বারাকপুর-বারাসত রোডের জগন্নাথপুর মোড় থেকে সিপিআই(এম)’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন মহম্মদ সেলিম, সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাশ, রাজ্য কমিটির সদস্য আত্রেয়ী গুহ সহ বাবুল কর, আহমেদ আলি খান, দেবশঙ্কর রায় চৌধুরি, ঝন্টু মজুমদার, সত্যসেবী কর এবং জেলা কমিটির সদস্যরা। জগন্নাথপুর অঞ্চলের সদরপুর, মোচপোল, কাঠুরিয়া দিয়ে মোচপোল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোড় ঘুরে জগন্নাথপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনের মোড়ে এসে মিছিল শেষ হয়। তৃণমূলী দুষ্কৃতী ও দলদাস পুলিশের অবৈধ আঁতাত ধ্বংস করার ডাক দিয়ে মিছিল থেকে দাবি করা হয়, জতুগৃহ বাংলায় মোচপোলের বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িতদের মাথাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের।
মোচপোল বিস্ফোরণের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করে মিছিল শেষে ভাষণ দিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, আইন মেনে বাজি কারখানা চললে তাতে কারো আপত্তি নেই। কিন্তু গ্রাম হলেও মোচপোল ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। সেখানে বাজি বারুদের কারখানা আইনত কখনোই চালানো সম্ভব নয়। পুলিশের সাহায্যে তৃণমূল নেতারা এই কারবার চালায়। পাশাপাশি চলে হেরোইন, গাঁজা ইত্যাদির কারবার। বিস্ফোরণে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পুলিশ প্রশাসন তা আইন মোতাবেক নথিভূক্তও করেনি। ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব তো পালনই করছে না। যারা সতর্ক করে আগে থেকে অভিযোগ পাঠিয়েছিল তাদেরই হেনস্তা করছে। এই বারাসত অঞ্চলে বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছে, মমতা ব্যানার্জির আমলে বোমা কারখানা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দত্তপুকুরে যে আগুন জ্বলেছে সারা বাংলাকে যাতে তা দাবানলের মতো ছারখার করতে না পারে তার জন্য তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ করে লড়তে হবে। মুখ্যমন্ত্রী ভাইপোকে বাঁচাতে ব্যস্ত, উনি দুষ্কৃতীদের ধরবেন না। আর বিজেপি তো তৃণমূলের মদতদাতা শক্তি, মোদীর ইডি সিবিআই তারাও কিছু করবে না। সেই সারদা নারদার সময় থেকে মোদী সরকার তৃণমূলের লুট দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ২০১৪ সালের পর থেকে মমতা ব্যানার্জির মাথার ওপরে সবচেয়ে বড় ছাতার নাম নরেন্দ্র মোদী। 
ধূপগুড়িতে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়কের বিজেপি’তে যোগদানের উল্লেখ করে সেলিম বলেন, তৃণমূল যেরকম লুটপাট অবৈধ কারবারের মুক্তাঞ্চল তৈরির জন্য বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত চেয়েছে, বিজেপি তেমনই দেশ লুন্ঠনের জন্য বিরোধীশূন্য, বৈচিত্রহীন ও বহুমতহীন ভারত বানাতে চায়।
সভায় সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, তদন্ত ঠিকমতো হলেই প্রমাণিত হয়ে যাবে শাসক দলের মদতে পুলিশের প্রশ্রয়ে এখানে বোমার কারবার চলেছে। মানুষকে বিপদে ফেলা হয়েছে। পুলিশ চোখে দেখে না, কানে শোনে না। কাজেই অপরাধীদের শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হলে মানুষকে নিয়ে আন্দোলনই করতে হবে।
পলাশ দাশ বলেছেন, পুলিশ এখন শাসক দলের অপরাধী নেতাদের বাড়িতে তল্লাশি না চালিয়ে আইএসএফ নেতাদের ধরতে নেমেছে। জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে পুলিশের নাকের ডগায় বোমা মাদকের কারবার চললো কী করে! ল্যাবরেটরি বানিয়ে কী চলছিল? পঞ্চায়েতে এবং সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে বিরোধী শূন্য করতে তৃণমূল পুলিশের মদতে এই কারবার চালিয়েছে। 
সভায় সভাপতিত্ব করে মৃণাল চক্রবর্তী বলেছেন, বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে প্রশাসন এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য না করলেও যথাসাধ্য নিয়ে সিপিআই(এম) কর্মীরা আহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। পার্টি নেতা দেবব্রত বসু জানিয়েছেন, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে অপরাধীদের শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে বারাসত ১ নম্বর বিডিও অফিসে অভিযান করা হবে।

 

Comments :0

Login to leave a comment