Purba Bardhaman

১২ দিনে পূর্ব বর্ধমানে ধর্ষণ, খুন ৫ মহিলাকে

রাজ্য

Purba Bardhaman

গত ১২দিনে শুধুমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৫জন মহিলা খুন এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে আদিবাসী, তফসিলি জাতির মহিলারাও আছেন। একের পর এক খুন, ধর্ষণের ঘটনায় পূর্ব বর্ধমান জেলায় মহিলাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সব ক্ষেত্রেই অপরাধীদের পাকড়াও করতে
পুলিশ ও প্রশাসন ব্যর্থ। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ফিরছে এই জেলায় পুলিশ মধ্যযুগীয় শাসন চালাচ্ছে। ধর্ষককে গ্রেপ্তার না করে ধর্ষিতাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। 


সাধারণ মানুষের অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে পুলিশ ধর্ষিতাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। পুলিশ ও শাসকের মদতেই ধর্ষক প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোথাও বাড়ি বিক্রি করে চলে যেতে বলছে নির্যাতিতাকে পুলিশ, কোথাও বা ধর্ষককে আড়াল করতে ধর্ষিতার ছেলেকেই গ্রেপ্তার করে কেস ধামাচাপা দিতে চাইছে। দিনের বেলায় গ্রামে মহিলারা মাঠে গোরু চরাতে যেতেও ভরসা পাচ্ছেন না। মাঠে, জঙ্গল মহলে দুষ্কৃতীরা মহিলাদের একা পেয়ে তাঁদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছে। পুলিশ অপরাধীকে নাকি খুঁজে পাচ্ছে না। যে রাজ্যের পুলিশ শাসকদলের ‘দলদাস’ হয়ে ভোট লুট, ভোট গণনায় কারচুপি করতে পারে, সেই পুলিশ ধর্ষকদের ধরতে পারে না কেন? এই প্রশ্নই এখন গ্রামবাংলায় মুখে মুখে ফিরছে। 
মাত্র ১২দিন আগে গত ৯আগস্ট খুন হন আউশগ্রামের সোময়পুর গ্রামে এক আদিবাসী মহিলা। তিনি বাড়ির জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে খুন হন। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ধর্ষণ করেই খুন করা হয়েছে তাঁকে! এই নিয়ে আউশগ্রাম উত্তাল হয়ে ওঠে। গ্রামের আদিবাসী মহিলারা পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে আউশগ্রাম থানায় বিক্ষোভ দেখান। ঝাঁটা, বঁটি, লাঠি নিয়ে মহিলাদের মেজাজ দেখে পুলিশ লুকিয়ে পড়ে।  


গত ১৩আগস্ট ভাতার থানায় নুরপুর গ্রামে এক মহিলাকে জঙ্গলে একা পেয়ে দু’জন দুষ্কৃতী ধর্ষণ করে। ভাতার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও একজন অপরাধীও গ্রেপ্তার হয়নি। গোটা গ্রামের মানুষ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভে ফুঁসছেন। ধর্ষিতার বাবা অভিযোগ করেন, রবিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাড়ির পাশেই জঙ্গলে গোরু আনতে যায় তাঁর মেয়ে। সেই সময় ওই মহিলাকে একা পেয়ে ২জন দুষ্কৃতী মোটরবাইক নিয়ে জঙ্গলের ভেতর  তাড়া করে ধরে তাঁকে। আক্রান্ত মহিলা চিৎকার করলে তাঁর মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে তারপর প্রচণ্ড মারধর করা হয়। এরপর নগ্ন করে তাঁর উপর পাশবিক অত্যাচার চালায় ওই দু’জন দুষ্কৃতী। ধর্ষণের পর প্রচণ্ড মারধর করে মরে গেছে ভেবে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ধর্ষকরা। এই ঘটনাটি ঘটেছে ভাতার থানার নুরপুর থেকে কাশীপুর যেতে জঙ্গলে যাবার রাস্তার ধারে। ধর্ষিতা মহিলা  চিৎকার করতে শুরু করলে স্থানীয় মানুষ তাঁর কান্নার শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাঁকে সাথে সাথে রক্তাক্ত অবস্থায় গুসকরা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। কেউ গ্রেপ্তার হয়নি আজও। 
মহিলারা শুধু মাঠে, রাস্তায় বাড়িতে নিরাপদ নেই ,কর্মস্থলেও রাইসমিল শ্রমিক নিরাপদ থাকতে পারছেন না। সম্মান নিয়ে কাজও করতে পারছেন না। কাটোয়ার এক রাইসমিলে বছর ২৫’র এক তরুণী এক শিশু নিয়ে কাজ করতেন। তাঁকে গভীর রাতে ধর্ষিতা হতে হলো রাইসমিলের মধ্যেই লেবার কনট্রাক্টরের হাতে। 
গত বৃহস্পতিবার মেমারির কালিবেলে গ্রামে এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হয় বাঁশবাগান থেকে। তাঁর বাড়ি কালনার সুলতানপুরে। তাঁর দুই সন্তান আছে। পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণ করার পরই খুন করা হয়েছে ওই মহিলাকে।  


দেওয়ানদিঘি থানার মির্জাপুরে এক গৃহবধূকে তৃণমূলের এক মাতব্বর ধর্ষণ করে। সেই লুম্পেন তৃণমূল নেত্রী কাকলি তা’র অনুগামী, এমনটাই অভিযোগ এলাকার মানুষের। কাকলি খুবই প্রভাবশালী তৃণমূল নেত্রীই শুধু নয়, বর্ধমান বিডিএ’র চেয়ারপারসনও। লাঞ্ছিতা মহিলা থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেন। এই ধর্ষণের পেছনে কাকলি তা’র মদত আছে এমন অভিযোগও করেছেন তিনি সাংবাদিকদের কাছে। ধর্ষণের অভিযোগ থানা থেকে তুলতে হবে, এই হুমকি দিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ফের ওই মহিলার বাড়িতে চড়াও হয়। ছেলের সামনে তাঁর মা’কে নগ্ন করে বেদম প্রহার করা হয়। মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী মির্জাপুরের মানুষ, মহিলার যৌনাঙ্গে রড ভরে দিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে তৃণমূলীরা। তারপর পুলিশ  খবর পেয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ওই মহিলাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ধর্ষিতা হাসপাতালে ভর্তি, ধর্ষক পুলিশি মদতে জামিনও পেয়ে যায়। তারপর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর অভিযোগ, পুলিশ ও শাসকদল একসাথে পরিকল্পনা করে নির্যাতিতাকে বাড়ি বিক্রি করিয়ে এখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। মির্জাপুরের মানুষের মুখে মুখে ফিরছে, ওই লাঞ্ছিতা, ধর্ষিতা মহিলা কি প্রকৃত বিচার পাবেন?

Comments :0

Login to leave a comment