Yahya Sinwar

এবার হত হামাস-প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার, অনাহারে ভুগছেন গাজার ১৮ লক্ষ মানুষ

আন্তর্জাতিক

  গাজায় ইজরায়েলের সেনা অভিযানে বৃহস্পতিবার হামাসের বর্তমান প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। এদিন এক সাংবাদিক বিবৃতিতে সিনওয়ারের নিহত হওয়ার কথা জানান ইজরায়েলের বিদেশ মন্ত্রী। এদিন গাজায় তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার হলে তার মধ্যে সিনওয়ারের দেহও রয়েছে বলে দাবি করে ইজরায়েলী সেনা। ডিএনএ পরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার রাতে পাকাপাকিভাবে সিনওয়ারকে হত্যা করার খবর জানান ইজরায়েল সরকারের প্রতিনিধিরা। গত জুলাই মাসেই ইজরায়েলের এক বিমান হানায় হামাসের বহু দিনের প্রধান ইসমাইল হানিয়েহ নিহত হন। তার পরেই হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হন সিনওয়ার। এর আগে আগস্ট মাসেই আরেক জন প্যালেস্তিনীয় নেতা এবং গত বছরের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের উপর হামাসের আক্রমণের মূল পরিকল্পনাকারী মহম্মদ দাইফকেও হত্যা করে ইজরায়েল।     
পাশাপাশি উত্তর গাজার এক স্কুলে বৃহস্পতিবার ফের ইজরায়েলী বিমান হানায় পাঁচ জন শিশু সহ মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য ওই স্কুলে একটি ‘বম্ব শেল্টার’ নির্মাণ করা হয়। তবে ইজরায়েলী সেনার দাবি, জাবালিয়ার এই আবু হুসেন স্কুলে হামাস ও ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর বেশ কয়েক জন সদস্য আত্মগোপন করে একটি ‘কমান্ড সেন্টার’ পরিচালনা করছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য করেই এই হানা চালানো হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তর গাজার জাবালিয়া উদ্বাস্তু শিবির চত্বরে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে ইজরায়েলের স্থলসেনা ও বায়ুসেনা। বিমান, কামান ও ক্ষেপণাস্ত্র হানায় ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছেন অনেকে। এদিনের হামলায় যেমন অনেকে নিহত হয়েছেন, তেমন ওই স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বেশ কয়েক জন মহিলা ও শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন উত্তর গাজার জরুরি বিভাগের আধিকারিক ফারেস আবু হামজা। 
এর আগেও গাজা, দক্ষিণ লেবানন ও ইয়েমেনের অসংখ্য স্কুল ও হাসপাতালে হামাস, হেজবোল্লা ও হৌথিদের ‘কমান্ড সেন্টার’ রয়েছে বলে দাবি করে, বেপরোয়া বিমান হানা চালিয়ে শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ সহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে ইজরায়েল। এদিকে জাবালিয়ায় চলতি অভিযানের মধ্যেই সাধারণ শহরবাসীদের জন্য জল ও খাবার সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। গত এক বছর ধরে একই পরিণতির শিকার গাজার কয়েক লক্ষ সাধারণ বাসিন্দা। এমন অবস্থায় অচিরেই শহরে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা। রাষ্ট্রসঙ্ঘের একাধিক সংস্থার তৈরি ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) মাত্রায় ১ থেকে ৫’র সূচকে বর্তমানে গাজার ৮৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৮ লক্ষ মানুষ ক্ষুধার বিভৎসতার নিরিখে ফেজ-৩’এ রয়েছেন। গাজার ৬ শতাংশ বাসিন্দা অর্থাৎ প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ অনাহারের আরও মারাত্মক অবস্থায়, ফেজ-৫’এ রয়েছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এই আইপিসি রিপোর্ট বলছে, কয়েক মাসের মধ্যে শীতকাল আসলে খাবারের আকাল আরও বাড়বে, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে লাগাতার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হানার মধ্যেই সাধারণ শহরবাসীদের খাবার ও পানীয় জল আটকে রেখে হামাসের নেতৃবৃন্দ ও প্যালেস্তাইনের সাধারণ মানুষকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে ইজরায়েল। 
গাজা ও দক্ষিণ লেবাননে ইজরায়েলের চলতি আগ্রাসনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ভোরে ইয়েমেনের বিভিন্ন এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে মার্কিন বায়ুসেনা। হৌথি যোদ্ধাদের পরিচালিত একাধিক মাটির তলার বাঙ্কার লক্ষ্য করেই এই বিমান হানা চালানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ইজরায়েলকে প্রতিনিয়ত অত্যাধুনিক হাতিয়ার ও কোটি কোটি ডলার সরবরাহ করতে থাকলেও এর আগে ইয়েমেনের চলতি গৃহযুদ্ধ সহ হামাস ও হেজবোল্লার সঙ্গে সংঘর্ষে আমেরিকা সরাসরি অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছে। বৃহস্পতিবারের এই আক্রমণ পশ্চিম এশিয়ায় অশান্তি আরও বাড়াবে বলেই  মনে করা হচ্ছে। এই হামলা আদতে ইরানকে বার্তা দিতেই করা হয়েছে বলে দাবি কূটনীতিকদের বড় অংশের।

 

Comments :0

Login to leave a comment