MANIPUR VIOLENCE

যেতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে, মণিপুর থেকে ফিরে দাবি বিরোধীদের

জাতীয়

MANIPUR COMMUNAL VIOLENCE CPIM LEFT FRONT BENGALI NEWS INDIA ALLIANCE CONGRESS BJP DELHI RSS NARENDRA MODI মণিপুরের রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করছেন বিরোধী সাংসদরা।

হিংসা থামাতে এখনই সব অংশকে নিয়ে শুরু করতে হবে শান্তি আলোচনা। মণিপুরে আসা উচিত প্রধানমন্ত্রীর, সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল নিয়ে। মণিপুর থেকে ফিরে এই দাবি তুলেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানিয়েছে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় বিষয়টি বিশদে তোলা হবে। 

রবিবার হিংসা বিধস্ত মণিপুর থেকে ফিরেছেন বিরোধী রাজনৈতিক বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’-র সদস্য বিরোধী সাংসদরা। দফায় দফায় সংবাদমাধ্যমের সামনে সে রাজ্যের পরিস্থিতি এবং মণিপুরের মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন বিরোধীরা। 

৩ মে থেকে মণিপুর গোষ্ঠী সংঘর্ষের আগুনে জ্বলছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শনিবার মণিপুরে যান ইন্ডিয়ার ২১ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল। এই দলে ছিলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্যসভার সাংসদ এএ রহিম। প্রতিনিধিদল চূড়াচাঁদপুর, মৈরাং এবং ইম্ফলের একাধিক ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখে। হিংসা আক্রান্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গেও দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন বিরোধী সাংসদরা। 

এদিন মণিপুর থেকে দিল্লি ফিরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন ‘ইন্ডিয়া’-র প্রতিনিধি দলে থাকা ডিএমকে’র সাংসদ কানিমোঝি করুণানিধি। তিনি জানিয়েছেন, আমরা মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত। সেই কথা আমরা সে রাজ্যের রাজ্যপালকে জানিয়েছি। রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকেইও এই ঘটনা পরম্পরায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অনুরোধ করেছেন, আমরা যেন আমাদের অভিজ্ঞতা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তুলে ধরি। আমরা সেই জন্যই মণিপুর ইস্যুতে সংসদে বিতর্কের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমাদের দাবি, সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল মণিপুরে আসুক। হিংসা থামাতে অবিলম্বে শান্তি আলোচনা চালু করতে হবে। আলোচনা ছাড়া এই সমস্যার কোনও সমাধান নেই। 

‘ইন্ডিয়া’-র প্রতিনিধি দলে থাকা সিপিআই(এম)’র সাংসদ এএ রহিম জানিয়েছেন, মণিপুরে ডাবল ইঞ্জিন সরকার পঙ্গু হয়ে পড়েছে। ত্রাণ শিবিরগুলিতে ত্রাণের ছিঁটেফোটা নেই। মণিপুর জুড়ে হিংসা এবং বিদ্বেষের চাষ করেছিল বিজেপি-আরএসএস। সেই মেরুকরণের ফল গোটা মণিপুরকে ভুগতে হচ্ছে। আর এই কারণেই মণিপুরে যাওয়ার সৎ সাহস দেখাতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। 

মণিপুর থেকে ফিরে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা বারবার মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছি। কিন্তু তাঁর মুখ থেকে এই বিষয়ে একটিও কথা বেরোয়নি। মণিপুরের পরিস্থিতি সামলাতে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লিতে এবং দেশের বাইরে দাঁড়িয়ে অনেক বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবটা হল মণিপুরের মানুষের ওষুধ এবং খাবার কেনার সুযোগটুকু নেই। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা থামানোর কোনও উদ্যোগই সরকারি স্তরে নেওয়া হয়নি। 

প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মণিপুরের পরিস্থিতি দেখে আমরা অত্যন্ত দুঃখিত এবং ক্ষুব্ধ। আমরা রাজ্যপালকে জানিয়েছি, অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের মণিপুরে আসা উচিত। প্রথম দিন থেকেই আমরা এই দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী অদৃশ্য হয়ে গিয়েছেন। আর তাঁর দলের সাংসদ এবং মন্ত্রীরা দিল্লিতে বসে নানা ধরণের মন্তব্য করে চলেছেন। তাঁদের উচিত মণিপুরে গিয়ে বাস্তবটা উপলব্ধি করা। 

প্রতিনিধি দলের অপর সদস্য, তথা আরজেডি’র রাজ্যসভার সাংসদ মনোজ ঝা জানিয়েছেন, আমরা চাই মণিপুরে শান্তি ফিরে আসুক। সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করুন। হিংসা বন্ধ হোক। মণিপুরের অবস্থা ভয়ঙ্কর। মণিপুরে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর বিষয়ে অবিলম্বে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত। 

দিল্লি রওনা হওয়ার আগে, রবিবার সকালে মণিপুরের রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিরোধী বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’-র ২১জন প্রতিনিধি। রাজ্যপালকে একটি স্মারকলিপিও তুলে দেওয়া হয়। সেখানে বিরোধীরা বলেছেন, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্র এবং রাজ্য পুরোপুরি ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতার জন্য মণিপুরে ১৪০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন, ৫০০’র বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন, ৫ হাজারের বেশি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরছাড়া হতে বাধ্য হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। নিয়মিত গুলির লড়াইয়ের খবর মিলছে মণিপুর থেকে।

 

তাঁরা বলেছেন, ত্রাণ শিবিরগুলির অবস্থাও শোচনীয়। পড়ুয়াদের ভবিষ্যত খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। এতকিছুর পরেও প্রধানমন্ত্রী ‘মৌন’ হয়ে রয়েছেন। তাঁর নির্বিকার হাবভাব থেকেই স্পষ্ট, মণিপুরের মানুষের যন্ত্রণা তাঁর কাছ অবধি পৌঁছায় না। এত মানুষের হাহাকারেও তাঁর কিছু যায় আসে না। 

স্মারকলিপিতে বিরোধীরা আরও জানিয়েছেন, গোটা মণিপুর জুড়েই এক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপর সম্প্রদায়ের মনে ক্ষোভ এবং অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এই ক্ষোভের মনোভাবের অবিলম্বে সমাধান প্রয়োজন। বিরোধীরা দাবি জানিয়েছেন, ৮৯ দিন ধরে মণিপুরে আইনের শাসন ভেঙে পড়ে রয়েছে। কেন্দ্রের উচিত অবিলম্বে পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। 

 

Comments :0

Login to leave a comment