প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আবার নিজের ঢাক পিটিয়ে বলেছেন অপারেশন সিঁদুরের সময় মাত্র ২২মিনিটের মধ্যে পাকিস্তান ভারতের পায়ে নতজানু হতে বাধ্য হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে তাঁর মেক ইন ইন্ডিয়া ও আত্মনির্ভর নীতির কারণে। তিনি জোর গলায় বলতে চেয়েছেন ভারতে তৈরি অস্ত্রেই নাকি পাকিস্তানকে ঘায়েল করা হয়েছে। একাজে ঠিক কোন কোন অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে তার উল্লেখ তিনি করেননি। সেগুলি প্রকৃত অর্থে কতটা ভারতের নিজস্ব তার হদিশও দেননি। তেমনি ভারতের আক্রমণে পাকিস্তানের কোথায় কি কতটা ধ্বংস বা ক্ষতি হয়েছে তার বিস্তারিত তালিকা অনবরত প্রচার হলেও পালটা পাকিস্তানের আক্রমণে ভারতের কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা সচেতনভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন। এটা ঠিক যুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সত্য। দুই পক্ষই তাদের সাফল্যকে যথাসম্ভব বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করে আর ব্যর্থতাকে পুরোপুরি আড়াল করে। মোদী বা তার সাঙ্গোপাঙ্গরা কেউ আজ পর্যন্ত পাক আক্রমণে ভারতের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত সত্য প্রকাশ করেননি। কিন্তু বিস্তীর্ণ সীমান্ত জুড়ে ভারতে জনবসতি ও সেনা ঘাঁটিতে পাকিস্তানের হানায় বহু মৃত্যু হয়েছে। আহত-জখমের সংখ্যাও বিরাট। সাধারণ মানুষের অসংখ্য বাড়ি ঘর ধ্বংস হয়েছে। সর্বোপরি পাকিস্তান বার বার জোরালো দাবি করেছে তারা ভারতের অন্তত পাঁচটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানকে ভারতের আকাশেই ধ্বংস করেছে। ভারতের তরফে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা বলা হলেও একবারের জন্যও কেউ এই দাবি স্বীকারও করেনি অস্বীকারও করেনি। অনেক দিন বাদে সিঙ্গাপুরে গিয়ে সেনাকর্তা বিদেশি সংবাদমাধ্যমে বিমান ধ্বংসের কথা স্বীকার করলেও সংখ্যাটা এড়িয়ে গেছেন।
ভারতের দাবি দেশীয় অস্ত্রে নাকি যুদ্ধ হয়েছে। যে বিমানগুলি পাকিস্তান ধ্বংস করেছে সেগুলি কি দেশীয় ছিল? যে ড্রোন ব্যবহার হয়েছে তার কত শতাংশ দেশীয় ছিল? এটা দুনিয়ার সকলেরই জানা ভারত বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারীর অন্যতম। মূলত রাশিয়া, ফ্রান্স, ইজরায়েল এবং আমেরিকার তৈরি অস্ত্র সম্ভারে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সজ্জিত। পাকিস্তানের ছোঁড়া বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝ আকাশে ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে রাশিয়া থেকে কেনা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ এস ৪০০-র জন্য।
মোদী মেক ইন ইন্ডিয়া বা আত্মনির্ভরতার অনেক বুলি আউড়ালেও বাস্তবে এই প্রকল্পে তেমন লগ্নি আসেনি। শিল্প স্থাপনে বা শিল্পে বিনিয়োগে এই প্রকল্প ব্যর্থই বলা যেতে পারে। তাই মোদী জমানায় ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদনের শিল্পের অংশ বাড়েনি উলটে কমে গেছে। তাই মোদী সরকার এই প্রকল্পকে ব্যবহার করার কৌশল নেয় প্রতিরক্ষা উৎপাদনে। ভারতে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পুরোপুরি রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে ছিল। সেনাদের কিছু গাড়ি বেসরকারি সংস্থায় উৎপাদন হতো মাত্র। মোদী ক্ষমতায় এসে প্রতিরক্ষা উৎপাদনে বেসরকারি মালিকানা বাড়াতে বাড়াতে ১০০ শতাংশে নিয়ে গেছেন। এখন দেশীয় বেসরকারি তো বটেই বিদেশিরা যথেচ্ছভাবে প্রতিরক্ষায় মালিকানা নিতে পারে। ভারত যেহেতু যুদ্ধাস্ত্রের অন্যতম বৃহৎ বাজার তাই বিদেশি বৃহৎ অস্ত্র কোম্পানিগুলি ভারতের নবাগত আণবিক সংস্থার হাত ধরে ভারতে অস্ত্র উৎপাদন করে ভারতকেই বিক্রি করছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি তাদের, সিংহভাগ যন্ত্রাংশ আসে তাদের নিজের দেশ থেকে। ভারতে শুধু জোড়া হয়। একেই মোদী দেশীয় অস্ত্র বলে গলা ফাটাচ্ছেন। কিছু কিছু অস্ত্র বিদেশি সংস্থার লাইসেন্স নিয়ে দেশীয় যৌথ সংস্থা তৈরি করে। ভারতে নিজস্ব উদ্ভাবনে ক্ষেপণাস্ত্র যত সফল আর কোনও ক্ষেত্রে তেমন কোনও অগ্রগতি নেই। তার প্রধান কারণ এদেশে গবেষণা ও উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ বাড়ার বদলে কমে যায়। তাই ভারতে তৈরি বিদেশি অস্ত্রকে দেশীয় বলে দুধের সাধ ঘোলে মেটানো হয়। মোদী সেটাই করছেন।
Editorial
ভারতে তৈরি বিদেশি অস্ত্র

×
Comments :0