ছটফটে তমন্নাকে সমাধিস্থ করতে হয়েছে। কালীগঞ্জ বিধানসভার মোলান্দির এই কিশোরী এখন কবরে শুয়ে।
মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। শোকে ভেঙে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। উঠেছে শোককে শপথে বদলানোর স্লোগান। রাজ্যের সর্বত্র চলছে ধিক্কার মিছিল।
সোমবার কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের গণনা চলছিল। তৃণমূল বিধানসভাতেও জয়ী হয় এই কেন্দ্রে, এগিয়ে ছিল উপনির্বাচনেও। তার মধ্যেই বের হয় তৃণমূলের বিজয় মিছিল। মোলান্দীতে সিপিআই(এম) সমর্থকদের বাড়ি লক্ষ্য করে চলে বোমাবাজি। পুকুরে স্নান করতে যাচ্ছিল কিশোরী তমন্না। গ্রামবাসীরা জানিয়ছেন, হত্যা করা হয় তাঁকে।
তমন্নার বাবা ঘটনার দিন কাজের কারণে রাজ্যের বাইরে ছিলেন। এদিন তিনিও স্পষ্ট করেই বলেছেন যে সিপিআই(এম) সমর্থক হওয়ার কারণেই এই হামলা। হামলাবাজদের নামও নির্দিষ্ট করে বলেছেন তিনি। তমন্নার মা সাবিনা ইয়াসমিন শেখও সোমবারই শোকে ভেঙে পড়া অবস্থাতেও একই কথা বলেছিলেন। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল তমন্না।
মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে কৃষ্ণনগর থেকে শববাহী যানে বেলা তিনটে নাগাদ দেবগ্রামে পৌঁছায় দেহ। দেবগ্রামে এদিন দুপুর থেকেই ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানিয়ে ছাত্র যুবদের চলছিল সভা। দেহ সেখানে পৌঁছতে সর্বস্তরের ছাত্র যুব সহ ব্যাপক অংশের স্থানীয় মানুষ তাঁর মরদেহে মালা দেন। দেবগ্রাম চৌরাস্তায় তখন দলমত নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছিলেন। মোলান্দীতে দেহ পৌঁছতেই গণজমায়েতকে সঙ্গে নিয়ে শেষ বিদায় জানান সিপিআই(এম) নেতা অলকেশ দাস রমা বিশ্বাস, এসএম সাদী, দেবাশিস আচার্য প্রমুখ। এসএফআই জেলা সম্পাদক ডি সৌর্যবন্ত চৌধুরী, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চৌধুরী সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃত্ব। সহস্রাধিক মানুষের শোক মিছিল মিরাবাজার পাঁচখাল, শিয়ালখাল সহ একের পর এক গ্রাম যখন পেরোচ্ছে, তখন কার্যত জনসমুদ্রের রূপ নেয়। রাস্তার দুধার থেকে অসংখ্য মহিলাদের কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। শববাহী যান মোলান্দিতে পৌঁছানো মাত্রই গোটা গ্রামের মানুষের কান্নার আওয়াজে বাতাস ভারী হয়ে যায়। মোলান্দি গোরস্থানে তাঁকে কবরস্থ করেন হাজার হাজার মানুষ। কবরে শুয়ে থাকা ছটফটে, মিষ্টি স্বভাবের তামান্নার মরদেহে হাজার হাজার মানুষ মাটি দিয়ে সমাহিত করেন। মাটি সংগ্রহ করে দেবাশিস আচার্য বলেন, এই মাটি সংরক্ষণ করে রাখা হবে ততদিন, শোককে শপথে পরিণত করে যতদিন না খুনিদের ও তাদের মদতদাতাদের একদিকে আদালতে অন্যদিকে মানুষের আদালতের বিচারে বাংলা ছাড়া না করা হবে।
এই মোলান্দি এলাকার ব্যাপক অংশের যুবক ও পুরুষরা কাজের জন্য পাড়ি দিয়েছে ভিন রাজ্যে কেউবা ভিনদেশে। এলাকায় বসেছে পুলিশ পিকেট। এই খুনের ঘটনার অন্যতম হোতা, অভিযুক্ত তৃণমূলের বুথ সভাপতি গাওয়াল শেখ এখনো অধরা। এলাকায় পুলিশ থাকলেও তৃণমূলের প্রকৃত স্বরূপ চিনে নেওয়া স্থানীয় মহিলারা ক্ষোভে ফুঁসলেও চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে।
১০ বছরের শিশু কন্যার হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ২৩ জন আসামীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে সোমবার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হওয়া আদর সেখ,মানোয়ার শেখ, আনোয়ার শেখ ও কালু শেখকে কৃষ্ণনগর আদালতে পেশ করে কালিগঞ্জ থানার পুলিশ। এদের মধ্যে মানোয়ার শেখ এবং কালু শেখকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে চাইলে, কৃষ্ণনগর আদালতের আদালত সিজেএম সঞ্জয় চৌধুরী ছয় দিনের পুলিশে হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি দুজনের চোদ্দ দিনের জেল হেফাজতের আদেশ দেয় আদালত।
সোমবার সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ মীনাক্ষী মুখার্জী, ধ্রুবজ্যোতি সাহা সহ ছাত্র যুব নেতৃত্বদের সঙ্গে এসে কন্যাহারা অসহায় মা সাবিনা ইয়াসমিন শেখ থানায় এফআইআর দায়ের করেন ২৩ জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা সকলেই মোলান্দি এলাকার বাসিন্দা, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী।
Tamanna Kaliganj Killing
ছটফটে তমন্নার নিথর দেহ সমাধিস্থ, ক্ষোভের মিছিল চলছে রাজ্যজুড়ে

×
Comments :0